ঘুম থেকে উঠেই ভাইকে অভিশাপ দিতে শুরু করেন দিদিরা। মৃত্যুকামনা বললেও ভুল হয় না। তাও আবার ভাইফোঁটার দিনে। এমনটাই প্রচলিত নিয়ম। কিন্তু কেন? এমন নিয়ম পালিত হয় কোথায়? আসুন শুনে নেওয়া যাক।
“ভাইয়ের কপালে দিলাম ফোঁটা/ যমের দুয়ারে পড়ল কাঁটা”…
ভাইফোঁটা বলতেই মনে পড়ে এই চিরচেনা উচ্চারণ। আসলে, দুয়ারে কাঁটা পড়া মানে সে পথে যাওয়ার উপায় নেই। ভাইকে ফোঁটা দিয়ে তার যমের দুয়ারে যাওয়ার পথ বন্ধ করে দেওয়া হল, এমনই এক আশ্বাস দেয় ভাইফোঁটার চিরচেনা লৌকিক উচ্চারণ। ব্যতিক্রম বিহারের কিছু গ্রাম। ভাইফোঁটার দিনে এই গ্রামের দিদি বোনেরা চিৎকার করে ভাইয়ের মৃত্যুকামনা করেন।
শুনতে অবাক লাগলেও সত্যি। বছরের পর বছর ধরে এই নিয়ম পালন করে আসছে বিহারের কিছু গ্রাম। এমনকি ছত্তিসগড়, ঝাড়খণ্ডের কিছু গ্রামেও এর চল রয়েছে। নেপথ্যে রয়েছে এক প্রচলিত কাহিনি। এমনিতে ভাইফোঁটা সংক্রান্ত দুটি পৌরাণিক কাহিনি প্রচলিত। একটি কাহিনি বলে, যমের মঙ্গল কামনায় ফোঁটা দিয়েছিল বোন যমুনা। সেই থেকেই শুরু ভাইফোঁটার। অন্যটি শ্রীকৃষ্ণ ও সুভদ্রার গল্প। নরকাসুরকে বধ করার পর বোন সুভদ্রার কাছে গিয়েছিলেন শ্রীকৃষ্ণ। সেই সময় সুভদ্রা শ্রীকৃষ্ণকে ফুল-মিষ্টি দিয়ে বরণ করেছিল। কপালে পরিয়ে দিয়েছিল টিকা। অনেকেরই ধারনা এই মিথই রয়েছে ভাইফোঁটার নেপথ্যে। তবে আরেকটি স্বল্প পরিচিত কাহিনিও রয়েছে। সেই কাহিনিই ভাইফোঁটার শিকড়, দাবি করেন বিহারের এই গ্রামবাসী। ব্যাপারটা ঠিক কেমন?
কথিত আছে, একবার স্বয়ং যমরাজ ঠিক করেন কারও প্রাণ হরণ করবেন। তবে এমনি এমনি নয়। বিশেষ এক শর্ত থাকবে। খানিকটা এরকম, যার দিদি কখনও তাকে অভিশাপ দেয়নি, যম তাকেই হত্যা করবেন। এমনিতে ভাইবোনের খুনসুটি লেগেই থাকে। রাগের মাথায় কে কাকে অভিশাপ দেবে তার কোনও ঠিক নেই। সবটাই মজার ছলে। তবে যম এতশত বুঝবেন না। মজা করে কেউ অভিশাপ দিলেও তার ভাইকে হত্যা করবেন না তিনি। অনেক খুঁজে যম কাউকেই পেলেন না। কিন্তু বিহারের এক গ্রামে খোঁজ মিলল এমন এক ভাইয়ের যার দিদি তাকে কখনও অভিশাপ দেয়নি। যম ঠিক করলেন সেই ভাইয়ের প্রাণ নেবেন। এদিকে ভালোবাসার চাদরে মুড়িয়ে ভাইকে আগলে রাখতেন সেই দিদি। ভাইয়ের গায়ে এতটুকু আঁচ লাগুক, দিদি তা চাইতেন না। তাঁর ভাইকে হত্যা করবে যম! হতেই পারে না। কোনওভাবে যমের শর্ত জানতে পেরে যান দিদি। ব্যাস, পরদিন সকালে উঠেই ভাইকে গালমন্দ করতে শুরু করেন। বুকে পাথর চেপে মৃত্যুকামনা অবধি করে ফেলেন। মনে মনে দিদি জানতেন এতে ভাইয়ের ভালোই হবে। হলও তাই। যম এসে দেখলেন কিচ্ছু করার নেই। দিদি অভিশাপ দিয়েছে এই ভাইকেও, তাই প্রাণ নেওয়া যাবে না। ধীরে ধীরে এই ঘটনার কথা চারদিকে ছড়িয়ে পড়ল। শোনা যায়, সেই থেকেই এমনটা নিয়মের মতো প্রচলিত হল ওই গ্রামে। সকলেই ভাইফোঁটার দিনে ভাইকে অভিশাপ দিতে শুরু করেন। আরও অনেক নিয়ম রয়েছে। যেমন জিভে কাঁটা নিয়ে শপথ করা, বিশেষ উপাচার সহযোগে পুজো করা, ইত্যাদি অনেক কিছু। সবমিলিয়ে বিহারের এইসব গ্রামে অদ্ভুত এক উৎসব পালিত হয়। ভাইয়ের দীর্ঘজীবন তাঁরাও প্রার্থনা করেন। স্রেফ ধরণটা খানিক আলাদা, এই যা!