কারও জন্মদিন পালন হবে আর ‘হ্যাপি বার্থডে’-র সুরে ঘর ভরে উঠবে না, এমনটা আজ আর হয় না। সারা বিশ্ব জুড়েই জন্মদিনের অবিচ্ছেদ্য অঙ্গ হয়ে দাঁড়িয়েছে এই গান। এমনকি কেউ ইংরেজি ভাষাটা প্রায় না জানলেও সিনেমা-সিরিয়ালের দৌলতে এই গান তার চেনা। কিন্তু কোথা থেকে এল এই গান? আসুন, শুনে নেওয়া যাক।
জন্মদিন যে বিশেষ ভাবে উদযাপন করার মতো তাৎপর্য বয়ে আনে, শ-দেড়েক বছর আগেও এমনটা মনে করতেন না অনেকেই। এমনকি যে সাহেবের দেশ আমাদের থেকে অনেক আগে আগেই ব্যক্তিমানুষকে গুরুত্ব দিতে শুরু করেছে, তারাও নয়। নামকরা মানুষদের জন্মদিনের কথা অবশ্য আলাদা। আমেরিকায় যেমন দেশের স্বাধীনতার জনক জর্জ ওয়াশিংটনের জন্মদিন পালন করা হত। এমনিতে প্রাচীন মিশরে ফারাওদের জন্মদিন পালনের একটা প্রথা ছিল, অন্যান্য বড় সভ্যতার ক্ষেত্রেও শাসকদের জন্মদিনে ধুমধাম চলত দেশ জুড়ে। রাজারাজড়াদের প্রথার প্রভাব পড়েছিল সমাজের উচ্চ শ্রেণি, অভিজাত এবং ধনী কিছু মানুষের মধ্যেও। কিন্তু আমজনতার কাছে জন্মদিনটাও ছিল আর পাঁচটা সাধারণ দিনের মতোই। বলাই বাহুল্য, যদি জন্মদিন পালনের চলই না থাকে, তাহলে জন্মদিনের গান আসবে কোথা থেকে! ‘হ্যাপি বার্থডে’ গানের বয়সও তাই বেশি নয়, সবেমাত্র একশো বছর পেরিয়েছে। তার চেয়েও বড় কথা, আসলে জন্মদিনে গাওয়া হবে বলে এই গান তৈরিই হয়নি। তাহলে? খুলেই বলা যাক।
আরও শুনুন: কেবল শান্তির দূত নয়, বিশ্বযুদ্ধে গুপ্তচরের কাজও করেছিল পায়রা
১৮৯৩ সালে কিন্ডারগার্টেনের জন্য প্রকাশিত গান গল্পের একটি বইয়ে ছিল ‘গুড মর্নিং টু ইউ’ বলে একটি গান। গানটির কথাগুলি ছিল এরকম: ‘গুড মর্নিং টু ইউ, গুড মর্নিং টু ইউ, গুড মর্নিং ডিয়ার চিলড্রেন, গুড মর্নিং টু অল।’ ভাবা হয়েছিল, এই গানটি গেয়ে পড়ুয়াদের সুপ্রভাত জানাবেন শিক্ষকেরা। গানটি তৈরি করেছিলেন মিলড্রেড জে হিল, যিনি নিজেও পেশায় একজন স্কুলশিক্ষিকা ছিলেন। তাঁর বোন প্যাটি স্মিথ হিল পড়াতেন নার্সারি এবং কিন্ডারগার্টেন স্কুলে। প্যাটি-ই এই গানের কথাগুলি বদলে দিয়েছিলেন ‘হ্যাপি বার্থডে টু ইউ’-তে। আর তারপরেই ক্রমশ বিপুল জনপ্রিয়তা অর্জন করে এই গান। এতটাই, যে, ১৯৯৮ সালের ‘গিনেস বুক অব ওয়ার্ল্ড রেকর্ডস’ অনুযায়ী, ইংরেজি ভাষায় সব চেয়ে পরিচিত গান ‘হ্যাপি বার্থডে টু ইউ’। প্রেসিডেন্ট কেনেডির জন্মদিনে মেরিলিন মনরো এই গানটিই গেয়েছিলেন, ‘হ্যাপি বার্থডে, মিস্টার প্রেসিডেন্ট’ বলে।
আরও শুনুন: এশিয়ার প্রথম মুদ্রিত সংবাদপত্রের জন্মস্থান এই কলকাতাই
যে কেউ যে কোনও জায়গায় এখন এই গান গাইতে পারে বটে, কিন্তু এককালে রীতিমতো কপিরাইটে বেঁধে ফেলা হয়েছিল এই গানটিকে। ১৯৮৮ সালে এই গানটির স্বত্ব কিনেছিল ওয়ার্নার মিউজিক। নাটক বা সিনেমায় গানটির ব্যবহারে নিষেধা়জ্ঞা চাপিয়ে, এবং ক্ষেত্র বিশেষে, মোটা অঙ্কের মূল্যের বিনিময়ে গানটি ব্যবহার করতে দিয়ে বার্ষিক অন্তত দুই মিলিয়ন ডলার লাভ করত তারা। কিন্তু ২০১৩ সালে তাদের বিরুদ্ধে মামলা করে বসেন পরিচালক জেনিফার নেলসন। এই গানের একটি অংশ সিনেমায় রাখার জন্য তাঁর কাছ থেকে ১৫০০ ডলার দাবি করেছিল ওই সংস্থা। মামলার রায়ে হেরে যায় ওয়ার্নার মিউজিক। জানা যায়, গানটির কথার ওপর কোনও সংস্থার কোনোরকম স্বত্ব নেই। তাই এতদিন পর, অবশেষে মুক্তি পেয়েছে ‘হ্যাপি বার্থডে’।