উস্তাদ জাকির হুসেনের জন্য তবলা তৈরি করেন রামচন্দ্র। সুরের মায়ায় এভাবেই মুছে যায় ধর্মের বেড়াজাল। উস্তাদের গ্র্যামি পাওয়ার আবহে চর্চায় এই শিল্পীর নামও। যাঁর গড়া তবলা বাজিয়েই জাকির হুসেনের মুকুটে জুড়ল নতুন পালক। আসুন শুনে নেওয়া যাক।
যে দেশে উস্তাদ বড়ে গোলাম আলি খাঁ সাহেবের ‘হরি ওম্ তৎ সৎ’ শুনে মুগ্ধ হন সকলে। যেখানে নজরুলের সুরে শ্যামা হয়ে ওঠেন আদরিণী। সেই দেশেই জাকির হুসেনের জন্য তবলা বানিয়ে দেন রামচন্দ্র। সম্প্রতি, গ্র্যামি পুরস্কারে সম্মানিত হয়েছেন উস্তাদ জাকির হুসেন। সমাজ মাধ্যম নতুন করে শিল্পীর চর্চায় বুঁদ। প্রধানমন্ত্রী মোদির বার্তাতেও উচ্ছ্বাসের ছাপ স্পষ্ট। অনুরাগী মহল তো বটেই, আপামর দেশবাসী ফের গর্বিত উস্তাদের কৃতিত্বে। তবে এই আবহে আরও একজনের আনন্দ মাত্রাছাড়া। কারণ তাঁর গড়া তবলাই উস্তাদের রোজকার সঙ্গী।
আরও শুনুন: হিন্দুরাই কি ফের বাড়িয়ে তুলবে বৌদ্ধধর্মকে? নেতার কথায় মিলল ইঙ্গিত
কথা বলছি, হরিদাস রামচন্দ্র ভাটকর সম্পর্কে। মিরাজের এই শিল্পীর পরিবারের সকলেই তবলা গড়ার সঙ্গে যুক্ত। তবে রামচন্দ্র ছোট থেকেই তাঁর বয়সীদের তুলনায় একটু বেশি ভালো কাজ জানতেন। কারণ স্রেফ তবলা গড়া নয়, তা দেখতেও যেন সুন্দর হয় সেদিকে বিশেষ নজর দিতেন রামচন্দ্র। জীবনের প্রথম দিকটা মিরাজেই কাটিয়েছেন। পরবর্তীকালে চলে আসেন মুম্বই। যার প্রধান কারণ ছিল উস্তাদ জাকির হুসেন। আসলে, উস্তাদের জন্য তবলা গড়বেন ছোট থেকে এই স্বপ্নই দেখতেন রামচন্দ্র ভাটকর। তবে ইচ্ছা থাকলেই তো আর হল না! জাকির হুসেন ততদিনে যে জায়গায় পৌঁছেছেন তাতে সাধারণ কোনও কারিগরের বানানো তবলা তিনি কেনই বা বাজবেন? তাই স্বপ্ন পূরণের জন্য কম অপেক্ষা করতে হয়নি রামচন্দ্রকে।
আরও শুনুন: কাশী-মথুরা মুক্ত হলে আর মসজিদ চাইবে না হিন্দুরা, দাবি ধর্মগুরুর
কিন্তু ওই যে, কথায় আছে, মন দিয়ে কাজ করে গেলে একদিন ফল মিলবেই। এক্ষেত্রেও ঠিক তেমনটাই হয়। মুম্বই এসে রামচন্দ্র কাজ শুরু করেন জনপ্রিয় এক বাজনার দোকানে। সেখানে তবলা গড়াই তাঁর প্রধান কাজ ছিল। ধীরে ধীরে শিল্পী মহলে রামচন্দ্রের নাম ছড়িয়ে পড়ে। ১৯৯৮ সালে নিজের দোকান খোলেন। এইসময় শিল্পী যোগেস সামসির নজরে পড়েন রামচন্দ্র। তাঁর গড়া তবলা দেখে মুগ্ধ হন আব্বাজির মতো শিল্পীও। এইভাবেই উস্তাদ জাকির হুসেনের কাছে রামচন্দ্রের নামের সুপারিশ পৌঁছয়। পরখ করার জন্য রামচন্দ্রকে তবলা বানিয়ে দিতে বলেন উস্তাদ হুসেন। এই সুযোগের অপেক্ষাতেই এতদিন ছিলেন রামচন্দ্র! কাজেই নিজের সেরাটুকু দিয়ে উস্তাদকে তবলা বানিয়ে দেন তিনি। যা উস্তাদের এতটাই পছন্দ হয়, যে পাকাপাকি ভাবে তাঁর তবলা গড়ার দায়িত্ব রামচন্দ্রকেই দিয়ে দেন। এরপর আর দুজনের যুগলবন্দী থামেনি। জানা যায়, দীর্ঘ ১৮ বছর ধরে উস্তাদ জাকির হুসেনের তবলা বানিয়ে দিচ্ছেন হরিদাস রামচন্দ্র। শিল্পী মহলে তবলা কারিগর হিসেবে এই মুহূর্তে তাঁর যথেষ্ট নামডাক। তবে জীবনের সেরা স্বীকৃতি হিসেবে এখনও জাকির হুসেনের জন্য তবলা তৈরি করাই মনে করেন রামচন্দ্র।