বয়স মাত্র ১০। অথচ স্মার্টফোনে আসক্তি নেই। পিজ্জা, বারগারও পছন্দ নয়। বন্ধুদের সঙ্গেও খেলতে যায় না। জীবনের ধ্যানজ্ঞান বলতে কৃষ্ণ। গোপাল বিগ্রহের সঙ্গেই সারাদিন কাটায় খুদে। তার ইশ্বরসাধনায় মশগুল নেটদুনিয়া। কার কথা বলছি? আসুন শুনে নেওয়া যাক।
স্মার্টফোন পছন্দ নয়, এমন কাউকে খুঁজে পাওয়া কঠিন। বলা ভালো, আট-আশি এর নেশায় সবাই বুঁদ। বিশেষ করে ছোটরা। গেম খেলা কিংবা ভিডিও দেখা, একবার শুরু করলে তাদের থামানো কঠিন। ব্যতিক্রম দিল্লির এই খুদে। তার পছন্দ-অপছন্দ সমবয়সীদের সঙ্গে কোনওভাবেই মেলে না।
গোলগাল চেহারা। কপালে তিলক। মুখে সবসময় হাসি লেগেই আছে। এমন এক খুদের ভিডিও বা রিল নেটদুনিয়ায় হামেশাই চোখে পড়ে। কখনও বৃন্দাবনে কখনও জগন্নাথ ধামে কখনও আবার জনপ্রিয় কোনও কৃষ্ণ মন্দিরে দেখা মেলে তার। হয় ভজন গাইছে, নাহলে দুহাত তুলে বলছে ‘রাধে-রাধে’। কমেন্টবক্সে ভক্তির বন্যা। সকলেই খুদের প্রশংসায় পঞ্চমুখ। এই খুদের কথাই বলছি। নাম অভিনব আরোরা। তবে সোশাল মিডিয়া তাকে ‘বালসন্ত’ হিসেবেই চেনে। কেউ আবার তাকে ধর্মগুরুর আসনেও বসিয়েছেন। অবশ্য তার কারণ রয়েছে যথেষ্ট। এইটুকু বয়সেই যে শাস্ত্রীয় জ্ঞান অর্জন করেছে অভিনব তার তারিফ না করলে নয়। রামায়ণ থেকে গীতা, সবকিছুর ব্যখ্যা তার ঠোঁটের ডগায়। নিজের মতো করে সেই ব্যাখ্য অন্যদের শোনায় অভিনব। কখনও সঙ্গে জুড়ে দেয় কৃষ্ণ ভজন। কখনও আবার বিশেষ কথা প্রবচন। সেসবের ভিডিও নেটদুনিয়ায় প্রকাশ পেলেই হইচই পড়ে যায়। লাইক কমেন্টের ঝড় বয়ে যায় অভিনবের প্রোফাইলে। ইতিমধ্যেই, সোশাল দুনিয়ার চেনামুখ হয়ে উঠেছে এই খুদে। ঝুলিতে ভরেছে লাখ লাখ অনুরাগীর সমর্থন। তাতে রোজগারও মন্দ হচ্ছে না। তবে সেসব নিয়ে বিন্দুমাত্র ভাবনা নেই নেটিজেনদের। তাঁদের আলোচনার কেন্দ্রে স্রেফ ভক্তি আর অভিনবের বয়স। ওইটুকু বয়সেও এমন ভক্তির সাগরে নিজেকে ডুবিয়ে রাখা সম্ভব, তা অবাক করেছে সকলকে।
প্রথম থেকেই অবশ্য এমনটা ছিল না। বরং বছর তিনেক আগেও অভিনবের জীবনটা এক্কেবারে অন্যরকম ছিল। তথাকথিক স্মার্ট নয়। কাজেই বন্ধুমহলে পরিচিতি নেই। কেউ পছন্দ করে না তার পাশে বসতে। পড়াশোনাতেও তথৈবচ। স্রেফ ভগবানের প্রতি ভক্তি তার বরাবরের। মূলত কৃষ্ণের আরাধনা করত অভিনব। বাড়ির মন্দিরের দিনরাত ভগবানের সেবায় নিজেকে ডুবিয়ে রাখত। গোপালকে ছোট ভাইয়ের মতো খাওয়ানো, স্নান করানো এইসবই ছিল তার খেলার অঙ্গ। খেলার সাথীও সেই কৃষ্ণ। এতদিন অভিনবের এইসব আচরণ আলাদা করে আমল দিতেন না তার পরিবারের লোকজন। ঘটনাচক্রে একদিন অভিনবের এমন ভক্তির বহর ভিডিও করে সোশাল মিডিয়ায় পোস্ট করেন তার এক আত্মীয়। রাতারাতি বদলে যায় সবকিছু। ভিডিও দেখে আবেগে ভাসে নেটদুনিয়া। অভিনবকে দেখেই কৃষ্ণ প্রেম উথলে ওঠে সবার। সেই প্রেম এখনও এতটুকু কমেনি। নিজের থেকে না হোক, অভিনবকে দেখলে নেটিজেনরা যেন ধাত তুলে বলে ওঠেন রাধে রাধে! অন্তত তাঁদের কমেন্ট দেখে এমনটাই মনে হয়। সোশাল মিডিয়াই দায়িত্ব নিয়ে জনপ্রিয় করেছে অভিনবকে। সেইসঙ্গে বৃন্দাবন মন্দির সহ দেশের বিভিন্ন প্রান্তে থাকা কৃষ্ণ মন্দির কর্তৃপক্ষ আলাদা ভাবে আপ্যায়ন করে এই খুদের। তার জেরে এমন অনেক কিছুই সে করতে পারে, যা সাধারণের আয়ত্বের বাইরে। বাঁকে বিহারী মন্দিরে অনায়াসে ঢুকে যাওয়া, কিংবা এইধরনের জায়গায় দাঁড়িয়ে ভজন শোনানো, এইসব ভিডিও অভিনবের চ্যানেলে প্রকাশিত হয়। তাতেই বাড়ে লাইক, ভিউ, কমেন্ট। স্কুলেও বর্তমানে বেশ জনপ্রিয় অভিনব। বন্ধুরাই নাকি নিজে থেকে তার পাশে বসতে চায়। শিক্ষকরাও বেশ পছন্দ করেন অভিনবের এই ভক্তিমূলক আচরণ। ফাঁকা সময় পেলেই অভিনবের ভজন শুনতে চলে আসেন তাঁরা। এখানেই শেষ নয়, প্রশাসনের তরফেও স্বীকৃতি পেয়েছে অভিনব। মন্ত্রী নিতিন গদকারি নিজে থেকে অভিনবের প্রশংসা করেছেন। দিয়েছেন পুরস্কারও। তবে জীবনের সবে শুরু। আগামীতে লম্বা সফর বাকি। সেখানেও একইভাবে কৃষ্ণ প্রেমে মজে থাকতে চান অভিনব। তার কথা শুনে বয়স বোঝার উপায় নেই। সুতরাং ভক্তির পথে নিজেকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার ঘোষণাও তার নিজেরই। এবং জগতের সব মোহ কাটিয়ে কৃষ্ণের পায়েই নিজেকে সমর্পন করতে চেয়েছেন দিল্লির বালসন্ত।