রিভেঞ্জ বা প্রতিশোধ নিচ্ছেন কর্মীরা। তাও আবার সেই সংস্থার উপর, যেখানে তাঁরা চাকরি করেন। শুনতে অবাক লাগলেও সত্যি। আর এমনটাই নাকি নতুন ট্রেন্ড! ঠিক কীভাবে প্রতিশোধ নিচ্ছেন তাঁরা? আসুন শুনে নেওয়া যাক।
সপ্তাহে ৭০ ঘণ্টা কাজের নিদান দিয়েছিলেন ইনফোসিস কর্তা। সম্প্রতি ৯০ ঘণ্টা কাজের কথা বলে সেই বিতর্ক ফিরিয়েছেন এল অ্যান্ড টি কর্তা। বাস্তবে এতক্ষণ কাজের নিয়ম সেই অর্থে কোথাও চালু হয়নি। তবে কাজের চাপ বেড়েছে, এতটাই বেড়েছে, যে প্রতিশোধ নেওয়ার কথা ভাবছেন সংস্থার কর্মীরা।
এমনিতে প্রতিশোধ বললেই যা মনে আসে এক্ষেত্রে ঠিক তেমনটা হয়নি। অর্থাৎ কেউ কাউকে আঘাত করেনি। অন্য কোনও ক্ষতির কথাও ভাবেনি। বরং ক্ষতি যদি হয়েই থাকে তাহলে পরোক্ষ ভাবে যিনি প্রতিশোধ নিয়েছেন, তাঁর। শুনতে অবাক লাগলেও সত্যি। এক্ষেত্রে প্রতিশোধের ধরণটাই এমন। ঠিক কেমন?
তাহলে খুলেই বলা যাক! আসলে, সংস্থার উপর প্রতিশোধ নিতে চাকরি ছাড়ছেন কর্মীরা। একেবারে বিনা নোটিশে। কোনও একজন নয়, একসঙ্গে অনেকে চাকরি ছাড়ার দলে নাম লেখাচ্ছেন। বলা যেতে পারে, এমনটাই নতুন ট্রেন্ড। যার নাম দেওয়া হয়েছে, ‘রিভেঞ্জ কুইটিং’। প্রাথমিক ভাবে মনে হতে পারে চাকরি ছাড়া মানে তো ওই কর্মীর লোকসান! মাসের শেষে বেতন মিলবে না, আর্থিক নিরাপত্তা প্রশ্নের মুখে পড়বে, সবমিলিয়ে সমস্যাই সমস্যা! কিন্তু না, এক্ষেত্রে স্রেফ একদিকের সমস্যা নয়। কারণ যারা চাকরি ছাড়ছেন, তাঁরা পরিকল্পনা করেই সিদ্ধান্ত নিচ্ছেন। অনেক সময় অন্য জায়গায় চাকরি নিশ্চিত করেই পদক্ষেপ করছেন। তাই সমস্যায় পড়ছে ওই সংস্থা। একজন চাকরি ছাড়লে না হয় অন্য কাউকে দিয়ে বাড়তি কাজ করানো গেল, কিন্তু একসঙ্গে ১০-১২ জনের শূণ্যস্থান কীভাবে পূরণ হবে! তাই মাথায় হাত পড়ছে কর্তৃপক্ষের। এদিকে, কোনওভাবে ওই ছেড়ে যাওয়া কর্মীদের আটকানোও সম্ভব হচ্ছে না। কারণ রীতিমতো বিরক্ত হয়ে এঁরা কাজ ছেড়েছেন। তাই হাজার কাকতি মিনতি করলেও, ফিরবে না কেউ। এখন প্রশ্ন হচ্ছে কীসের এত বিরক্তি?
প্রথমেই যে কারণ, তা হল অতিরিক্ত কাজের চাপ। যে কাজ এতদিন ৫ জন মিলে করত, হঠাৎ সেখান থেকে ৩ জনকে ছাঁটাই করে দেওয়া হল। আর সম্পূর্ণ কাজের দায় এসে চাপল বাকি দুজনের কাঁধে। নাওয়া খাওয়া ভুলে কাজ করতে হচ্ছে। অনেক সময় ছুটি অবধি মিলছে না। বেতন বাড়লে তাও কথা ছিল, কিন্তু না, সেদিকে কোনও ভ্রূক্ষেপ নেই সংস্থার। স্রেফ কাজের বোঝা চাপিয়ে দিয়েই কর্তৃপক্ষ খালাস। ভুল হলেই জুটছে অপমান। সময় বেশি লাগলেও বিপদ, কখন যে ঘাড় ধরে বের করে দেবে সংস্থা তার ঠিক নেই। তাই এমন পরিস্থিতি তৈরি হতে দিচ্ছেন না কেউ কেউ। নয়া ট্রেন্ডে গা ভাসিয়ে নিশ্চিন্তে চাকর ছাড়ছেন। সবাই যে অন্যত্র চাকরীতে যোগ দিচ্ছেন তাও না, বরং জমিয়ে রাখা টাকা কিংবা অন্য কোনও পছন্দের কাজ করে বাকি জীবনটা কাটিয়ে দিতে চাইছেন। বর্তমান সময়ে এও এক নতুন ট্রেন্ডই বটে! একটা বয়স অবধি টাকা জমিয়ে, সময়ের আগেই অবসর নিতে চাইছেন অনেকে। সেক্ষেত্রে রিভেঞ্জ কুইটিং নতুন মাত্রা যোগ করছে বলা যায়। সরাসরি সংস্থার শোষণ বন্ধের উপায় নেই, তাই এইভাবে প্রতিশোধ নিতেই পছন্দ করছেন অনেকে।