ওষুধ না খেলে রোগভোগের হাত থেকে রেহাই নেই। এদিকে সেই ওষুধই নাকি পরোক্ষভাবে বাড়িয়ে দিচ্ছে রোগের সম্ভাবনা। ঠেলে দিচ্ছে ভয়াবহ অসুস্থতার দিকে। কীভাবে? আসুন, শুনে নেওয়া যাক।
এই সময়ে দাঁড়িয়ে পৃথিবীর সবচেয়ে বড় অসুখের নাম বোধহয় দূষণ। জলে স্থলে বায়ুতে আকাশে, সর্বত্রই প্রায় সর্বশক্তিমানের মতো সে বিরাজমান। আর পরিবেশ দূষণ বর্তমান পৃথিবীতে এমনই গুরুতর এক সমস্যার রূপ নিয়েছে যে তাকে সম্পূর্ণ দূর করার পথও পাওয়া যাচ্ছে না। উলটে বিবিধ পথ ধরে নিজের আধিপত্য কায়েম করেই চলেছে সে। এবার তেমনই এক নতুন দূষণের হদিশ পেলেন বিজ্ঞানীরা। আর সেই দূষণের কারণ কী, তা জানলে অবাক হবেন আপনিও। বিভিন্ন অসুখ সারায় যেসব অ্যান্টিবায়োটিক, যাদের বলা হয় ‘লাইফ সেভিং মেডিসিন’, তারাই নাকি দায়ী এই নতুন রকমের দূষণের জন্য। কীভাবে? তাহলে খুলেই বলা যাক।
আরও শুনুন: মিষ্টি নয়, এককালে ওষুধ হিসাবেই ব্যবহারের চল ছিল লাড্ডুর
জলদূষণের বাড়বাড়ন্ত নিয়ে পরিবেশবিজ্ঞানীরা দীর্ঘদিন ধরেই চিন্তায় পড়েছেন। সভ্যতার সঙ্গে সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বেড়েছে কলকারখানা। তাদের বর্জ্য নদীতে মিশে যে কী ভয়ংকর দূষণের সৃষ্টি করে, সে কথা আজ আর অজানা নয়। তার সঙ্গে তাল মিলিয়ে নদীতে মেশে নাগরিক সভ্যতার বর্জ্য। তাদের মতো চিহ্নিত বর্জ্য পদার্থ না হলেও, একইভাবে জলে মিশে দূষণ বাড়াচ্ছে বিভিন্ন প্রাণদায়ী ওষুধ, এমনটাই জানাচ্ছেন বিজ্ঞানীরা।
‘মেনাস অফ অ্যান্টিবায়োটিক পলিউশন ইন ইন্ডিয়ান রিভারস’ শিরোনামে একটি গবেষণাপত্রে সম্প্রতি সেই তথ্যই প্রকাশ করেছেন তাঁরা। অ্যান্টিবায়োটিকের দরুন ভারতের বিভিন্ন নদীতে কীভাবে হানা দিয়েছে দূষণ, জানিয়েছেন সে কথা। নয়াদিল্লির যমুনা, লখনউয়ের গোমতী, গোয়ার জুয়ারি এবং চেন্নাইয়ের কোউম, দেশের চারটি বড় বড় শহরের চারটি প্রধান নদী থেকে নমুনা সংগ্রহ করেছিলেন তাঁরা। আর সেই নমুনা থেকেই অফ্লোক্সাসিন, নরফ্লোক্সাসিন, সালফামেথক্সাজোল-এর মতো একাধিক অ্যান্টিবায়োটিকের হদিশ পাওয়া গিয়েছে। এবং তার পরিমাণ নিরাপদ মাত্রার চেয়ে অন্তত দুই থেকে পাঁচ গুণ বেশি।
আরও শুনুন: Gin and Tonic: ম্যালেরিয়ার ওষুধ থেকে তৈরি হল জনপ্রিয় ককটেল
আসলে ওষুধের অবশিষ্ট অংশ জলে মিশেই এই বিপত্তি। অথচ যেসব জায়গায় এই জাতীয় অ্যান্টিবায়োটিকের হদিশ মিলেছে, তার কাছাকাছি সবসময় বড়সড় ফার্মা কারখানাও নেই। বিজ্ঞানীদের মতে, নদীতে মেশার আগে বর্জ্য পদার্থের যথাযথ ব্যবস্থা না নেওয়ার কারণেই এই সমস্যার উৎপত্তি। পরিবেশের স্বাভাবিক বাস্তুতন্ত্রে রীতিমতো প্রভাব ফেলবে এই দূষণ, এমনটাই জানাচ্ছেন তাঁরা। এই ঘটনা হয়তো এ কথাও বুঝিয়ে দিচ্ছে যে, বিজ্ঞান আদতে এক দু-মুখো তরবারির মতো, যার একদিকে রয়েছে উজাড় করা আশীর্বাদ আর অন্যদিকে লেগে আছে ভয়াবহ অভিশাপের ছোঁয়া।