ভর দুপুরে খাবার অর্ডার করবেন না। গ্রাহকের কাছে এমনই আর্জি অনলাইন ফুড ডেলিভারি সংস্থার। যার নেপথ্যে রয়েছে যথেষ্ট মানবিক এক কারণ। ঠিক কেন এমন আর্জি জানানো হল সংস্থার তরফে? আসুন শুনে নেওয়া যাক।
এক ক্লিকেই দরজায় খাবার। ভর দুপুর হোক বা মাঝরাত, টাকা দিলেই মিলবে সুবিধা। কিন্তু খাবার তো আর হাওয়ায় উড়ে আসবে না। তার জন্য ২৪ ঘণ্টা ডিউটিতে থাকেন কেউ কেউ। রোদ-ঝড়-বৃষ্টি, কিছুতেই ছুটি নেই। রাস্তায় নামতেই হবে। পৌঁছে দিতে হবে খাবার। একটু দেরি হলে কাটা যাবে মাইনে। তাই জীবনের ঝুঁকি নিয়েই রাস্তায় নামেন অনলাইন ডেলিভারি সংস্থার কর্মীরা। তবে এই গরমে তাঁরা একটু রেহাই পান, চাইছে খোদ সংস্থাই। তার জন্য লাভ কমাতেও আপত্তি নেই।
এমনিতে এঁদের কথা সেইভাবে কেউ ভাবে না। ভাবার প্রয়োজনও বোধহয় পড়ে না। তাই গ্রাহক থেকে সংস্থা সকলেই এঁদের কার্যত অবহেলার চোখে দেখেন। কেউ কেউ বাড়ির দরজা থেকে ফিরিয়ে দেন দেরি হয়েছে এই অপরাধে। সংস্থাও নির্মমভাবে মাইনে থেকে সেই দেরি হয়ে ফেরত আসা খাবারের টাকা কেটে নেয়। অসহায়ের মতো সবটা মেনে নেন ডেলিভারি কর্মীরা। খবর হয় না বললে ভুল হবে। প্রায়শই কোনও না কোনও কারণে তাঁরা শিরোনামে উঠে আসেন। কিন্তু তাতে লাভের লাভ তেমন হয় না বললেই চলে। ভোট আসে ভোট যায়, গরম পড়ে, বৃষ্টিও ঝড়ে, ডেলিভারি কর্মীদের জীবন একই গতিতে ছুটতে থাকে। তবে সম্প্রতি এক ঘটনা সেই নিয়মে ছেদ টেনেছে। আর তেমনটা করেছে এক অনলাইন ফুড ডেলিভারি সংস্থাই। যেখানে অন্যান্য সংস্থা সবসময় বিজ্ঞাপনের প্রলোভন দেখিয়ে বিক্রির হার বাড়াতে চায়, সেখানে এই সংস্থা বলছে ভরদুপুরে খাবার কম অর্ডার দিন। প্রয়োজন না পড়লে কেউ যেন দুপুরবেলা খাবার অর্ডার না দেয়, তেমনই আর্জি ওই সংস্থার। আসলে, নিজেদের লাভের কথা না ভেবে এই সংস্থা ডেলিভারি কর্মীদের কথাই ভেবেছে। অন্যান্যবারের তুলনায় এবারের গরম সব রেকর্ডকে হার মানিয়েছে। গরমের জন্য মৃত্যুও হয়েছে অনেকের। কাজেই দুপুরের চড়া রোদে ডেলিভারি কর্মীদের রাস্তায় বেরোতে হলে বিপদের আশঙ্কা থাকবেই। তাই গ্রাহকরা যাতে তেমনটা না করেন, সেই আর্জি জানিয়েছে সংস্থা।
স্বাভাবিকভাবেই এই পদক্ষেপে কুর্নিশ জানিয়েছেন নেটিজেনরা। অনলাইন ডেলিভারি কর্মীদের নিয়ে সোশাল মিডিয়ায় এমনিতেই আলোচনা হয়। কাজেই সেখানে ডেলিভারি সংস্থার এই বিজ্ঞপ্তি বেশ শোরগোল ফেলেছে। প্রায় সকলেই সাধুবাদ জানিয়েছেন। তবে কেউ কেউ এই দাবিও রেখেছেন, যে দুপুরে খাবার ডেলিভারির জন্য বিশেষ চার্জ রাখা হোক। তা এতটাই বেশি রাখা হোক যে কেউ খাবার অর্ডারই করবেন না। তাতে অবশ্য বিশেষ কেউ সায় দেয়নি। তবে এই পদক্ষেপের জেরে যে ডেলিভারি কর্মীদের কিছুটা হলেও সুবিধা হবে, তা বলাই যায়।