পাকিস্তানে কালী মন্দির। তাও আবার দেড় হাজার বছরের পুরনো। দীপান্বিতা অমাবস্যায় কালী পুজোও হয় ঘটা করে। দর্শণ করতে আসেন মুসলিম ভক্তরাও। ঠিক কোথায় রয়েছে এই মন্দির? আসুন শুনে নেওয় যাক।
বলা হয়, “কালিকা বঙ্গদেশে চ অযোধ্যায়াং মহেশ্বরী | বারাণস্যামন্নপূর্ণা গয়াক্ষেত্রে গয়েশ্বরী।।” অর্থাৎ দেবী কালী হলেন বঙ্গের অধিষ্ঠাত্রী। শুধু বাংলা কেন, গোটা দেশজুড়েই কালী মন্দিরের কমতি নেই। মূর্তি আলাদা হলেও কালীরূপে এ দেশের বহু মন্দিরে পূজিতা হন দেবী। কিন্তু পাকিস্তানেও কালী মন্দির রয়েছে এমনটা শুনেছেন?
আরও শুনুন:
রামপ্রসাদ, কমলাকান্তের ভক্তি আর পান্নালাল ভট্টাচার্যের কণ্ঠেই বাঙালির শ্যামা আরাধনা
অবাক লাগলেও সত্যি। ভারতের এই প্রতিবেশী দেশে রয়েছে এক প্রাচীন কালী মন্দির। পাকিস্তানের অধিকাংশ অঞ্চলেই মুসলিমরা সংখ্যাগরিষ্ট। অনেক সময় সে দেশের হিন্দু মন্দির ধ্বংসের খবরও শোনা যায়। তবে কালাটেশ্বরী কালীর মন্দির এখনও একইভাবে বর্তমান। বালোচিস্তান প্রদেশে এই মন্দিরে নিয়মিত পুজো হয়। দূর দূরান্ত থেকে ছুটে আসেন ভক্তরা। সেই ভিড়ে মুসলিমরাও থাকেন বইকী। শোনা যায়, দেশভাগেরও বহু আগে এই মন্দির প্রতিষ্ঠা করা হয়েছিল। দেবীর মূর্তি ভীষণদর্শণা। গকায় নরকরোটি। আকারেও বেশ বড়। বাংলায় যে প্রচলিত কালীমূর্তি দেখা যায়, এটি তেমন নয় একেবারেই। দেবী দশভুজা। রণসাজে সজ্জিতা। তরবারি, খড়গ, ধনুক, নরমুণ্ড ইত্যাদি অনেক ধরনের অস্ত্র থাকে দেবীর হাতে। কালীপুজোর সময় মন্দিরে ভিড় থাকে চোখে পড়ার মতো। তিনদিন ধরে উৎসব চলে। ভক্তদের দেওয়া হয় ভোগ। ভারত থেকেও অনেকে এইসময় মন্দিরে যান। প্রাচীন মন্দিরের মূর্তিও পুরনো। তাই ক্ষতি এড়াতে কাঁচ দিয়ে ঢেকে রাখা হয় মূর্তিটিকে। মন্দির ঢুকলে চোখে পড়ে গুরু নানকের ছবি। কথিত আছে, শিখ গুরু এই মন্দিরে এসেছিলেন বহুবার। তবে স্রেফ প্রাচীনত্বের কারণে নয়্ এই মন্দির বিখ্যাত হওয়ার আরও কারণ রয়েছে।
আরও শুনুন:
ঠিক যেন জগন্নাথ! পুরীর এই কালী বিগ্রহ দেখে চমকে ওঠেন ভক্তরা
আসলে, এই মন্দির বহুবার ধ্বংসের চেষ্টা করা হয়। তবে কোনওভাবেই মন্দিরের গায়ে এতটুকু দাগ পড়েনি। কথিত আছে স্বয়ং মা কালী এই মন্দিরের রক্ষাকর্ত্রী। তিনিই বারবার মন্দির ধ্বংসের হাত থেকে রক্ষা করেছেন। মন্দিরের প্রবেশ দ্বারে উর্দু লিপি চোখে পড়ে। এরও বিশেষ গুরুত্ব রয়েছে বলেই ধারণা। মন্দিরটির প্রাচীনত্ব নিয়ে বিস্তর গবেষণা চালিয়েছেন প্রত্নতত্ত্ব বিভাগের আধিকারিকরা। অনুমান, এই মন্দির পূর্ব-ইসলামিক যুগে তৈরি। তাই সে দেশের মুসলমানরাও এই মন্দিরের দেবীকে ভক্তির নজরেই দেখেন। কালীপুজোর সময় অহিন্দুরাও ভোগ খেতে আসেন মন্দিরে। যা সর্বধর্ম সমন্বয়ের বার্তাই দিয়ে আসছে বছরের পর বছর ধরে।