‘তুমি সুখ যদি নাহি পাও, যাও সুখেরও সন্ধানে যাও’! রবি ঠাকুর সুখের সন্ধানে যেতে তো বলেছেন, কিন্তু সত্যি কোথায় গেলে যে সুখ মেলে তার হদিশ কি আদৌ পেয়েছি আমরা। এমনিতেই নিত্যজীবনে দুঃখ-অশান্তিতে জেরবার মানুষ। তার উপরে অতিমারির চোখরাঙানি। তবে সুখের হদিশ বোধহয় আর দূরে নয়। আনন্দের খোঁজে একটি আস্ত মিউজিয়ামই খুলে ফেলেছেন একদল মানুষ। জানেন কোথায় রয়েছে এই হ্যাপিনেস মিউজিয়াম? শুনে নিন।
দৈনন্দিন জীবনে ক্লান্ত, বিধ্বস্ত – কে না হই আমরা! তবু ক্ষ্যাপার পরশপাথরের মতোই তার মধ্যে থেকেই ছোট ছোট আনন্দ, হাসির উপকরণ খুঁজে নিতে চাই। মোবাইলের কয়েক ইঞ্চির স্ক্রিন আঁকড়ে মুখ গুঁজে খুঁজি বিনোদন। গত বছর দুয়েক ধরে করোনার আছড়ে পড়া ঢেউ, লকডাউন, বিধিনিষেধ আমাদের ভাল থাকাকে আরও চার দেওয়ালের মধ্যে বেঁধে দিয়েছে। তার মধ্যে পৃথিবীর অসুখ, মৃত্যু, বিচ্ছেদ, শোক- সব মিলিয়ে আমরা তেমন ভাল আর থাকতে পারছি কই!
লোকে বলে, নর্ডিক দেশগুলি নাকি একটু বেশিই সুখী প্রকৃতির। তারা তাই কেবল নিজেদের জন্য সুখ সঞ্চয় না করে তা ছড়িয়ে দিতে জানে আশপাশের মানুষদের মধ্যে। কেমন করে? তা জানতে হলে পৌঁছে যেতে হবে ডেনমার্কের রাজধানী কোপেন হেগেনে। সেখানে রয়েছে এমনই এক সুখ খোঁজার মিউজিয়াম। অন্যান্য সংগ্রহশালার মতোই এই মিউজিয়ামেও সংগ্রহ করা হয়েছে সুখের ছোট ছোট নজির।
আরও শুনুন: এক শহরের মালিক দুই দেশ! কোথায় রয়েছে এমন শহর?
কোপেন হেগেনের এই হ্যাপিনেস মিউজিয়ামে রয়েছে মোট আটটি ঘর। প্রত্যেকটি ঘরে আলাদা আলাদা রকমের সুখ খোঁজার রসদ ছড়িয়ে রেখেছেন উদ্যোক্তারা। কোথাও রয়েছে দর্শন, কোথাও বা জীবনবোধ। যেমন ধরুন, একটি ঘরে রয়েছে এক্সপিরিয়েন্স মেশিন, যেখানে ইলিউশনের মাধ্যমে দর্শকদের জন্য সুখানুভূতি অনুভবের ব্যবস্থা করা হয়েছে। কোনও ঘরে আবার রয়েছে রূঢ় বাস্তবের ছবি, যার সিংহভাগটাই হয়তো ভরা দুঃখ-কষ্টে। আবার একটি ঘরে ঢুকলে দেখতে পাবেন একটি মস্ত মানচিত্র, যাতে চিহ্নিত করা রয়েছে পৃথিবীর সুখীতম ও দুঃখীতম দেশগুলি। রীতিমতো গবেষণা করে মিউজিয়ামটিকে সাজিয়েছেন কর্তৃপক্ষ। আনন্দের ইতিহাস থেকে শুরু করে সুখী থাকার রহস্য- সবেরই সুলুক সন্ধান ওই মিউজিয়াম। মিউজিয়ামটির সিইও মেইক উইকিং জানিয়েছেন, দর্শকেরা যেখান থেকেই আসুন না কেন, প্রদর্শনী দেখে সুখের খোঁজ পাবেনই। এটাই তাঁদের বিশ্বাস। ২০২০ সালে অতিমারি, লকডাউনে পৃথিবী যখন ডুবে, সে সময় মিউজিয়ামটি খোলার সিদ্ধান্ত নেন তাঁরা। জানতেন, এ সময়টায় দর্শক তেমন মিলবে না। তবে তার সঙ্গে এটাও জানতেন পৃথিবীর গভীর অসুখ। এই সময়েই সুখের সন্ধান দেওয়াটা জরুরি। সেই ভাবনা নিয়েই শুরু।
আরও শুনুন: দেশভাগে ছাড়াছাড়ি, কেটে গেছে ৭৪ বছর, এতদিনে দেখা হল ‘হারিয়ে যাওয়া’ দুই ভাইয়ের
মজার ব্যাপার কি জানেন, মিউজিয়ামটি খোলার ঠিক আগে আগে ডেনমার্কবাসীর কাছে একটি ছোট্ট আবেদন করেছিলেন মিউজিয়াম কর্তৃপক্ষ। তেমন কিছু জিনিস চেয়েছিলেন তাঁরা নাগরিকদের কাছে, যা তাঁদের আনন্দ দেয়। অনেক জিনিসপত্রই জমা পড়েছিল তাঁদের কাছে, তার মধ্যে কয়েকটি জিনিস ছিল বেশ অন্য রকম। তাঁর মধ্যে একটি ছিল ব্যাডমিন্টন ব়্যাকেট, একটি ইনহেলার, আর তৃতীয়টি ছিল সবচেয়ে অদ্ভুত। এক নাগরিক তাঁর মৃত বাবার একটি শার্ট জমা দিয়েছিলেন মিউজিয়াম কর্তৃপক্ষের কাছে। সেই শার্টের বুক পকেটে ছিল টোমাটোর কয়েকটা অঙ্কুরিত বীজ। যা চমকে দিয়েছিল মিউজিয়ামের কর্মীদের।
সত্যিই তো, কাকে যে কোন জিনিস সব চেয়ে বেশি আনন্দ দেয়, তা বলা বড্ড কঠিন। তবে ‘সুখের সন্ধানে’ যেতে চাইলে আক্ষরিক অর্থেই এখন এই মিউজিয়ামে ঘুরে আসতে পারেন বিশ্বের মানুষ।