তাঁর জন্ম ১৮৩২ সালে। প্রায় দু শতাব্দীর দোরগোড়ায় দাঁড়িয়ে। এখনও তিনি আছেন বহাল তবিয়তে। প্রথম পোস্টাল স্ট্যাম্প, স্কাই স্ক্র্যাপার, আইফেল টাওয়ারের গড়ে ওঠা সবই তিনি দেখেছেন। নাম তাঁর জনাথন। পৃথিবীর সবচেয়ে বয়স্ক বাসিন্দা।
করোনা ভাইরাসের দাপটে গোটা পৃথিবী থরিহরিকম্প। তিনি কিন্তু এসবের পরোয়া অবধি করেন না তিনি। আছেন দিব্যি খোশমেজাজে।
বয়স বেশি নয়। এই অক্টোবরেই তিনি ছুঁয়েছেন ১৮৮ বছর। দুশোতে পৌঁছতে কয়েক বছর মাত্র। তিনি দেখেছেন দু-দুটো বিশ্বযুদ্ধ। দেখেছেন, রাশিয়ায় বিপ্লব পরিস্থিতি। পেরিয়েছেন আমেরিকার ঊনচল্লিশটা প্রেসিডেন্ট নির্বাচন।
নাম তাঁর জনাথন। তিনি এক শতাব্দী-প্রাচীন কচ্ছপ। তাঁর জন্ম ১৮৩২ সালে। এই মুহূর্তে তিনিই বিশ্বের সবচেয়ে বয়স্ক জীবিত প্রাণী। এর আগে এই রেকর্ডের অধিকারি ছিলেন, অন্য একটি কচ্ছপই। নাম তাঁর, টুই মালিলা। টোঙ্গার একটি রাজপরিবারে প্রতিপালিত হয়েছিলেন তিনি। তাঁকে উপহার দিয়েছিলেন প্রবাদপ্রতিম ব্রিটিশ অভিযাত্রী জেমস কুক। সালটা ছিল ১৭৭৭। সেটাই ছিল কুক সাহেবের শেষ সমুদ্র যাত্রা। মালিলা নামের কচ্ছপটি সেই সতেরো শতক থেকে দিব্যি ছিলেন ১৯৬৫ পর্যন্ত।
আরও শুনুন – থর মরুভূমির বুকে স্কুল, অথচ নেই কোনও Air Conditioner!
প্রতিযোগিতায় জোনাথনও অবশ্য কম যান না। ইতিহাসের কত গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায় যে তিনি পেরিয়েছেন অবলীলায়, তার ইয়াত্তা নেই। প্রথম পোস্টাল স্ট্যাম্প, প্রথম স্কাই স্ক্র্যাপার, এমনকি আইফেল টাওয়ারের গড়ে ওঠা সবই তার জীবদ্দশার শুরুতেই তিনি পেরিয়েছেন।
সাধারণত কচ্ছপের গড় আয়ু হয় একটু বেশিই। কিন্তু পৃথিবীতে সবচেয়ে বেশিদিন বেঁচেছিলেন যে মানুষ, তাঁরও আয়ু ছিল একশ বাইশ বছর। এই রেকর্ডের মালিক ফ্রান্সের এক মানুষ। নাম তাঁর, জ্যঁ ক্ল্যামেন্ট। জোনাথন তাঁকে টেক্কা দিয়ে আরও পঁয়ষট্টি বছর বেশি বেঁচে নিয়েছেন।
ভারত মহাসাগরের ছোট্ট দ্বীপ স্যেচেলেস-এ জন্ম জনাথনের। দক্ষিণ আটলান্টিকের সেন্ট হেলেনা দ্বীপে তিনি বসবাস করছেন সেই ১৮৮২ সাল থেকে।
আরও শুনুন – যেমন Breast তেমন Tax, প্রথার নামে দেশের মেয়েদের সইতে হত যৌন হেনস্তাও
ইতিহাসে এবং পর্যটকদের কাছে অন্য মাহাত্ম্য রয়েছে সেন্ট হেলেনা দ্বীপের। এখানেই চিরঘুমে শায়িত রয়েছেন নেপোলিয়ন বোনাপার্ট। ওয়াটারলু যুদ্ধে হেরে, তিনি পেয়েছিলেন নির্বাসন দণ্ড। যদিও নির্বাসিত সম্রাটের সঙ্গে জনাথনের দেখা হয়নি।
জনাথনের জন্মের প্রায় পঞ্চাশ বছর পর, এই দ্বীপে তাঁর আগমন। এই দ্বীপ তখন ছিল ব্রিটিশদের উপনিবেশ। এখানের রাজ্যপালকে উপহার স্বরূপ দেওয়া হয়েছিল জনাথনকে। ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির তৎকালীন গভর্নর হৌসে জায়গা হয়েছিল তার। সেখানে আগে থেকেই ছিল অন্য তিন স্বগোত্রীয়। ডেভিড, এম্মা আর ফ্রেড।
আরও শুনুন – Hilsa: ইলিশ মাছকে নাকি সেকালে ভাব হত ‘নিরামিষ’! কেন জানেন?
শুরুর দিকে জনাথনকে আলাদা করে চেনা-জানার বিশেষ সুযোগ ছিল না। তাকে দেখা হত জনৈক আলডাবরা প্রজাতির কচ্ছপ হিসেবেই। কিন্তু পরে নানা পরীক্ষায় দেখা যায়, তিনি স্যেচেলেস দ্বীপের বেশ বিরল প্রজাতির বিশালাকায় কচ্ছপ প্রজাতির অন্তর্ভুক্ত। এই ধরনের কচ্ছপ ক্রমেই পৃথিবী থেকে বিলুপ্ত হচ্ছে। পৃথিবীতে মাত্র আশিটি এই জাতীয় কচ্ছপের সন্ধান পাওয়া যায়। এই প্রজাতির কচ্ছপদের গড় আয়ু অন্তত দেড়শ বছর।
বাকিটা শুনে নিন প্লে-বাটন ক্লিক করে।