অলিম্পিক্সকে রাজনৈতিক ক্ষমতা প্রর্দশনের মঞ্চ হিসেবে দেখেছিলেন হিটলার। খেলোয়াড়দের জন্য চালু করেছিলেন বিশেষ নিয়ম। হিটলারের সেই নিয়ম নতমস্তকে মেনে নিতে বাধ্য ছিলেন সকলে। ব্যতিক্রম এই বিশ্বচ্যাম্পিয়ন এবং সেবারের অলিম্পিক্সে অংশ নেওয়া ভারতীয় দল। হিটলারের বিরুদ্ধে ঠিক কী করেছিলেন তাঁরা? আসুন শুনে নেওয়া যাক।
আন্তর্জাতিক মানের ক্রীড়া প্রতিযোগিতা। সেখানে ক্ষমতা দেখাতে পারলে, গোটা বিশ্ব জানবে। তাই অলিম্পিক্সকে বরাবরই বিশেষ গুরুত্ব দিতেন রাষ্ট্রনেতারা। এমনকি হিটলারও এই মঞ্চকেই ক্ষমতা প্রর্দশনের মঞ্চ হিসেবে ব্যবহার করেছিলেন। ১৯৩৬-র অলিম্পিক্সে বেশ কিছু নতুন নিয়ম চালু করেছিলেন তিনি। অলিম্পিক্সে অংশ নেওয়া সমস্ত ক্রীড়াবিদ সেই নিয়ম মানতে বাধ্য ছিলেন। আর সেখানেই ব্যতিক্রমী হিসেবে উঠে বেশ কয়েকজন খেলোয়াড়ের নাম।
:আরও শুনুন:
অলিম্পিকের আসরে নারীর প্রবেশ নিষিদ্ধ! নিয়ম ভাঙার শাস্তি ছিল মৃত্যু
অলিম্পিক্সের ইতিহাসে ১৯৩৬ বার্লিন অলিম্পিক্সের আলাদা গুরুত্ব রয়েছে। কারণ এর সঙ্গে ওতপ্রোত ভাবে জড়িয়ে হিটলারের নাম। মনে করা হয়, সেবারের অলিম্পিক্সে খেলার থেকেও বেশি গুরুত্ব পেয়েছিল নাজি দলের ক্ষমতা প্রদর্শন। কারণ গোটা অনুষ্ঠানটাই দায়িত্ব নিয়ে আয়োজন করেছিলেন স্বয়ং হিটলার। নতুন স্টেডিয়াম তৈরি করা থেকে ইহুদীদের সম্পূর্ণভাবে খেলায় নিষিদ্ধ করা, ১৯৩৬ অলিম্পিক্সকে মনে রাখার একাধিক কারন রেখেছেন হিটলার। প্রথমবার ওই অলিম্পিক্স টিভিতে সম্প্রচারিত হয়েছিল। তাই খেলোয়াড়রা কীভাবে হিটলারকে সম্মান জানাচ্ছেন তা দেখানোয় জোর দিয়েছিল ফ্যাসিস্ট নাৎসি দল। এমনিতে হিটলার অনুগামীদের বিশেষ এক স্যালুট দেওয়ার নিয়ম ছিল। অলিম্পিক্সে অংশ নেওয়া খেলোয়াড়দেরও সেই নিয়ম মানতে বলা হয়। অধিকাংশই বাধ্য হন নিয়ম মানতে। কিন্তু সবাই হিটলারের বশ্যতা স্বীকার করেননি। বরং অলিম্পিক্সের মঞ্চে হিটলারের সামনে মাথা না ঝুঁকিয়ে গোটা পৃথিবীকে বিশেষ বার্তা দিয়েছিলেন কয়েকজন খেলোয়াড়। তালিকায় ভারতীয়রাও ছিলেন। শোনা যায়, সেবার অলিম্পিক্সে ভারতের হয়ে যেকজন খেলোয়াড় অংশ নিয়েছিলেন তাঁরা কেউই হিটলারকে ওই বিশেষ সম্মান জানাননি। দলের নেতৃত্বে ছিলেন হকির জাদুকর ধ্যানচাঁদ। সেবার জার্মানিকে হারিয়ে সবাইকে চমকে দিয়েছিল ভারতীয় হকি দল। খোদ হিটলার এসে ধ্যানচাঁদকে জার্মানি সেনায় যোগদানের প্রস্তাব দেন। কিন্তু শিরদাঁড়া সোজা রেখে সে প্রস্তাব ফিরিয়ে দেন ধ্যানচাঁদ।
:আরও শুনুন:
অলিম্পিকের রুপো থেকে হলিউডের রুপোলি দুনিয়ায় পা, চেনেন এই ভারতীয়কে?
এখানেই শেষ নয়, হিটলারকে সম্মান না জানানোর তালিকায় রয়েছে আরও এক বিশ্বচ্যাম্পিয়নের নয়। একটা নয়, সেবার অলিম্পিক্সে চারটি মেডেল ঝুলিতে ভরেছিলেন জেসি ওয়েনস (Jesse Owens)। প্রথমে ১০০ মিটার দৌড়, সেখানে নতুন রেকর্ড গড়ে সোনা জেতেন তিনি। ২০০ মিটার দৌড়, লং জাম্প এবং ৪০০ মিটার রিলে রেসেও সবাইকে ছাপিয়ে যান এই আমেরিকান খেলোয়াড়। হিটলারের তৈরি নিয়মের বিরোধিতায় প্রথম থেকেই সরব হয়েছিলেন তাঁর দেশের অনেকে। ওয়েনস নিজেও সেই দলেই ছিলেন। একদিকে হিটলার যখন অলিম্পিক্সের মঞ্চকে ক্ষমতা প্রদর্শনের মঞ্চ হিসেবে দেখাতে চাইছেন, সেখানেই তাঁর বিরোধিতা করার সুযোগ হাতছাড়া করেনননি ওয়েনস। মেডেল জিতেও হিটলারকে এতটুকু কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করেননি তিনি। তাঁর এই আচরণ সাড়া ফেলে দিয়েছিল বিভিন্ন মহলে। এমনকি অলিম্পিক্সের ইতিহাসেও এই ঘটনা চিরস্মরণীয় বলেই মনে করা হয়।