সাজা ছিল ১৪ বছরের। কিন্তু জেলমুক্তি তার বছর চারেক আগেই। নিয়ম মেনেই এমনটা হয়েছে। আলাদা করে মোটা টাকা জরিমানাও দিতে হয়নি অপরাধীকে। করনীয় বলতে, বই পড়া। সেই কাজ মন দিয়ে করেই, আগাম মুক্তি মিলেছে। শুনতে অবাক লাগলেও সত্যি। কোথায় হয় এমনটা? আসুন শুনে নেওয়া যাক।
বইমেলায় মেলা বই! কোনটা ছেড়ে কোনটা পড়ি! ভেবে আকূল পাঠক। কোন বই পড়লে কী হবে? এই ভাবনাও অনেকের। ভুল করে ভুল বই পড়তে শুরু করলে, সময় নষ্ট হবে, তাতে বেজায় আপত্তি। তাই বই বাছাইয়ে বড় সময় কাটিয়ে ফেলেন অনেকে। কিন্তু এই সময়টাই যদি বাছাবাছি না করে কোনও একটা বই পড়া যেত? কী মিলত তাহলে?
প্রাপ্তির তালিকা দীর্ঘ! জেল থেকে আগেভাগে মুক্তি কিংবা সেলুনে বিশেষ ছাড়, সবই মিলতে পারে বই পড়ে। সন্দেহ নেই যে, বই পড়ার সময়ে থাবা বসিয়েছে অন্যান্য বহু কিছু। সোশ্যাল মিডিয়া যেভাবে আমাদের রক্তে চারিয়ে দিয়েছে তাৎক্ষণিক প্রাপ্তির নেশা, সেই ইনস্ট্যান্ট গ্র্যাটিফিকেশন পেরিয়ে বইয়ের দুনিয়ায় ডুব দেওয়া দিনে দিনে কঠিন হয়ে উঠছে। কোনও একটি বিষয়ে মন দেওয়াই যেন কষ্টসাধ্য হয়ে উঠেছে। চটজলদি স্ক্রলে এক থেকে অন্য আর-একের দিকে ছুটে যাওয়া আমাদের অভ্যাস। অথচ বই পড়া ঠিক এর উলটোদিকের পৃথিবী। চাইলেও এই দুনিয়ার বাসিন্দা হওয়া কঠিন। চেষ্টা করে দেখা যেতেই পারে। তার উপায়ও রয়েছে ঢের। আসলে, স্রেফ জ্ঞান বৃদ্ধি ছাড়া বই পড়ে আর কিছু হয় বলে অনেকেই মনে করেন না। তার চেয়ে ঢের ভালো, ভিডিও দেখে নতুন কিছু জানা। অনেক সময় বইয়ে লেখা গল্প, ভিডিও আকারে দেখতে পছন্দ করেন অনেকে। তাতে পাঠকের সংখ্যা কমে, বলা ভুল। তাও কিছুটা প্রভাব তো পড়েই। এক্ষেত্রে বলভিয়ার কথা বলা যেতে পারে।
সেখানকার এক জেলে অদ্ভুত নিয়ম রয়েছে। সাজাভোগী আসামীরা চাইলেই নিজেদের সাজা কমিয়ে ফেলতে পারেন কয়েক বছর। স্রেফ বই পড়তে হবে তাঁদের। নিয়মিত একটা করে বই। কখনও তার চেয়েও বেশি। যত বেশি বই, সেই অনুপাতে কমবে সাজার মেয়াদ। আসলে, সে দেশের প্রশাসন মনে করে বই পড়লে মানুষের চেতনার বিকাশ ঘটে। বোধ বুদ্ধি বাড়ে। তাতে নতুন করে অপরাধের প্রবণতা কমে বইকী। আর তাই বই পড়লেই সাজা মুকুব। যদিও জেল থেকে ছাড়ার আগে বিশেষ পরীক্ষা নেওয়া হয় আসামীর। কথা বলে ভালো করে বুঝে নেওয়া হয়, তার মনের কতটা বদল ঘটেছে। এ দেশে সরাসরি এমন নিয়ম না থাকলেও, জেলের মধ্যে বই নিয়ে যেতে পারেন আসামীরা। এমনকি রাজনৈতিক বন্দীরা সবসময় নিজেদের কাছে বিশেষ কিছু বই রাখেন জেলে থাকার সময়। স্রেফ জেল নয়, বই পড়লে বিশেষ ছাড় মিলতে পারে সেলুনেও। মার্কিন মুলুকের এক সেলুনে এই নিয়ম রয়েছে। চুল কাটার সময় মন দিয়ে পড়তে হবে বই। তাহলেই কমবে বিলের অঙ্ক। এমনকি পুরোপুরি বিনামূল্যেও মিলতে পারে চুল কাটানোর সুযোগ। ভারতের উত্তর-পূর্বের কোনও এক গ্রামেও নাকি এমন এক সেলুন রয়েছে। তবে সেখানে চুল কাটার সময় নয়, আগে গিয়ে দোকানে বসে বই পড়তে হয়। তবেই নাকি ছাড় দেন দোকানি। তালিকা আরও দীর্ঘ। কোথাও খাবারের দোকানে বিশেষ ছাড় মেলে, কোথাও আবার অন্য কিছু। বই পড়িয়ে সকলের মন মানসিকতার বদল ঘটানোই এক্ষেত্রে আসল লক্ষ। তবে বই পড়লেই যে সমাজ বদলে যাবে এমন নয়। প্রয়োজন সঠিক বই পড়া, এবং তা উপলব্ধি করা। তবেই এই সব সুবিধা যে কারণে দেওয়া হয়, তার উদ্দেশ্য সফল হবে।