দীপান্বিতা অমাবস্যায় নয়। এই মন্দিরে কালীপুজো হয় ঠিক তার আগের রাতে। পুজোর নিয়মেও একাধিক অভিনবত্ব ধরা পড়ে। কালীর সামনে উচ্চারিত হয় ভারত মাতার জয়গান। কোথায় রয়েছে এই মন্দির? আসুন শুনে নেওয়া যাক।
কালীর বেদীতে লেখা, বন্দেমাতরম। পুজোর পর ভারত মাতার নামে জয়ধ্বনিও দেওয়া হয়। ঘটা করে কালী পুজো হয় ভূতচতুর্দশীর রাতে। আসলে এমনটাই নিয়ম ভবানী পাঠকের কালী মন্দিরে। প্রাচীনত্বের নিরিখে বাংলার অনেক প্রসিদ্ধ মন্দিরকে টেক্কা দিতে পারে এই মন্দির। যার ইতিহাসে জড়িয়ে স্বাধীনতার কাহিনি।
বাংলার বিপ্লবীরা কালী ভক্ত ছিলেন। বিভিন্ন লেখায় সে প্রমাণ মেলে। তাঁরা কালীপুজো করবেন এতে অবাক হওয়ার কিছু নেই। প্রকাশ্যে সুযোগ না পেলেও, গোপনে কালী আরাধনা চলত রমরমিয়ে। সেই নিদর্শন এখনও বয়ে চলেছে বাংলার কিছু মন্দির। তালিকায় ভবানী পাঠকের কালী মন্দির উপরের দিকেই থাকবে। দুর্গাপুরের সিটি সেন্টার এলাকায় মন্দিরটি অবস্থিত। চারদিকে গাছপালা ঘেরা সুন্দর এক আশ্রমের মাঝে রয়েছে কালীর মূল মন্দির। চত্বরে আরও অনেক মন্দির রয়েছে। বঙ্কিমচন্দ্রের দেবী চৌধুরানী উপন্যাসে যে সন্ন্যাসী ডাকাতের উল্লেখ মেলে, সেই ভবানী পাঠকই এই মন্দির গড়েছিলেন। এমনটাই স্থানীয় বিশ্বাস। মন্দির চত্বরে যে ফলক রয়েছে তাতেও দেবী চৌধুরানীর নাম লেখা আছে। তবে সেই সময় এই অঞ্চল এমন সুন্দর পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন ছিল না। ঘন জঙ্গলে ঘেরা এলাকায় নিভৃতে চলত কালী আরাধনা। তাই স্বাধীনতা সংগ্রামীরাও এখানে নিশ্চিন্তে যাতায়াত করতেন। মায়ের পুজোয় সেই ছাপ ধরা পড়ত। গর্ভগৃহে এখনও লেখা আছে বন্দে মাতরম মন্ত্র। মন্দিরের ফলকে ভারত মাতার জয়ধ্বনি চোখে পড়ে। পুজোর মন্ত্রেও সেই ছাপ স্পষ্ট। পুজো শেষ হলে ভারত মাতার নামে জয়ধ্বনি দেন পুরোহিত।
তবে কালী পুজোর রাতে এই মন্দিরে আলাদা করে পুজো হয় না। দেবীর বিশেষ পুজো হয় ভূতচতুর্দশীর রাতে। অনেকে বলেন, কালীপুজোর রাতে রাস্তায় ভিড় বেশি। পুলিশের কাছে ধরা পড়ার সম্ভাবনাও প্রবল। তাই আগের রাতে দেবীর আরাধনা করতেন বিপ্লবীরা। সেই রীতি বদল হয়নি। যদিও এই তথ্যের যথার্থতা নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে। কারণ এর কোনও লিখিত ব্যাখ্যা মেলে না। মন্দিরটি বর্তমানে স্থানীয়দের কাছে বেশ জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। দূড় থেকেও ভক্তরা এখানে পুজো দিতে আসেন। তা স্রেফ দৈবের টানে নয়, বরং এই মন্দিরের পরিবেশের জন্য। চড়া গরমেও গাছপালা ঘেরা মন্দির চত্বরে কিছুক্ষণ সময় কাটালে শান্তি মেলে। এছাড়া বাকি মন্দিরগুলিতেও নিয়মিত পুজো হয়। শোনা যায়, এই মন্দিরে থাকা জলাশয়ের নীচে এক গোপন সুড়ঙ্গ রয়েছে। যা একসময় পালানোর জন্য ব্যবহার করতেন বিপ্লবীরা। সেসব আর নেই। স্রেফ রহস্যের ছাপ রয়ে গিয়েছে। ইতিহাসের পাতা উলটে স্থানীয়দের গল্প শুনে অনেকেই সুড়ঙ্গের খোঁজে যান। তাতে লাভ হয় না কিছুই। বরং মন্দির সম্পর্কে সকলের বিস্ময় আরও বাড়ে।