গোটা গ্রামে একজনও মুসলিম নেই। তবে প্রাচীন এক দরগা রয়েছে। যা রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্ব নিজেদের কাঁধে তুলে নিয়েছেন হিন্দুরাই। এখানে বিয়ে থেকে শুরু করে নানা হিন্দু অনুষ্ঠানেরও আয়োজন হয়। বিভেদের দিনে এক আশ্চর্য মানবিকতার পাঠ দেয় এই গ্রাম। আসুন শুনে নেওয়া যাক।
পীরের দরগা মূলত মুসলিমদের আরাধনার স্থান। তবে সেখানে হিন্দুদের যাওয়া নিষিদ্ধ নয়। বরং এ দেশে এমন অনেক দরগা রয়েছে যেখানে মানসিক করে আসেন হিন্দুরাও। তবে গুজরাটের এই দরগা অবশ্যই ব্যতিক্রম। কারণ এই দরগা রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্বও হিন্দুদেরই।
:আরও শুনুন:
কানওয়ার যাত্রায় জাতপাতের দ্বন্দ্ব, এদিকে মুসলিমদের তৈরি বাঁক কাঁধে হাঁটছেন ভক্তরা
কথা বলছি, গুজরাটের আমরেলি জেলার খাদাশালি নামে এক গ্রাম সম্পর্কে। এই গ্রামে মূলত হিন্দুদের বাস। সেইসঙ্গে শিখ, জৈন থাকলেও মুসলিম নেই একজনও। অথচ এই গ্রামে রয়েছে ২০০ বছরের পুরনো এক দরগা। শোনা যায়, কোনও এক কালে এখানে মুসলিমরাও বাস করতেন। তাঁরাই এই দরগা তৈরি করেন। কিন্তু এই মুহূর্তে একজনও মুসলিম গ্রামে নেই। তাই বলে দরগা অবহেলায় পরে থাকে না। নিয়মিত এই ধর্মস্থানের দেখভাল করেন গ্রামের হিন্দুরা। স্রেফ হিন্দু বললে ভুল হবে, ব্রাহ্মণ আর পাতিলদের কাঁধেই রয়েছে এই প্রাচীন দরগা রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্ব। এখানে নিয়মিত পুজোও করা হয়। তবে মূর্তি না থাকায় হিন্দু ধর্মের কোনও আচার আচরণ পালন করা হয় না। চারদিক ফুল দিয়ে সাজিয়ে মনের ভক্তিকে সম্বল করেন এই দরগায় প্রার্থনা সারতে আসেন গ্রামের হিন্দুরা। মন্দিরও রয়েছে অন্তত গোটা দশেক। সেখানেও নিয়মিত পুজোর ব্যবস্থা রয়েছে। তবে দরগার গুরুত্ব সকলের কাছেই অন্য মাত্রায়।
:আরও শুনুন:
বাজেটে ঝুলি না ভরুক, নিধিরাম সর্দার মধ্যবিত্তের হাতে থাকল মিম
গ্রামের যে কোনও শুভ অনুষ্ঠানে এই দরগায় এসে মাথা ঠেকানোর নিয়ম রয়েছে। বিশেষ করে বিয়ের পর, এই দরগার নবদম্পতিকে হাজির হতে হয়। কেউ কেউ মন্দিরের মতো দরগার চারপাশ প্রদক্ষিণ করেন। কোনও ধরা বাধা নিয়ম নেই। যার যেমনটা মনে হয় সেই ভাবেই দরগায় প্রার্থনা জানিয়ে যান। আশেপাশের গ্রামের মানুষও প্রায়শই এই দরগায় হাজির হন। এমনি সময় গেলে দেখে বোঝার উপায় নেই, এ কোনও মন্দির না দরগা। কারণ দরগায় ভিড় হলে তা মুসলিমদের হওয়াটাই স্বাভাবিক। কিন্তু এই দরগায় কোনও মুসলিমের দেখা মেলে না। প্রতিদিন দলে হিন্দুরাই ভিড় জমান এই দরগায়। কারণ অবশ্য একাধিক। কেউ বলেন, প্রাচীন এই ধর্মস্থানে যা কিছু প্রার্থনা করা হোক তা ফলবেই। কেউ আবার বলেন, এখানে এলে মনের শান্তি অনুভব হয়। তবে নব দম্পতিদের মধ্যে এই দরগা বিখ্যাত হওয়ার কারণ অন্য। স্থানীয় বিশ্বাস, এখানে প্রার্থনা জানিয়ে গেলে কোনওদিন বিয়ে ভাঙার ভয় থাকে না। এতদিন বহু দম্পতি এখানে বিয়ের পর এসেছেন। তাঁরা প্রত্যেকেই সুখে শান্তিতে ঘর করছেন বলে দাবি স্থানীয়দের। সেখান থেকেই এই বিশ্বাস। এই দরগাকে মুসলিম ধর্মস্থান বলে কেউ মনেই করে না। বরং জাতপাতের উর্ধ্বে গিয়ে মানুষের ভক্তিই প্রাধান্য পায় গুজরাটের এই দরগায়।