লেট করা ট্রেনের জন্মগত অধিকার। তা বলে ৪২ ঘণ্টার পথ পাড়ি দিতে বেমালুম চার বছর কাটিয়ে দেবে সে? হ্যাঁ, তেমনই রেকর্ডের দাবিদার ভারতীয় রেল। কী ঘটেছিল ঠিক? আসুন, শুনে নেওয়া যাক।
ভারতীয় রেল যাত্রী সুরক্ষা কিংবা পরিকাঠামোর বিষয়গুলি গুছিয়ে উঠতে পারুক বা না পারুক, একটি ব্যাপারে সে কিন্তু ধারাবাহিকভাবে সফল। তা হল, দেরি করায়। দেরি করা নিয়ে ভারতীয়দের এমনিতেই বিশেষ সুনাম নেই। ভোট দেওয়ার অধিকার মিলতে তার দেরি হতে পারে, তবে লেট করা তার জন্মগত অধিকার। আর সেই অধিকারের ম্যাসকট হওয়ার দাবি অনায়াসেই করতে পারে ভারতীয় রেল। নিজেদের ম্যাসকট হাতির মতোই গজগমনে চলতে সে ভালোইবাসে। তবে নিয়মিত লেট করার রুটিনকে ছাপিয়ে সেরার রেকর্ড গড়েছিল এই বিশেষ ট্রেনটি। ৪২ ঘণ্টার পথ পেরোতে তার সময় লেগেছিল গুনে গুনে চারটি বছর।
আরও শুনুন:
বেসরকারি হলে পরিষেবা ভালো হবে! রেলের পুরনো আমলেও কি এ কথাই ভেবেছিল ভারত?
লোকাল ট্রেন হোক কি দূরপাল্লার রেলগাড়ি, একেবারে ঘড়ির কাঁটা মেনে সে ছাড়বে বা পৌঁছবে, এমনটা হয় না বললেই চলে। দূরের ট্রেনের ক্ষেত্রে ৫-৬ ঘণ্টার দেরিও আমরা সয়েই নিয়েছি। কিন্তু এই ট্রেনটি ২০১৪ সালের নভেম্বর মাসে যখন বিশাখাপত্তনম থেকে যাত্রা শুরু করেছিল, তখন কেউই আশা করেননি যে সেই আনুমানিক দেরি কোথায় গিয়ে পৌঁছবে। ট্রেনটি অবশ্য যাত্রীবাহী ছিল না, ছিল মালবাহী গাড়ি। ১৩৬১টি সারের বস্তা নিয়ে ট্রেনটি যাত্রা শুরু করেছিল, যার মোট দাম ছিল প্রায় ১৪ লক্ষ টাকা। ১৪০০ কিলোমিটার পথ পাড়ি দিয়ে উত্তরপ্রদেশের বস্তি রেলস্টেশনে পৌঁছনোর কথা ছিল ট্রেনটির। মোটামুটি ৪২ ঘণ্টার মধ্যে ট্রেনের গন্তব্যে পৌঁছে যাওয়ার কথা।
ওই সারের বস্তাগুলি পরিবহণের জন্য পণ্যবাহী ট্রেনটি বুক করেছিলেন ব্যবসায়ী রামচন্দ্র গুপ্তা। ট্রেনটি ঠিক সময়ে না এসে পৌঁছনোয় তিনি রেলওয়ে দপ্তরে যোগাযোগ করেন, কিন্তু সেখানেও কোনও সদুত্তর মেলেনি। একাধিকবার তিনি লিখিত অভিযোগ জানান, কিন্তু কিছুতেই কিছু হয়নি। না ট্রেন এসে পৌঁছেছে, না সারের বস্তার খোঁজ পেয়েছেন তিনি।
আরও শুনুন:
রেল দুর্ঘটনা থেকে মুক্তি পেতে অপেক্ষা করতে হবে ২২৭ বছর! কিন্তু কেন?
শেষ পর্যন্ত ২০১৮ সালের জুলাই মাসে, প্রায় বছর চারেক পর ট্রেনটি তার গন্তব্যে এসে পৌঁছয়। কিন্তু ট্রেনটি কীভাবে, কেন, কোথায় উধাও হয়ে গিয়েছিল, তার উত্তর জানা যায়নি। এতদিন পড়ে থাকার দরুন ওই ১৪ লক্ষ টাকার সারও বাতিল হয়ে যায়। ভারতীয় রেলের ইতিহাসে সবচেয়ে লেটের রেকর্ড দখল করেছে এই ট্রেনটিই। তবে তার আচমকা উধাও হয়ে যাওয়ার রহস্য, রহস্য হয়েই থেকে গিয়েছে।