এত সচেতনতা, এত প্রচার সত্ত্বেও আজও সভ্যতার পরতে পরতে লুকিয়ে কুসংস্কারের অন্ধকার। কালো জাদু, তুকতাকের মতো অন্ধ প্রথা আজও পালিত হয় দেশের আনাচেকানাচে। আর তা ডেকে আনে ভয়াবহ বিপদও। আর তেমনই একটি ঘটনার সাক্ষী রইল উত্তরপ্রদেশ। মেয়ের প্রাণ ফেরাতে ভয়াবহ পদক্ষেপ করলেন পরিবারের মানুষ। কী করেছিলেন তাঁরা? আসুন, শুনে নেওয়া যাক।
দিন চারেক আগেই মৃত্যু হয়েছিল বছর চোদ্দোর মেয়েটির। তবে সেই মৃত্যু মানতে পারেননি পরিবারের লোকেরা। শোকে বিহ্বল পরিবার তাঁর শেষকৃত্যের ব্যবস্থাটুকও করেননি। বরং অলীক বিশ্বাসে সেই দেহ রেখে দিয়েছিলেন বাড়িতেই। তন্ত্রমন্ত্র, তুকতাকের মাধ্যমে ফের সেই দেহে প্রাণ সঞ্চারিত হবে, এমনই ছিল বিশ্বাস।
তবে তার জন্য অভুক্ত থেকে করতে হবে বিরাট পুজোআচ্চা। আর সেই বিশ্বাসের বশবর্তী হয়েই বড় বিপদ ডেকে আনলেন তাঁরা। খুব দূরে নয়, সম্প্রতি এমন ঘটনা ঘটেছে উত্তরপ্রদেশের প্রয়াগরাজের কারচান্না গ্রামে। পেশায় কৃষক অভয়রাজ যাদব। দিন কয়েক ধরেই একটা বিকট গন্ধ পাচ্ছিলেন প্রতিবেশীরা। সন্দেহ হওয়ায় তাঁরা খবর দেন পুলিশে। পুলিশ এসে অভয়রাজের দরজা ভেঙে যা দেখলেন, তাতে বিস্ময়ের শেষ রইল না।
আরও শুনুন: তন্ত্রমন্ত্রের জের! সৌভাগ্য ফেরাতে ৪ বছরের মেয়ের মুখে সিঁদুর ঠেসে খুন করল বাবা
মাটিতে শোয়ানো রয়েছে ১৪ বছরের ওই কিশোরীর মৃতদেহ। সেই দেহ ততদিনে পচতে শুরু করেছে। বিকট গন্ধ আসছে ওই দেহ থেকেই। আর সেই মৃতদেহের ঠিক পাশেই পড়ে রয়েছে আরও চারটি শিশু। তাঁরা সকলেই ওই মৃত কিশোরীর ভাইবোন বলে জানতে পেরেছে পুলিশ। তাঁদের উদ্ধার করে পাঠানো হয় প্রয়াগরাজের একটি সরকারি হাসপাতালে। তাঁদের অবস্থা গুরুতর বলে হাসপাতাল সূত্রের খবর। মৃতদেহটিকেও পাঠানো হয় ময়নাতদন্তের জন্য।
অভয়রাজ ও তাঁর বাড়ির লোককে জিজ্ঞাসাবাদের পরে পুলিশ জানতে পেরেছে, শারীরিক অসুস্থতার কারণেই মারা গিয়েছিল বছর চোদ্দোর ওই কিশোরী। তবে সে কথা মানতে পারেননি অভয়রাজের পরিবার। তন্ত্রমন্ত্রের ফলে ওই মৃতদেহে ফের প্রাণ সঞ্চারের আশায় দিন চারেক ধরে কোনও খাবারই মুখে তোলেননি তাঁরা। শুধু নদী থেকে আনা জল খেয়েই এই গোটা সময় ছিলেন তাঁরা। তবে টানা না খেয়ে থাকার কারণে অসুস্থ এবং নিথর হয়ে পড়েছিল চার শিশু।
আরও শুনুন: ডাইনি অপবাদ থেকে পদ্ম সম্মান, অন্ধকারে আলো হয়ে জ্বলে ওঠার গল্প শোনান ছুটনি মাহাতো
অভয়রাজের প্রতিবেশী ও আত্মীয়দের সঙ্গে কথা বলে আরও বেশ কয়েকটি কথা জানতে পেরেছে পুলিশ। অভয়রাজের বিবাহিত তিন মেয়ের মধ্যে একটি মেয়ে নাকি তাঁদের সঙ্গেই থাকত। তবে আত্মীয়-পরিজন, কারও সঙ্গেই তেমন সম্পর্ক রাখতে চাইতেন না অভয়রাজের পরিবার। দেখা করতে এলে তাঁদের দিকে ইঁটও ছুঁড়ত ওই পরিবারটি। এমনকী অন্য তিন মেয়ের সঙ্গেও বিশেষ সম্পর্ক রাখতেন না তাঁরা। প্রতিবেশীরাও জানিয়েছেন, প্রায়শই ভূত-প্রেত-ডাইনি এসব নিয়ে কথা বলত অভয়রাজরা। এমনকি বেশ কয়েকবার চাষের খেতে তাঁরা অশরীরির দেখা পেয়েছেন বলেও দাবি করেছিলেন ওই কৃষক। কালো জাদু, তন্ত্রমন্ত্রেও বিশ্বাস করতেন তাঁরা। তবে তাঁদের সঙ্গে কোনও তান্ত্রিকের যোগের প্রমাণ পায়নি পুলিশ। ঘটনাস্থল থেকে অবশ্য বেশ কিছু পোড়া জিনিসপত্র উদ্ধার হয়েছে। এই ঘটনায় একটি এফআইআরও দায়ের হয়েছে ইতিমধ্যেই। তবে পাড়া-প্রতিবেশী ও আত্মীয়স্বজনের সঙ্গে কথা বলার পরে ওই পরিবারটির মানসিক স্থিতির সমস্যা রয়েছে বলেই অনুমান পুলিশের।
একবিংশ শতাব্দীতে দাঁড়িয়ে আজও যেভাবে কুসংস্কার ও অন্ধবিশ্বাস গাঢ় হয়ে রয়েছে সমাজের অন্দরে, তা ভাবলে অবাক হতে হয়। কবে এর থেকে রেহাই মিলবে, সেই প্রশ্নের উত্তর কিন্তু আজও অধরা।