পোস্ট অফিসে আপনাদের যাতায়াত লেগেই থাকে। কখনও চিঠি পোস্ট করার প্রয়োজনে, কখনও লেনদেনের কারণে। কিন্তু ভাবুন তো, আপনার পোস্ট অফিস রয়েছে এমন জায়গায়, যেখানে যেতে হলে নৌকো চড়তে হবে? জানেন কি, এই দেশেই রয়েছে এমন একটি ডাকঘর?
জলের উপর নাকি ভাসছে আস্ত একটা ডাকঘর। গল্প নয় কিন্তু, সত্যিই। ভাবছেন তো, কোথায় গেলে দেখা পাওয়া যাবে এমন আশ্চর্য পোস্ট অফিসের?
ভূস্বর্গ কাশ্মীরের রাজধানী শ্রীনগরে রয়েছে এই আশ্চর্য পোস্ট অফিস। ছবির মতো বরফে ঢাকা পাহাড়ের মাঝে টলটলে ডাল লেক, আর সেই হ্রদেই এক বিরাট হাউসবোটের উপর দাঁড়িয়ে রয়েছে ডাকঘরটি। প্রথম দেখায় মনে হবে যেন কোনও শিকারা। ডাল লেকের বুকে যত্রতত্র শিকারার দেখা মেলে। ভূস্বর্গে বেড়াতে গেলে হাউসবোটে থাকার অভিজ্ঞতা সঞ্চয় করেন অধিকাংশ পর্যটকই। একেও তেমনই কোনও শিকারা বলেই ভ্রম হবে আপনার। কিন্তু যদি মন দিয়ে দেখেন, অমনি আপনার চোখে পড়বে বাড়ির মাথায় সগৌরবে উপস্থিত ভারতীয় ডাক বিভাগের লাল হলুদ লোগো। আর তার সঙ্গেই আপনি দেখতে পাবেন একটি বোর্ড, যেখানে লেখা রয়েছে ‘ফ্লোটিং পোস্ট অফিস, ডাল লেক’।
আরও শুনুন: স্টেশন একটাই, অথচ ট্রেন দাঁড়ায় দুই রাজ্যে! জানেন আজব স্টেশনের কথা?
বয়সের দিক দিয়ে এই পোস্ট অফিসটি কিন্তু খুব বেশি পুরনো নয়। ২০১১ সালে এই ডাকঘরের উদ্বোধন করেন জম্মু এবং কাশ্মীরের তৎকালীন মুখ্যমন্ত্রী ওমর আবদুল্লা এবং সে রাজ্যের তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রী সচিন পাইলট। চিঠি পাঠানোর পাশাপাশি যোগাযোগের অন্যান্য সুবিধাও আছে এই পোস্ট অফিসে। এখান থেকে আইএসডি অর্থাৎ ইন্টারন্যাশনাল ফোন কল করা যায়। রয়েছে ইন্টারনেট পরিষেবাও। পোস্ট অফিসের লাগোয়া একটি স্ট্যাম্প মিউজিয়ামও রয়েছে। যেখানে গেলে বিচিত্র এবং অভিনব সব ডাকটিকিটের একটা বড়সড় সংগ্রহ দেখা যায়। রয়েছে স্যুভেনির শপ তথা স্মরণিকা। এই দোকান থেকে চাইলে পোস্টকার্ড, স্ট্যাম্প, গ্রিটিংস কার্ড এবং স্থানীয় স্মারকও কিনে নেওয়া যায়।
আরও শুনুন: স্ত্রীকে অভিনব উপহার, নিজেই ঘুরন্ত বাড়ি বানালেন বসনিয়ার এই ৭২ বছরের অধিবাসী
কেবল ভারত নয়, সারা বিশ্বেই এই একটিমাত্র ভাসমান ডাকঘর দেখতে পাওয়া যায়। আর সেই কারণেই এই পোস্ট অফিস হয়ে উঠেছে এক অভিনব স্থাপত্য। এমন একমাত্র নিদর্শন হওয়ার জন্যই সম্প্রতি কাশ্মীরের পর্যটকদের সাইট সিয়িংয়ের তালিকায় জুড়ে গিয়েছে এই পোস্ট অফিস। আর কেবল ঘুরে দেখেই ক্ষান্ত হন না তাঁরা। বিশ্বের একমাত্র ভাসমান ডাকঘর থেকে প্রিয়জনদের কাছে চিঠি না পাঠালে কি চলে! বিশেষত যে চিঠিতে ডাকটিকিটের ছবিটি বয়ে আনে টলটলে ডাল লেকের স্মৃতি। কাশ্মীর ভ্রমণের এর চেয়ে ভাল স্মারক আর কী হতে পারে!