চার দেওয়াল পাকা হলেও, বাড়ির ছাদ তৈরি হয়েছে এসবেস্টস দিয়ে। গ্রামের দিকে এমন দৃশ্য দেখতে পাওয়া খুবই স্বাভাবিক। কিন্তু তাই বলে গোটা গ্রামে একটাও বাড়িতে পাকা ছাদ নেই, এমনটা কখনও দেখেছেন? মধ্যপ্রদেশের এক গ্রামে কোনও বাড়িতেই পাকা ছাদ নেই। কেন জানেন? আসুন শুনে নিই।
ভারতের আনাচে কানাচে ছড়িয়ে রয়েছে কতই না বিস্ময়। নিজে থেকেই তৈরি হওয়া আশ্চর্য মন্দির কিংবা দীর্ঘদিন বেঁচে থাকা কোনও গাছ। লোক কাহিনীতে ভর করে সেইসব রীতিমতো জনপ্রিয় পর্যটকদের কাছে। সেই তালিকাতেই রয়েছে মধ্যপ্রদেশের এক গ্রাম। এখানকার একটাও বাড়িতে পাকা ছাদ নেই।
আরও শুনুন: ২০২৪-এ দেশ পাবে মহিলা প্রধানমন্ত্রী, কর্ণাটকের জ্যোতিষীর দাবিতে শোরগোল বিরোধী শিবিরে
স্বাধীনতার এত বছর পরেও দেশের সব প্রান্তে বিদ্যুৎ পৌঁছায়নি। পাকা রাস্তাও নেই বেশ কিছু গ্রামে। তাই সেসব জায়গায় পাকা বাড়ি না থাকা অস্বাভাবিক নয়। কিন্তু মধ্যপ্রেদশের এই গ্রামের পরিস্থিতি তেমন শোচনীয় নয়। বিদ্যুৎ, রাস্তা সহ যাবতীয় সুবিধা এই গ্রামে রয়েছে। শহরের থেকেও দূরত্ব মাত্র ২০ কিমি। শুধু নেই বলতে বাড়ির পাকা ছাদ। এই গ্রামের সমস্ত বাড়ির ছাদই এসবেস্টস দিয়ে তৈরি। গ্রামবাসীদের আর্থিক অবস্থাও স্বচ্ছল। অন্তত একটা পাকা ছাদ তৈরির ক্ষমতা যে কারওর নেই, এমনটা তো একেবারেই নয়। তাও কারও যদি টাকাপয়সার অভাব হয়েও থাকে, তাহলে প্রধানমন্ত্রী আবাস যোজনা তো রয়েছেই। এই প্রকল্পের আওতায় সকলেই পাকাবাড়ি তৈরির জন্য সরকারি সাহায্য পাবেন। তবে এই গ্রামের বাসিন্দারা না নিজেরা টাকা খরচ করবেন, না কারও থেকে টাকা নেবেন। তাঁরা একপ্রকার প্রতীজ্ঞাবদ্ধ, পাকাছাদ তৈরি করবেন না।
আরও শুনুন: এক আধারে যোগ ৬৫৬ সিম কার্ড! আপনিও জালিয়াতির শিকার হচ্ছেন না তো?
কিন্তু কেন?
কারণ বলতে স্রেফ একটা কুসংস্কার। যদিও গ্রামবাসীরা একে কুসংস্কার বলতে নারাজ। স্থানীয় বিশ্বাস, এই গ্রামে কোনও বাড়িতে পাকাছাদ তৈরি হলেই ঘনিয়ে আসবে চরম বিপদ। দীর্ঘদিন ধরে এই নিয়ম মেনে চলেছেন গ্রামের সকলে। ঠিক কবে এবং কীভাবে এই নিয়ম চালু হয়েছিল, তা প্রায় সকলেরই অজানা। তবে এমনটা মনে করা হয়, গ্রামের স্থানীয় এক মন্দিরের পুরোহিত এই পাকা ছাদ তৈরি না করার বিধান দিয়েছিলেন। তিনি দাবি করেন স্বয়ং ভগবান এই নির্দেশ দিয়েছেন। যদিও এই নির্দেশ না মেনে গ্রামের এক বাসিন্দা পাকা ছাদ তৈরি করেন। কিন্তু সেখানে একরাত কাটানোর পরই কার্যত উন্মাদ হয়ে যান তিনি। যা রীতিমতো ভয় ধরিয়ে দেয় গ্রামবাসীদের মনে। তারপর থেকে এই পাকা ছাদ না তৈরি করা একপ্রকার নিয়মে পরিণত হয়েছে এই গ্রামে। এমনকি গ্রামে নতুন বাড়ি তৈরির হলেও ভয়ে ভয়ে দিন কাটান গ্রামবাসীরা। লোকমুখে এই বাড়ি তৈরির সময় বিপত্তি হওয়ার নানা কাহিনি ছড়িয়েছে। তার থেকেই এই ভয়। এখনও গ্রামের কেউ নতুন বাড়ি বানাতে গেলে, স্থানীয় মন্দিরে পুজো দিতে যান। সেখানে পুরোহিতের অনুমতি নিয়েই বাড়ি তৈরির কাজ শুরু করেন। তবে বাড়ি তৈরি হলেও যেন ছাদ পাকা করার কোনও নিয়ম নেই। ব্যতিক্রম বলতে একমাত্র স্কুলবাড়িটি। সেখানে কোনও এসবেস্টস নেই। পাকা ছাদের নিচেই পড়াশোনা করে গ্রামের ছেলেমেয়েরা। তাছাড়া গ্রামের আর কোনও বাড়িতেই পাকাছাদ নেই।