ট্রেনের কামরায় একটি সিট মহাদেবের জন্য। ফুল মালা দিয়ে সাজানো সেই জায়গা দেখলে বোঝার উপায় নেই দৃশ্যটি ট্রেনের ভিতরের। অথচ এমনটা সত্যিই করা হয়েছিল ভারতীয় রেলের তরফে। কোন ট্রেনে হয়েছিল এমন ব্যবস্থা? আসুন শুনে নিই।
ট্রেনে চড়ে তীর্থভ্রমণে বেরিয়েছেন। আর উঠেই দেখলেন একটা সিটে স্বয়ং মহাদেবের ছবি রাখা। কেউ যে ভুল করে রেখে গিয়েছে, তা নয়। কারণ ওই নির্দিষ্ট সিটটি বেশ সিন্দর করেই সাজানো। সেখানে ফুল,মালা সহ আরও কিছু পূজা সামগ্রী রাখা। আসলে, ওই সিট সংরক্ষিত স্বয়ং মহাকালের জন্যই। ভক্তদের সঙ্গে তিনিও যেন ওই ট্রেনেই সফর করছেন।
আরও শুনুন: ধরনা দিলেই আদায় হবে দাবি, রামায়ণ থেকেই কি জন্ম আন্দোলনের এই রীতির?
আমাদের দেশে মন্দিরের সংখ্যা নেহাতই কম নয়। তার মধ্যে শিবমন্দিরের সংখ্যাই যে সবথেকে বেশি, তা বলাই বাহুল্য। তবে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা শিবমন্দিরগুলির মধ্যে চোখে পড়ার মতো ভিড় দেখা যায় কয়েকটি মন্দিরেই। মূলত দ্বাদশ জ্যোতির্লিঙ্গে সারা বছর শিব ভক্তদের ভিড় থাকে। দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে ভক্তরা এইসব মন্দিরে পুজো দিতে আসেন। তাই রেলের তরফে এই জ্যোতির্লিঙ্গ দর্শনের জন্য বিশেষ কিছু ট্রেনের ব্যবস্থা রয়েছে। এমনই এক ট্রেন হল মহাকাল এক্সপ্রেস। তিনটি জ্যোতির্লিঙ্গ দর্শন করা যায় এই ট্রেনে সফর করলে। ট্রেনটির যাত্রাপথ বারানসী থেকে ইন্দোর অবধি। এই দুই শহরের মধ্যেই, রয়েছেন বিশ্বেশ্বর, ওমকারেশ্বর এবং মহাকাল। ভক্তরা যাতে একই সফরে তিনটি জ্যোতির্লিঙ্গ ঘুরে ফেলতে পারেন, সেই উদ্দেশ্য নিয়েই এই বিশেষ ট্রেন চালু হয়। আর সেখানেই মহাদেবের জন্য সংরক্ষিত একটি সিট। প্রায় বছর তিনেক আগে ট্রেনটির উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। ট্রেনটি বিশেষভাবে তীর্থযাত্রীদের কথা মাথায় রেখেই তৈরি। ভিতররের সাজসজ্জা দেখলে সেই ভাব স্পষ্ট বোঝা যায়। তখনই প্রকাশ্যে আসে কিছু ছবি। যা দেখার পর রীতিমতো শোরগোল শুরু হয় শিবভক্তদের মধ্যে। সেখানে দেখা যাচ্ছিল, একটি সিট লাল রঙের কাপড় দিয়ে মোড়া। সেখানেই বসানো রয়েছে মহাদেবের ছবি। সামনে ফুল ছড়ানো, আর সেইসঙ্গে রয়েছে একটি মালা। শুধু মহাদেব নন, ওই সিটে আরও কিছু দেবদেবীর ছবি রয়েছে। সেই বিশেষ সিটের সামনে দাঁড়িয়ে ভক্তিভরে প্রণাম করছেন কালো কোট পরা এক রেল আধিকারিক। যার ফলে আরও স্পষ্টভাবে সকলে ধরে নেন, রেলের তরফে সত্যিই মহাদেবের জন্য সিটের ব্যবস্থা করা হয়েছে। রেল সূত্রে আরও জানা যায়, এই বিশেষ এটি মহাকাল এক্সপ্রেসের বি ৫ কামরার ৬৪ নম্বর সিট।
আরও শুনুন: ফুল, ফল বা মিষ্টি নয়! এই মন্দিরে পুজো দেওয়া হয় জ্যান্ত কাঁকড়া দিয়ে
প্রাথমিকভাবে এই ছবি দেখে শিবভক্তরা বেজায় খুশি হন। তবে সেইসঙ্গে উঠতে থাকে কিছু প্রশ্নও। যেহেতু ট্রেন সফরে অনেকেই আমিষ খাবার খান, তাই সেই নিয়েই সবার আগে প্রশ্ন ওঠে। এছাড়া কেউ তো জুতো খুলে ট্রেন সফর করেন না, তাই ট্রেনের ভিতর মহাদেবের ছবি থাকলে অনেকেই অস্বস্তিতে পড়তে পারেন। এছাড়া, এই ট্রেনে কোনও রজঃস্বলা মহিলা সফর করতে পারবেন কি না, সেই নিয়েও প্রশ্ন তোলেন অনেকেই। সব মিলিয়ে বিষয়টি নিয়ে জোর চর্চা শুরু হয় বিভিন মহলে। এর পরই আসল সত্যিটা প্রকাশ করে ভারতীয় রেল। তাঁদের কথায়, এমন কিছুই করা হচ্ছে না। তবে ওই ছবিটি মিথ্যে নয়। বিশেষ ট্রেনেটির যাত্রা সফল হওয়ার কামনায় একটি সিট ওইভাবে সাজিয়েছিলেন রেলকর্মীরা। ট্রেনটি পরীক্ষামূলক ভাবে চলার আগে সেখানে প্রার্থনা করেছিলেন রেলের আধিকারিকরাও। সেই ছবিই ভাইরাল হয়েছে নেটদুনিয়ায়। তবে অনেকেই মনে করেন, এমনটা স্রেফ বিষয়টি আড়াল করার জন্য ঘোষণা করেছিল রেল। প্রাথমিকভাবে তাঁরা যে এই উদ্যোগের কথা ভাবেননি তা নয়। কিন্তু একাধিক প্রশ্নের মুখে পরে নিজেদের সিদ্ধান্ত বদলাতে বাধ্য হয় ভারতীয় রেল। যদিও ভক্তদের দাবি ট্রেনের মধ্যে আলাদা ভাবে সিট না থাকলেও মহাদেব সবসময় তাঁদের সঙ্গে থাকেন। আর যে ট্রেন মহাদেবের স্থানে যাত্রীদের পৌঁছে দিচ্ছে তা মহাকালের আশীর্বাদ ধন্য হবে, তা বলাই বাহুল্য।