দোল মানেই যেন বসন্তের টিকিট কনফার্ম। গোটা ভারত জুড়েই রংয়ের উৎসব ঘিরে একই রকম উত্তেজনা। কোথাও লাঠমার হোলি তো কোথাও ফুলের দোল, কোথাও ফসলের উৎসব তো কোথাও বীরত্বের বন্দনা! কিন্তু ভারতের বাইরে? সেখানেও কি একইভাবে বসন্ত যাপন হয়?
আবিরের গন্ধ, কোকিলের ডাক, গরমের শাসানি… তার মানেই কি ‘বসন্ত এসে গেছে’? একেবারেই না। কারণ ভোট এলেই আবিরের গন্ধ মিলতে পারে। আর গরম কিংবা কোকিলের ডাকও সারাবছর বর্তমান। তাহলে বসন্তের আগমন বোঝাবে কীসে?
আরও শুনুন:
বসন্ত উৎসব ঘিরে যত উন্মাদনা, শান্তিনিকেতনের জমিও কেনা হয়েছিল এই বসন্তে
ভারতে এর উত্তর হবে, দোল। রঙের নেশায় বুঁদ হয়ে, সারাদিনের হুল্লোড়। তাতে মিশবে বাহারি শরবত, ভাং, সিদ্ধি। দেশের নানা প্রান্তে উদযাপনের ধরন আলাদা হলেও মোটের উপর রঙের যোগ মেলে সর্বত্রই। কিন্তু বিশ্বের অন্যান্য দেশে এই সময়টা এতটাও রঙিন নয়। বরং সেখানে উদযাপনের ধরন অনেকটা আলাদা। আমেরিকার কথাই ধরা যাক। বসন্তের শুরুতেই সে দেশে অদ্ভুত এক খেলার রেওয়াজ আছে। যা অনুষ্ঠিত হয় মূলত হোয়াইট হাউসে। খেলার নাম, ইস্টার এগ রোল। বেশ মজার এই খেলায় খুদেরাই অংশ নেয়। কাজ হল, একটা কাঠের চামচ দিয়ে ঠেলে ঠেলে ঘাসের মধ্যে আস্ত একটা ডিম গড়িয়ে নিয়ে যাওয়া। রেসের সময় যেভাবে ঘর ভাগ করে দেওয়া হয়, ঠিক সেইভাবে নির্দিষ্ট সারিতে খুদেরা ডিম নিয়ে এগোতে থাকে। মাঝপথে ভেঙে গেলেই প্রতিযোগিতা থেকে বাদ। তার মধ্যে যে সবার আগে ডিম নিয়ে শেষ লাইন ছুঁতে পারবে সে জয়ী। খোদ মার্কিন প্রেসিডেন্ট এই খেলায় উৎসাহ দিতে হাজির থাকেন। রীতিমতো উৎসবের ধাঁচে গোটা বিষয়টা আয়োজন করা হয়। তাই এর জনপ্রিয়তাও নেহাতই কম নয়।
আবার ইংল্যান্ডে এই সময়টায় চিজ রোল নামে এক অদ্ভুত প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠিত হয়। অদ্ভুত বলার কারণ, এতে বিপদের সম্ভাবনা মারাত্মক, তবু সকলে ঝাঁপিয়ে পড়েন অংশ নিতে। খেলা অনুষ্ঠিত হয় কুপার নামে এক পাহাড়ে। খাড়া ঢাল বেয়ে সকলে উপরে ওঠেন। তারপর সার দিয়ে দাঁড়িয়ে পড়েন। যেন এক্ষুনি দৌড় শুরু হবে। বাস্তবে হয়ও তাই, তবে তার আগে পাহাড়ের ঢালে গড়িয়ে দেওয়া হয় বড় একটা চিজের ব্লক। গোলাকৃতি সেই চিজ গড়িয়ে গড়িয়ে নীচের দিকে পড়তে থাকে। এই সময় সার দিয়ে দাঁড়িয়ে থাকা প্রতিযোগীরাও শুরু করেন দৌড়, উদ্দেশ্য ওই চিজের ব্লকটাকে ধরতে হবে। স্বাভাবিক ভাবেই পাহাড়ের ঢাল বেয়ে দৌড়ে নামার সময় অনেকেই পড়ে যান। রীতিমতো ডিগবাজি খেয়ে উলটে পালটে পড়তে থাকেন। কী ভাগ্যিস, ওই ঢাল বড় বড় ঘাসে ভর্তী! তাই পড়তে থাকলেও তেমন গুরুতর চোট লাগে না। সকলেই বিষয়টাকে মজার ছলে দেখেন। শেষমেশ যে চিজ ব্লক ধরতে পারে সেই জয়ী। কেউ কেউ অবশ্য রীতিমতো আহতও হয়ে যান, তার জন্য প্রস্তুত থাকে বিশেষ মেডিক্যাল টিম।
বসন্ত উদযাপনের এমন রীতি সারা বিশ্বে আর কোথাও নেই। তাই এখানকার উৎসবের জনপ্রিয়তা অন্য মাত্রায়! আবার তাইল্যান্ডে এই সময়টা অনেকটা ভারতের মতোই উদযাপন করা হয়। তবে সেখানে রঙের ছোঁয়া নেই। স্রেফ জল ছোঁড়া হয় এর ওর দিকে। কেউ বালতি কেউ জল কামান এইসব নিয়ে রাস্তায় নেমে পড়েন। তারপর এক্কেবারে দোলের মতো গোটা সময়টা একে অন্যকে ভিজিয়ে আনন্দ করেন। স্থানীয়দের বিশ্বাস, এমনটা করলে তাঁদের আগামি বছর দারুণ কাটবে।
অবশ্য বসন্তের সঙ্গে নতুন বছর শুরুর ধারণা আরও এক জায়গায় রয়েছে। মধ্য এশিয়ার কিছু দেশে এই সময়টায় বর্ষবরণ করা হয়। নাচে-গানে বিভিন্ন অনুষ্ঠানে আনন্দে মেতে ওঠেন সবাই। সুতরাং বসন্তের আগমন যে স্রেফ রঙে রঙে রাঙিয়ে দেওয়ার জন্য তা নয় একেবারেই, বরং নতুন কিছু শুরুর আনন্দে মেতে ওঠাও বটে।