চালু ধারণা, বাঙালরা খুব ঝালখোর। আর ঘটিদের সব রান্নায় মিষ্টির ছড়াছড়ি। রান্নায় কেউ যেমন ঝাল খুব ভালোবাসেন, তেমন অনেকেরই আবার ঝালে প্রবল আপত্তি। ঝাল খেয়ে ঝালাপালা হয়ে, নাকের জলে চোখের জলে হওয়া কিছু অস্বাভাবিক নয়। কিন্তু লঙ্কা খেলে কেন আমাদের ঝাল লাগে ভেবে দেখেছেন? জানেন লঙ্কা খাওয়া স্বাস্থ্যের খারাপ নাকি ভালো?
যাঁদের অভ্যেস নেই, লঙ্কা খেলেই, গাইতে হবে বাংলা ছবির সেই জনপ্রিয় গান, ‘ঝাল লেগেছে, আমার ঝাল লেগেছে, ঝালে মরে যাই আমি, ঝালে মরে যাই’। অনেকে এই জ্বালা সহ্য করতে পারেন, অনেকেই হু হা, নাকের জলে চোখের জলে একাকার। জল খেলে ঝাল তো কমে না। উলটে বেড়ে যায়।
অনেকেই আবার শখে যোগ দেন, লঙ্কা খাওয়ার প্রতিযোগিতায়। জানেন কি পৃথিবীর সবচেয়ে ঝাল লঙ্কার নাম? নাম তার ক্যারোলিনা রিপার। অনেকটা জ্যাক দ্য রিপারের মতোই। সে কঠিন আততায়ী। একবার খেলে আর রক্ষা নেই। সেই লঙ্কা খাওয়ারও হয় প্রতিযোগিতা। এইরকম এক প্রতিযোগিতায় অতিরিক্ত লঙ্কা খেয়ে প্রতিযোগীর মৃত্যুর ঘটনাও ঘটেছে। কোনও অজ্ঞাত কারণেই, শেষ কয়েক বছরে, পৃথিবীতে ঝাল খাওয়ার প্রবণতা বেড়েছে। এই বছর এই ব্যবসার পরিমাণ ২.৭১ বিলিয়ন ডলার, আগামী ছয় সাত বছরের মধ্যে সেটা বেড়ে হবে ৪.৩৮ বিলিয়ন ডলার।
আরও শুনুন: মাছ না ঢাকা যাক, শাক কিন্তু সারিয়ে দেয় হাজারও অসুখ
কিন্তু এত ঝাল খাওয়া কি আমাদের শরীরকে প্রভাবিত করে?
অতিরিক্ত ঝাল খেলে কিন্তু বিপদ রয়েছে। ঝাল খেলে সাধারণ যে প্রবণতাগুলো দেখা যায় সেগুলো, বমিভাব, চোখের যন্ত্রণা, ডায়রিয়া, তলপেটে চিনচিনে ব্যাথা, অ্যাসিড রিফ্ল্যাক্সের ফলে বুকে তীব্র জ্বালাভাব, চূড়ান্ত মাথাব্যাথা ইত্যাদি।
অনেকেরই ধারণা লঙ্কা খেলে আমাদের ভেতরের বেশ কিছু অংশ ঝলসে যায়। সে কারণেই অতিরিক্ত ঝাল লঙ্কা খেলে আমরা লক্ষ্য করি নানা ধরনের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া। যেমন প্রচণ্ড ঘাম হওয়া, যন্ত্রণা, মাথা দপদপ। এইগুলো আমাদের শরীরের লঙ্কার ঝাঁজ সহ্য করতে না পারার সহজাত প্রবণতা। কিন্তু এই আগুনে গরম ঝালে আমাদের শরীর আবার বেশ মজাও পায়। লঙ্কার ঝালের মধ্যে মূল যে উপাদান তার নাম ক্যাপসাইসিন। সেই ক্যাপসাইসিন আমাদের শরীরের মধ্যে গেলে তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়া হয়। ফলে আলাদা করে আমাদের দেহের কোষগুলিতে কোনও ক্ষতি বৃদ্ধি না হলেও। ক্যাপসাইসিন আমাদের স্বাদগ্রন্থিতে মিশে পাকস্থলির তাপমাত্রা বাড়ায় এবং মস্তিষ্ককে দেয় ঝালের সংকেত।
আরও শুনুন: কোনও স্মৃতিই ভুলতে দেয় না Internet, কী সমস্যা হতে পারে এতে?
দেখবেন পাখিরা বিশেষত বাড়িতে পোষা টিয়া বা ময়না থাকলে সে সারাদিন মনের আনন্দে গুচ্ছ গুচ্ছ লঙ্কা চিবোচ্ছে। কারণ ক্যাপসাইসিন পাখিদের ওপর কোনও প্রভাব তৈরি করে না। এর প্রভাব শুধুমাত্র স্তন্যপায়ী প্রাণীদের ওপরই। মুখ বা পাচনতন্ত্রের মধ্যে এই উদ্দীপকের মাধ্যমে খানিক উত্তেজনা হয়। আমাদের মুখ এবং পাচনতন্ত্র থেকে বেশ কিছু রাসায়নিক পদার্থ নির্গত হয়। ফলে খানিক অস্বস্তির পর আবার সব কিছু বেশ শান্ত হয়ে যায়।
বাকিটা শুনে নিন প্লে-বাটন ক্লিক করে।