নির্জন দ্বীপে ৩০ বছর কাটিয়ে দিয়েছেন একাই। না, রবিনসন ক্রুশো কিংবা সবুজ দ্বীপের রাজার গল্প বলছি না। ইনি কোনও গল্পের চরিত্র নন, বরং দিব্যি একজন জলজ্যান্ত মানুষ। আধুনিক পৃথিবীকে নাকচ করতে চান বলেই প্রকৃতির মাঝে প্রকৃতির সন্তান হয়ে এতগুলো দিন কাটিয়ে দিয়েছেন তিনি। তবে এতদিনের সেই বাসস্থানকে এবার বিদায় জানালেন ওই ব্যক্তি। শুনে নেওয়া যাক তাঁর কথা।
রবিনসন ক্রুশো-র মতো বাধ্যত কোনও নির্জন দ্বীপে এসে পড়েননি তিনি। বরং এ ছিল তাঁর সচেতন নির্বাচন। আধুনিক পৃথিবীর ক্রমশ পালটে যাওয়া রূপটাকে তিনি মেনে নিতে পারছিলেন না। আর সেই কারণেই, ৩০ বছর আগে শহর ছেড়ে একটি ছোট্ট জনবিরল দ্বীপে পাড়ি দেন ওই ব্যক্তি। সেখানেই প্রকৃতির কোলে এতগুলো দিন কাটিয়ে দিয়েছেন তিনি। নিজেও যেন হয়ে উঠেছিলেন প্রকৃতিরই এক অংশ। কোনও পোশাক পরতেন না তিনি। জীবনধারণের জন্য প্রাথমিক যেটুকু প্রয়োজন, তাও জুটিয়ে নিতেন প্রকৃতির থেকেই। তাই ‘নগ্ন সাধু’ বলেই তাঁকে চেনে সে দেশের মানুষ। এতদিন পরে অবশেষে সেই দ্বীপকে চিরবিদায় জানালেন ৮৭ বছরের মাসাফুমি নাগাসাকি।
আরও শুনুন: অফিসের ধর্মীয় প্রার্থনাসভায় যোগ দিতে নারাজ, দুই কর্মীকে বরখাস্ত করল সংস্থা
জাপানের অধিবাসী নাগাসাকি যখন সভ্য জগৎ ছেড়ে দূরে চলে যাওয়ার পরিকল্পনা করেন, তখন তাঁর বয়স পঞ্চাশের কাছাকাছি। সেটা ১৯৮৯ সাল। আধুনিক সভ্যতার যান্ত্রিক রূপটি তাঁকে ক্রমশ বীতশ্রদ্ধ করে তুলেছিল। শেষমেশ স্ত্রী আর দুই সন্তানকে ছেড়ে একাই এই জগতের বাইরে পা বাড়ান তিনি। আস্তানা বাঁধেন সোতোবানারি নামে একটি ছোট্ট দ্বীপে। মাত্র এক কিলোমিটার চওড়া দ্বীপটি ছিল জঙ্গলে ভরা। জনপ্রাণীর চিহ্নমাত্র ছিল না সেখানে। এহেন দ্বীপে একা থাকাটা যে খুব একটা সহজ কাজ ছিল না তা বলাই বাহুল্য। পরিশুদ্ধ জলের কোনও উৎস ছিল না ওই দ্বীপে। সহজ ছিল না খাবার জোগাড় করাও। একবার টাইফুনে জামাকাপড় ভেসে যাওয়ার পর থেকে নগ্ন হয়েই থাকতে শুরু করেন ওই ব্যক্তি।
আরও শুনুন: ঘরছাড়া করেছে যুদ্ধ, নির্জন দ্বীপের হরে কৃষ্ণ মন্দিরই এখন আশ্রয় ইউক্রেনের উদ্বাস্তুদের
২০১৮ সালে সমুদ্রতটে তাঁকে অচেতন অবস্থায় পড়ে থাকতে দেখেছিলেন এক স্থানীয় জেলে। খবর পেয়ে তাঁকে সেখান থেকে উদ্ধার করে তড়িঘড়ি চিকিৎসা শুরু হয়। সেই সময়েই বাইরের জগতের কাছে পৌঁছয় তাঁর খবর। ততদিনে বৃদ্ধের শরীর ভেঙে গিয়েছিল অনেকটাই। তাঁকে শহরে আনা হলেও সরকারের উদ্যোগে একটি নির্জন ঘরেই তাঁর থাকার বন্দোবস্ত করা হয়েছিল, যাতে তিনি আগের অভ্যাসমতো নগ্ন হয়ে থাকতে পারেন। তবে এতেও ধরে রাখা যায়নি নাগাসাকি-কে। সেই ‘সবুজ দ্বীপের রাজা’র মতোই যেন, শহরের ধুলো ধোঁয়া কিছুতেই সহ্য হচ্ছিল না তাঁর। তিনি রাস্তা থেকে আবর্জনা পরিষ্কার করার চেষ্টা করতেন, কিন্তু শহরের বাসিন্দাদের তৈরি করা ক্রমবর্ধমান দূষণে হাঁপিয়ে উঠছিলেন আরও। এর মধ্যেই বিশ্বজুড়ে ছড়িয়ে পড়ে মারণরোগ করোনা। অবশেষে সম্প্রতিই একবারের জন্য নিজের ফেলে যাওয়া দ্বীপে ফেরার অনুমতি মেলে বৃদ্ধের। এবার থেকে শহরের ঘেরাটোপেই বাস করতে হবে তাঁকে। তবে তার আগে নিজের এতদিনের জগৎকে শেষবারের মতো বিদায় জানানোর সুযোগ পেলেন নাগাসাকি।