সঙ্গী নেই। তাতে সমস্যাও নেই। বরং একা থাকাই সুখের ঠিকানা নতুন প্রজন্মের। পোশাকি নাম ‘হ্যাপিলি সিঙ্গেল’। সিনেমা-সিরিজে প্রেমহীনতা যেভাবেই দেখাক, বাস্তব বলছে অন্য কথা! নিজের মতো নিজের সঙ্গে সুখে থাকতেই ভালোবাসছেন তাঁরা। প্রশ্ন হচ্ছে, কেন এমন ঝোঁক? আসুন, শুনে নেওয়া যাক।
তথাকথিত প্রেম থাকুক বা নাই থাকুক, এই প্রজন্ম কিন্তু দিব্য সুখেই আছে নিজের মধ্যে। একা, কিন্তু নিঃসঙ্গ নয়। অথচ তাতেই খুশি ‘হ্যাপিলি সিঙ্গেল’ প্রজন্ম! কী এই ‘হ্যাপিলি সিঙ্গেল’ থাকা? কেনই বা মানুষ ঝুঁকে পড়ছে এই জীবনযাপনে?
সোশ্যাল মিডিয়ার যুগে প্রেম নিয়ে নানা মুনির নানামত। তারই মাঝে ঠাঁই পেয়েছে সিঙ্গেল কিংবা মিঙ্গেলের মতো শব্দ। সিঙ্গেল মানেই তার সঙ্গে জুড়ে থাকবে বিচ্ছেদের একাকিত্ব। কিংবা সিঙ্গেল মানেই সঙ্গী খুঁজে নেওয়ার প্রবল তাড়নায় অতিষ্ঠ হয়ে উঠছে সে, এমনই ধারণা যেন তৈরি করে দিয়েছে এই সমাজ। তবে এখানেই শেষ নয়। বয়স একটু বাড়লেই ঘরে-বাইরে কয়েকটি প্রশ্নের সম্মুখীন মোটামুটি সকলকেই হতে হয়। যে প্রশ্নগুলো দেখতে-শুনতে আলাদা হলেও মূল দিকগুলো মোটামুটি একইরকম। বিয়ে কবে? কোনও প্রেম-টেম হচ্ছে কিনা? কার সঙ্গে থাকা হয়? আরও কত কী… আর এরই মধ্যে এসে জুটেছে হাজার একটা অনলাইনের ঘটকালি করার অ্যাপ। তাতে ছাদনাতলায় যাওয়া হোক কিংবা নিছক সময় কাটানো, সবরকমের সঙ্গীসাথীর খোঁজই পাওয়া যায়। রাজযোটকের মিল করাতে এক পায়ে খাড়া অগুন্তি জ্যোতিষী। অনলাইন হোক বা অফলাইন। রাস্তা-ঘাট থেকে শুরু করে বাড়ির ছোটবড় সদস্য, সকলেই এক ক্যে রাজি জ্যোতিষীর কাছে নিয়ে গিয়ে উপযুক্ত সঙ্গী খুঁজে দিতে। কিন্তু, এরই মধ্যে জানা হয়না, যাঁদের লক্ষ্য করে ধেয়ে আসছে এইসমস্ত অনুরোধ, কিংবা প্রস্তাব, তাঁরা তাঁদের সঙ্গী বাছাই করতে আগ্রহী কি-না।
আরও শুনুন: স্বামী-স্ত্রী এক ছাদের তলায় কিছুতেই থাকবেন না, এই শর্তে বিয়েই এখন ট্রেন্ডিং
নয়া সমীক্ষা বলছে এই প্রজন্ম নাকি আদৌ সেভাবে আগ্রহী নয় তাঁদের সঙ্গী খুঁজে পেতে। বরং তাঁরা বিশ্বাস করে ‘হ্যাপিলি সিঙ্গেল’ নীতিতে। ব্যাপারটা ঠিক কেমন এবার বলা যাক। নিজের সঙ্গেই নিজের বন্ধুত্ব জমিয়ে ফেলা। তাতে সুযোগই নেই কোনও ঝগড়াঝাঁটি, নেই মান-অভিমান কিংবা মানসিক টানাপোড়েন হবার। নেই অন্যের মনের খেয়াল রেখে চলার কর্তব্য।
কী বলছে প্রজন্ম? বিভিন্ন সমীক্ষায় উঠে এসেছে তাঁদের বক্তব্য। কেউ গবেষক, কেউ কর্মরত, কেউ হন্যে হয়ে চাকরি খুঁজছে কেউ আবার শিল্পী। জীবনযাপনের ধরনটি তাঁদের সকলেরই আলাদা আলাদা। শুধু একটি বিষয়ে তাঁদের খুব মিল। আর সেই বিষয়টি হল একা থাকার আনন্দ। স্পষ্টভাবে তাঁরা সকলেই জানিয়েছে সম্পর্কের বেড়াজালে আবদ্ধ হতে চান না তাঁরা কেউই। কারণটি খুব স্পষ্ট। তাঁদের মতে, একাকিত্বে রয়েছে নিজেকে খুঁজে পাওয়ার অনেক সুযোগ। শুধু কি তাই? একলা থাকলে কমে অনেক বিড়ম্বনা। শুরুতেই রয়েছে নিজের কাজে মন দেওয়ার অঢেল অবসর। অন্যদিকে পাশের মানুষটির দায়িত্ব না নিতে হলে স্বাভাবিকভাবেই কমে মানসিক চাপ। একইরকমভাবে আজকের মূল্যবৃদ্ধির বাজারটিও কিন্তু এড়িয়ে যাওয়ার মতো নয়। তাই একা থাকাতে রয়েছে সঞ্চয় করার প্রভূত সম্ভাবনা।
দ্রুতগামী জীবন যে আজকের দিনে প্রায় সবাইকে দৌড় করাচ্ছে এ নতুন করে বলবার অপেক্ষা রাখেনা। আর সেই দৌড়ে পিছিয়ে পড়ার ভয় থেকেই মানুষ হয়ে পড়ছে আত্মকেন্দ্রিক। বলা বাহুল্য সেই আত্মকেন্দ্রিকতারই একটি অদেখা দিক ‘হ্যাপিলি সিঙ্গেল’-এর ধারণা। তবে যা কিছু নতুন তাই মানুষ গ্রহণ করে থাকে দু-হাত ভরে। আর তেমনই নতুনত্বের তালিকায় নয়া আমদানি ‘হ্যাপিলি সিঙ্গেল’-এর পদ্ধতি। তবে এই ব্যাপারটি মুখোমুখি এনে দাঁড় করিয়ে দেয় আরও এক গূঢ় প্রশ্নের। সম্পর্কের উষ্ণতায় মানুষের প্রয়োজন কি তবে সত্যিই শেষের দিকে? নাকি মানুষের প্রতি আস্থা হারিয়ে শেষমেশ বীতশ্রদ্ধ হয়েই মানুষ প্রত্যাখ্যান করছে সঙ্গী নির্বাচনের চাহিদা? মীমাংসাহীন প্রশ্নের দিকে তাকিয়েই এখন সকলে।