অপরাধ দুনিয়ায় পা রাখার শুরুতে দাউদকে পরামর্শ জোগাতেন এই মহিলা। দেশের প্রথম মাফিয়া কুইন নাকি তিনিই। একেবারে সাধারণ ঘর থেকে উঠে এসে মুম্বইয়ের আন্ডারওয়ার্ল্ডের মাথায় বসেছিলেন তিনি। কে এই মহিলা? শুনে নেওয়া যাক।
দাউদের উপর কি বিষপ্রয়োগ করা হয়েছে? এই প্রশ্নেই আপাতত তোলপাড় আন্তর্জাতিক প্রশাসন। ভারতের ‘মোস্ট ওয়ান্টেড’ অপরাধীদের তালিকায় সম্ভবত সবার প্রথমেই জ্বলজ্বল করবে দাউদের নাম। তাঁকে দেখা যায় না, তিনি বেঁচে আছেন না মৃত তা নিয়েও বারবার ঘনিয়ে ওঠে রহস্য, তারপরেও দাউদ ইব্রাহিম এক ভয়ের নাম। এহেন দাউদ-ই যখন অপরাধজগতে সবে সবে নাম লেখাচ্ছেন, সেই সময়ে নাকি তাঁকে বুদ্ধি পরামর্শ দিতেন এক নারী। ডন হয়ে ওঠার সেই প্রথম যুগে সেই মহিলার কাছাকাছিই থাকতেন দাউদ। বলা হয়, দাউদ-শাকিল-সালেমদেরও আগে দেশে মাফিয়ারাজের মাথায় বসেছিলেন ওই মহিলা। এ দেশের প্রথম মাফিয়া কুইনের তকমা পেতে পারেন তিনিই।
আরও শুনুন: ফিরিয়ে দেন প্রথম প্রেমিকা, গোপন প্রেম বলি নায়িকার সঙ্গেও… অন্ধকার জগতেও রোমান্টিক নায়ক দাউদ
তিনি জেনাবাই। দাউদ ইব্রাহিম, ছোটা শাকিল-রা অবশ্য ‘মাসি’ বলেই ডাকতেন তাঁকে। আসলে দাউদের বাবার সঙ্গে ভালো সম্পর্ক ছিল জেনাবাইয়ের। সেই সূত্রে দাউদের বাড়িতে যাতায়াত ছিল এই মহিলার। ফলে অন্ধকার দুনিয়াটা সমঝে নেওয়ার শুরুতে জেনাবাইকেই ভরসা করেছিলেন দাউদ। নিজেদের ব্যবসা এবং কারবার নিয়ে দাউদ-সহ বাকি ডনরা জেনাবাইয়ের কাছ থেকে পরামর্শ নিতেন। জেনাবাইয়ের আদেশ ছিল তাঁদের কাছে শিরোধার্য।
কিন্তু একেবারে সাধারণ গরিব ঘর থেকে উঠে আসা, ৬ ভাইবোনের মধ্যে সবচেয়ে ছোট জেনাবাই কীভাবে এই জগতে নিজের ঠাঁই করে নিয়েছিলেন? মুম্বাইয়ের সেই অন্ধকার দুনিয়ায় থেকেও নিজস্ব দাপটে সবাইকে ছাপিয়ে গিয়েছিলেন কীভাবে?
গল্পের শুরুটা তেমন ছিল না কিন্তু। বাবার ঘরে কোনওমতে খাবার জুটত, তারপর ১৪ বছর বয়সেই বিয়ে করে যেতে হল স্বামীর ঘরে। এর মধ্যেই ঘটে গেল দেশভাগ। স্বামী পাকিস্তানে চলে গেলেও, ৫ সন্তানকে নিয়ে মুম্বইয়ের ডোঙরি এলাকাতেই থেকে গিয়েছিলেন জেনাবাই। আর এই সদ্যস্বাধীন দেশেই তাঁর জীবন বদলাতে শুরু করে। গরিবদের জন্য সরকার যে রেশন ব্যবস্থা চালু করে, তা নিয়েই কালোবাজারি শুরু করে দেন এই মহিলা। চালের চোরাকারবারের সূত্রে খোঁজ পেলেন মদের ব্যবসার। মদ বানানোয় হাত পাকালেন। শুরু করলেন মদের ব্যবসাও। হাতে টাকা আসতে থাকল। আর সেটা সৎ পথে নয়। ভেজাল মদ বিক্রির অভিযোগে একসময় গ্রেপ্তার হতেও হল জেনাবাইকে। কিন্তু ততদিনে জেনাবাই নিজের প্রতিপত্তি বিস্তার করে ফেলেছেন। সেই সময় সমস্ত দাগি অপরাধীরা জেনাবাইয়ের সঙ্গে যোগাযোগ রাখতেন। ফলে পুলিশের পক্ষেও তাঁকে আটকে রাখা সম্ভব ছিল না।
আরও শুনুন: পুলিশের ঘুম ছুটিয়েছিল কলকাতার প্রথম মহিলা সিরিয়াল কিলার
যদিও ছেলের মৃত্যুর পর নিজেকে গুটিয়ে নিতে থাকেন এই মহিলা। অপরাধজগতে পা রেখেই প্রতিদ্বন্দ্বীর গুলিতে মৃত্যু হয়েছিল ছেলের। তবে ঈশ্বর অপরাধীকে শাস্তি দেবেন, এই ভরসা রেখেই হত্যাকারীদের ছেড়ে দিয়েছিলেন মাফিয়া কুইন। পাশাপাশি সাম্প্রদায়িক অশান্তি দেখলেও সেখানে ছুটে যেতেন তিনি। আর তাই, ১৯৯৩-তে দাউদের ছক অনুযায়ী যে মুম্বই বিস্ফোরণ ঘটে, সেই ঘটনা নাড়িয়ে দিয়েছিল জেনাবাইকে। সাফ জানিয়েছিলেন, আগেকার মতো নেটওয়ার্ক থাকলে বা সেই পুরনো প্রতিপত্তি থাকলে এই হামলা রোখার চেষ্টা করতেন তিনি। দাউদের সঙ্গে জেনাবাইয়ের যে দূরত্ব তৈরি হতে শুরু করেছিল, সেই সম্পর্কে শেষ পেরেক পুঁতে দেয় এই মুম্বাই বিস্ফোরণের ঘটনাই।