রাম মন্দির তৈরি না হলে কথাই বলবেন না। অযোধ্যায় বাবরি কাণ্ডের পর এমনই পণ করেছিলেন। তারপর কেটেছে দীর্ঘ ৩০ বছর। এতদিন মৌন হয়েই কাটিয়েছেন বৃদ্ধা। অবশেষে তাঁর স্বপ্নপূরণ হচ্ছে। রামমন্দির উদ্বোধনের সঙ্গে সঙ্গে তিনিও মুখ খুলবেন। কার কথা বলছি? আসুন শুনে নিই।
আচ্ছা একটাও কথা না বলে কতক্ষণ থাকা যায়? বড়জোর কয়েক ঘণ্টা! তার বেশি চুপ করে থাকতে অনেকেরই বেশ অসুবিধা হবে। কিন্তু ঝাড়খন্ডের এক বৃদ্ধা দীর্ঘ ৩০ বছর কোনও কথাই বলেননি। কিছু বলার হলে ইশারায় বোঝান। খুব প্রয়োজন পড়লে লিখেও দেন। কিন্তু মুখ ফুটে কিচ্ছুটি বলেন না।
আরও শুনুন: শিল্পপতি না হয়েও রাম মন্দিরে কোটি কোটি টাকা দান, ধর্মগুরুর পরিচয় জানেন?
কথা বলছি, ঝাড়খণ্ডের সরস্বতী দেবী সম্পর্কে। বছর ৮৫-র এই বৃদ্ধা ছেলে-বউমার সঙ্গে থাকেন। স্বামী মারা গিয়েছেন বহু আগে। সংসারের প্রতি আর টান নেই তেমন। তাই মন প্রাণ সঁপেছেন রামের পায়ে। রামনাম করেই দিনের বেশিরভাগ সময়টা কাটান। একেবারে সাদামাটা জীবনে রাম ছাড়া আর কিছুই নেই বলা চলে। ভাবছেন তো, এমন রামভক্ত একটু খোঁজ করলেই মিলতে পারে! বিশেষ করে, বৃন্দাবন-মথুরার মতো তীর্থক্ষেত্রে এমন অনেককেই দেখা যাবে, যারা সংসারের মায়া কাটিয়ে ঈশ্বরের পায়ে নিজেদের সঁপেছেন। বলাই বাহুল্য, সরস্বতী দেবী স্রেফ এই রামভক্তির জন্য চর্চায় আসেননি। এসেছেন, বিশেষ এক প্রতিজ্ঞার কারণে। যদিও সেই প্রতিজ্ঞা রামকে কেন্দ্র করেই।
ঠিক কী পণ করেছিলেন তিনি?
আরও শুনুন: ‘রাম আয়েঙ্গে’, ভজন গেয়ে আদায় করলেন প্রধানমন্ত্রীর কুর্নিশ, কে এই গায়িকা?
১৯৯২ সালে বাবরি মসজিদ রাতারাতি উধাও হওয়ার পরই শুরু হয় রাম মন্দির আন্দোলন। আযোধ্যার ওই স্থানেই মন্দির হবে কিনা সেই নিয়ে দীর্ঘ লড়াই চলে। শেষমেশ সুপ্রিম রায়ে যাবতীয় বিতর্ক শেষ হয়। বিতর্কিত জমিতেই মন্দির তৈরির অনুমতি দেয় শীর্ষ আদালত। ২০২০ সালে মন্দিরের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করে রাম মন্দির নির্মাণের কাজ শুরু করেন প্রধানমন্ত্রী মোদি। তবে এর অনেক আগেই রাম মন্দির তৈরিকে সামনে রেখে বিশেষ প্রতিজ্ঞাটি করে ফেলেছেন সরস্বতী দেবী। মন্দির তৈরি না হওয়া অবধি কথাই বলবেন না এমনটাই সকলকে জানিয়ে দেন তিনি। তারপর থেকে দীর্ঘ ৩ দশক মৌন হয়েই কাটিয়েছেন তিনি। ২০২০ সাল অবধি দিনে এক ঘণ্টার জন্য মুখ খুলতেন। প্রতিদিন দুপুরে সকলের সঙ্গে অল্পবিস্তর কথা বলতেন সরস্বতী দেবী। কিন্তু গত ৩ বছর সেটুকুও বন্ধ করে দেন। স্থানীয়দের কাছে এর জন্য তাঁর বেশ পরিচিতি রয়েছে। অনেকেই তাঁকে মৌনি মাতা বলে সম্বোধন করেন। এতদিনে স্বপ্নপূরণ হচ্ছে তাঁর। তাই চুপ থাকার প্রতিজ্ঞাও ভঙ্গ করবেন ঝাড়ুখন্ডের এই ‘মৌনি মাতা’। জানা গিয়েছে, রাম মন্দির উদ্বোধনের দিনে তিনিও অযোধ্যায় উপস্থিত থাকবেন। সেখানেই মৌনব্রত ভাঙবেন। এর আগে, রাম মন্দির তৈরি না হলে বিয়ে করবেন না, এমন প্রতিজ্ঞার কথা শোনা গিয়েছিল। এবার জানা গেল, মন্দির তৈরি না হলে মৌনব্রত পালনের প্রতিজ্ঞাও।