এতটুকু এদিক ওদিক হবে না কারও। একসঙ্গে সব্বার হাত উঠবে, নামবেও। বন্দুক চালানো থেকে একসারিতে হাঁটা, সবতেই বজায় থাকবে শৃঙ্খলা। আর এই নিখুঁত প্রর্দর্শনী একদিনের অভ্যাসে হয় না। তার জন্য সময়স লাগে। ঠিক কতদিন? আসুন শুনে নেওয়া যাক।
২৬ জানুয়ারি। ভারতের প্রজাতন্ত্র দিবস। সংবিধান প্রণয়ণের এই দিনের বিশেষ গুরুত্ব রয়েছে গোটা দেশে। পাশাপাশি এই দিনেই দিল্লির কর্তব্য পথ সেজে ওঠে রাজকীয় ঢঙে। প্রজাতন্ত্র দিবসের কুচকাওয়াজে প্রর্দর্শন হয় ভারতের সামরিক শক্তির। জল,আকাশ, মাটি তিন ক্ষেত্রেই জওয়ানরা নিজেদের দক্ষতা সকলের সামনে তুলে ধরেন। তা দেখার জন্য অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করে গোটা দেশের মানুষ।
প্রথমেই সামরিক শক্তি। ট্যাংকার থেকে শুরু করে বিভিন্ন স্তরের সেনা জওয়ানরা হেঁটে যাবেন সারিবদ্ধ ভাবে। সকলেই যে সুযোগ পান তা নয়, কঠিন পরীক্ষায় পাস করলে তবেই মেলে এই প্যারেডে অংশ নেওয়ার সুযোগ। কুচকাওয়াজের রয়েছে নির্দিষ্ট ছন্দ। সেই তালেই পা ওঠানামা করে জওয়ানদের। আলাদা আলাদা রেজিমেন্ট নিজেদের শক্তি দেখান। একবারে সামনে নেতৃত্ব দেন যিনি, তাঁর হাতে সরু একটা তরবারি থাকে। প্যারেড দেখতে আসা অতিথিদের বিশেষ কায়দায় স্যালুট জানিয়ে সম্মান দেখান এই জওয়ানরা। পালটা স্যালুট জানিয়ে প্রত্যুত্তরও দেন নেতা-মন্ত্রী, আমলারা। বিদেশ থেকেও অনেকে আসেন অনুষ্ঠান দেখতে। সবটাই এত নিখুঁত ভাবে হয়, যে দেখে মনে হবে সারিবদ্ধ ভাবে কয়েকটি রোবট এগিয়ে চলেছে। এই শৃঙ্খলার জন্যই দরকার হয় নিয়মিত অভ্যাস। শোনা যায়, প্রায় ৯ মাস আগে থেকে এই প্যারেডের প্রস্তুতি শুরু করে দেন অংশগ্রহণকারী জওয়ানরা। অনুষ্ঠান জানিয়ারিতে, তাই আগের বছরের ডিসেম্বরেই অংশগ্রহণকারীরা চলে আসেন দিল্লিতে। এরপর অন্তত ৬০০ ঘণ্টা কর্তব্য পথেই চলে অভ্যাস। যাতে অন্য কারও অসুবিধা না হয়, তাই ভোর ৩ টে থেকে প্যারেড শুরু করা হয়। শুধু পায়ে হাঁটা নয়, বাইকে চড়েও নানা কসরত দেখান জওয়ানরা। এক্ষেত্রে তাঁদের সঙ্গে যোগ দেয় পুলিশ। তাঁরাও কম যান না মোটেই।
এছাড়া প্রজাতন্ত্র দিবসের প্যারেডে অংশ নেয় বিভিন্ন রাজ্য। নিজেদের সংস্কৃতিকে ট্যাবেলোর মাধ্যমে তুলে ধরেন তাঁরা। সেরার সেরা ট্যাবেলোকে পুরস্কারও দেওয়া হয়। পাশাপাশি থাকে বিশেষ কিছু ক্ষেপনাস্ত্র। জানা গিয়েছে, এবারের সাধারণতন্ত্র দিবসের প্যারেডে দেখা মিলবে ‘প্রলয়’-এর। প্রকৃত নিয়ন্ত্রণরেখায় চিনের হামলা রুখতে মোতায়েন থাকা এই ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্রকে এই প্রথমবার দেখা যাবে দিল্লির কর্তব্যপথে। এছাড়াও সাধারণতন্ত্র দিবসের আরও বড় দুই আকর্ষণ হতে চলেছে ‘অর্জুন’ ও ‘ভীষ্ম’। প্রথমটি প্রধান যুদ্ধ-ট্যাঙ্ক। দ্বিতীয়টি টি-৯০এস ট্যাঙ্ক। ‘অর্জুন’ সম্পূর্ণ দেশীয় প্রযুক্তিতে নির্মিত, ‘প্রলয়’-এর মতোই। যার বৈশিষ্ট্য ১২০ মিমি রাইফেল। কিন্তু ‘ভীষ্ম’ আসলে রুশ ট্যাঙ্কের এক রূপান্তরিত রূপ। ভারতীয় প্রয়োজন বুঝে সেটিকে গড়েপিটে নেওয়া হয়েছে। একইসঙ্গে আকাশপথে অন্যতম আকর্ষণ গড়ে তুলবে ‘তেজস’। ‘লাইট কমব্যাট’ এয়ারক্র্যাফটটি সম্পূর্ণ দেশীয় প্রযুক্তিতে নির্মীত। বায়ুসেনার জরাগ্রস্ত মিগ-২১ বিমানগুলির জায়গা নেবে তেজস। তবে এবারের সবথেকে বড় চমক অন্য জায়গায়। জানা যাচ্ছে, দেশের ইতিহাসে প্রথমবার যৌথভাবে রাজপথে শক্তিপ্রদর্শন করবে দেশের তিন সেনাবাহিনী। প্রতিবছর সাধারণতন্ত্র দিবসের প্যারেডে আলাদা আলাদা ভাবে পরাক্রম দেখায় স্থল, নৌ ও বায়ুসেনা। তবে এবার সেই ছবিতে বদল আসতে চলেছে। আর তাই প্রস্তুতিতে এতটুকু খামতি রাখতে নারাজ প্রশাসন।