স্বয়ংবর সভায় স্বামী খুঁজে নেওয়ার রীতি বহু প্রাচীনকাল থেকেই আমাদের দেশে চলে আসছে। মহাভারতের সময় থেকেই রাজকন্যারা স্বয়ংবর থেকে খুঁজে নিতেন নিজের পছন্দের জীবনসঙ্গীকে। কিন্তু মেলা থেকে ‘বর কেনার’ কথা কখনও শুনেছেন? শুনতে অবাক লাগলেও, আমাদের দেশেই হয় এমন মেলা। আর সেখান থেকেই জীবনে কাছের মানুষ খুঁজে নেন যুবতীরা। কেমন করে হয় সেই নির্বাচন? আসুন শুনে নেওয়া যাক।
‘দাদা পায়ে পড়ি রে, মেলা থেকে বউ এনে দে’… নিশ্চয়ই শুনেছেন এই গানটা! কিন্তু এখানে গল্পটা একেবারে অন্যরকম। বউ নয় এই মেলায় পাওয়া যায় ‘বর’। প্রায় ৭০০ বছর ধরে এমন রীতি পালিত হয়ে আসছে বিহারের একটি গ্রামে। এই গ্রামে ৯ দিনের জন্য বসে এক বিশেষ বাজার, স্থানীয় ভাষায় যার নাম ‘সৌরথ মেলা’। মেলায় ঢুকলেই দেখা যায় সারিবদ্ধ ভাবে দাঁড়িয়ে রয়েছেন যুবকরা, অর্থাৎ যাঁরা পাত্র। সঙ্গে রয়েছেন তাঁদের পরিজনেরাও। প্রত্যেক পাত্রের কাছেই থাকে নিজেরে পরিচয়পত্র। শুধু তাই নয়, বার্থ সার্টিফিকেট, মার্কশিট-সহ তাঁরা সঙ্গে রাখেন বিভিন্ন দরকারি কাগজপত্র।
আরও শুনুন: ভারতের স্বাধীনতা দিবস হিসেবে বেছে নেওয়া হল ১৫ আগস্টকে, নেপথ্যের কারণ কী?
মেলায় ঘুরতে আসেন বিবাহযোগ্যা যুবতীদের বাড়ির লোক। প্রথমে শুরু হয় সামনে থেকে দেখে পছন্দ করার পালা। পছন্দ হলে তাঁরা দেখতে চান পাত্রের সেইসব পরিচয়পত্র। তারপর পাত্রের পরিবারের সঙ্গে কথা বলে বুঝে নেন তাঁদের সামাজিক অবস্থান। এরপর পাত্রী বিয়ের জন্য ‘হ্যাঁ’ বললে, একইভাবে পাত্রীর সম্পর্কে খোঁজ শুরু করে পাত্রপক্ষ। সবকিছু মিলে গেলেই এক হয়ে যায় চার হাত। মেলায় আগত পাত্রদের জন্য থাকে এক বিশেষ পোশাক পরার নিয়ম। মূলত ধুতি আর পাঞ্জাবি পরেই তাঁরা প্রায় বরের বেশেই এই মেলায় আসেন। আবার অনেক পাত্র জিন্সের সঙ্গে শার্ট পরেও এই মেলায় আসেন। তবে সবথেকে আশ্চর্যের বিষয় হল পাত্রের সামাজিক পরিচিতি আর আর্থিক অবস্থানের উপর নির্ভর করে তাঁর নির্বাচন। মূলত মৈথিলি সম্প্রদায়ের পাত্র-পাত্রীরারাই ভিড় জমান এই মেলায়। বিহারের বিভিন্ন জেলা থেকেই বিবাহযোগ্যা সন্তানদের নিয়ে এই মেলায় আসেন তাঁদের অভিভাবকেরা। পঞ্জিকা হাতে মেলায় উপস্থিত থাকেন পুরোহিতও। তাই একবার পছন্দ হয়ে গেলেই যত শীঘ্র সম্ভব এক করে দেওয়া হয় চার হাত।
আরও শুনুন: পাকিস্তানের নাগরিকত্ব নিচ্ছেন ভারতীয়রা! ইঙ্গিত মিলছে তথ্যে, কারণটা কী?
স্থানীয়দের মতে, এই মেলা শুরু হয়েছিল রাজা হরি সিংহের আমল থেকে। উদ্দেশ্য ছিল বিভিন্ন গোত্রের মানুষের মধ্যে বিবাহ সম্পন্ন করানো। তবে পাত্রের সঙ্গে রক্তের সম্পর্ক থাকলে বা পাত্র-পাত্রীর ব্লাড গ্রুপ এক হলে আর বিয়ে সম্ভব নয়। একইসঙ্গে এই বিয়েতে কোনও পণ নেওয়ার প্রচলন নেই। এখনও সেই নিয়ম কঠোরভাবে মেনে চলা হয়। বিশেষ উদ্দেশ্য নিয়েই যে একদিন এই প্রথা শুরু হয়েছিল, তা তো বোঝাই যাচ্ছে। তবে আধুনিক ম্যাচমেকিং-এর যুগেও যে স্থানীয় মানুষ সেই প্রাচীন রীতিটিকে স্বীকৃতি দিয়ে চলেছেন, তা বেশ অবাকই করে বইকি!