শখ করে রেস্তরাঁয় খেতে ঢুকেছেন। অর্ডার করেছেন পছন্দের খাবার। যথাসময়ে খাবার এল। কিন্তু এ কী! ঢাকা খুলে দেখলেন যা অর্ডার দিয়েছেন সেই খাবার দেওয়া হয়নি। আর এমনটা স্রেফ আপনার সঙ্গে নয়, ওই রেস্তরাঁয় খেতে আসা অন্যান্যদের সঙ্গেও ঘটেছে ঠিক এমনটাই। ব্যাপারটা ঠিক কী? আসুন শুনে নিই।
অর্ডার দিয়েছে মোমো। খেতে দেওয়া হল চাউমিন। কিংবা বিরিয়ানির বদলে চলে এল এক প্লেট মিষ্টি। ভাবছেন তো, এমনটা আবার হয় নাকি! জাপানের এক রেস্তরাঁয় ঠিক এমনটাই হয়। সেখানে খেতে গেলে আপনি যা অর্ডার করবেন, সাধারণত সেই খাবার আপনাকে খেতে দেওয়া হবে না। অথচ এই ভুলের জন্য কাউকে কিছু বলতেও পারবেন না আপনি।
আরও শুনুন: ৩৪ লিটার মদ্যপান! নেশায় এক মাস কাবু যুবক! গড়লেন নতুন রেকর্ডও
শুনতে অবাক লাগলেও সত্যি। জাপানের এই রেস্তরাঁয় এমনটাই রেওয়াজ। এমন নয়, যে গোটা রেস্তরাঁ একজন সামলাচ্ছেন। সেক্ষেত্রে মনে হতে পারে, ওই একজনের তাঁর পক্ষে এতজনের অর্ডার মনে রাখা সম্ভব হচ্ছে না। কিন্তু এখানে খাবার দেওয়ার কাজে নিযুক্ত রয়েছেন অনেকেই। এমনকি বড় বড় রেস্তরাঁর মতো, খাবারের অর্ডার নেওয়ার জন্য নির্দিষ্ট একজন, জল বা প্লেট দেওয়ার জন্য একজন, এবং অন্যান্য কাজের জন্য নিয়োগ করা হয়েছে কর্মীদের। তাহলে সমস্যাটা কোথায়?
আসলে সমস্যাটা ওই কর্মীদের। এখানে যারা কাজ করেন তাঁরা প্রত্যেকের ডিমেনশিয়ায় আক্রান্ত। বলা ভালো, এই রেস্তোরাঁয় মূলত এই রোগে আক্রান্তদেরই কাজ দেওয়া হয়। রেস্তরাঁর নামও ‘দ্য রেস্টুরেন্ট অফ মিসটেকেন অর্ডারস’ (The Restaurant of Mistaken Orders)। তাই এমন ঘটনা সেখানে একেবারেই স্বাভাবিক। আসলে ডিমেনসিয়া এমন এক রোগ, যার প্রভাবে মানুষ সব কিছু ভুলে যায়। বয়স্করাই মূলত এই রোগের শিকার হন। কেউ কেউ বলেন, এই রোগ বংশগত। তাই কম বয়সেও অনেকের মধ্যেই এমন রোগ দেখা যায়। আক্রান্তরা একটা সময়ের পর নিজের নামও ভুলে যান। স্বাভাবিক ভাবে এই অবস্থায় তাঁদের পক্ষে কোনও কাজই করা সম্ভব নয়। তাহলে কী উপায়?
এই সমস্যার কথা বুঝতে পেরেই এমন অভিনব রেস্তরাঁ খোলার কথা ভাবেন মিসটেকেন অর্ডারসের কর্ণধার। প্রথমে তিনিও ভেবেছিলেন একেবারেই লাভ হবে না। উলটে গ্রাহকরা অসন্তুষ্ট হবেন ভুল খাবার পেয়ে। কিন্তু বাস্তবে এমনটা একেবারেই হয়নি। বরং ভুল খাবার পরিবেশন করাই এই রেস্তোরাঁর বিশেষত্ব হয়ে ওঠে। একথা সকলেরই জানা, এখানে কেউ ইচ্ছা করে এমনটা করেন না। তাই রাগ করার প্রশ্ন নেই। উলটে এখানে ডিমেনশিয়া রোগিদের যেভাবে কাজের সুযোগ দেওয়া হয়েছে, তার তারিফ করেছেন অনেকেই। প্রতিদিন এই অদ্ভুত রেস্তরাঁয় হাজির হন অনেকেই। অর্ডার দেন পছন্দের খাবার। তারপর অপেক্ষা। কার ভাগ্যে কী খাবার জুটবে তা কেউ জানে না। তবে এটুকু নিশ্চিত অর্ডার করা খাবার আসবে না। তাই ভুল খাবার এলেই সকলে উচ্ছ্বসিত হয়ে ওঠেন। ভুল করেও আনন্দ পান সেখানকার কর্মীরা। আর এভাবেই অদ্ভুত রীতি নিয়ে চলছে জাপানের ‘দ্য রেস্টুরেন্ট অফ মিসটেকেন অর্ডারস’।