রাহুল গান্ধীর উড়ন্ত চুমু বিতর্কে সরগরম সংসদ। ফ্লাইং কিসের মতো আচরণ প্রচলিত হলেও, তাকে অসম্মানজনক বলেই মনে করছেন সাংসদদের একাংশ। জানেন কি, এমনই অনেক আচরণ রয়েছে, যা এক জায়গায় বেশ প্রচলিত হলেও অন্য কোনও জায়গায় বিতর্ক উসকে উঠেছে তা নিয়েই। আসুন, শুনে নেওয়া যাক।
সংসদে ফ্লাইং কিস ছুড়ে আসলে মহিলা সাংসদদের অপমান করেছেন রাহুল গান্ধী, এই মর্মেই সম্প্রতি সুর চড়িয়েছেন বিজেপি শিবিরের মহিলারা। বিতর্কের জেরে অভিযোগ দায়ের হয়েছে খোদ স্পিকারের কাছে। জানা গিয়েছে, সংসদ থেকে বেরোনোর সময় রাহুলের হাতে থাকা কিছু নথিপত্র পড়ে গিয়েছিল। যে ঘটনায় হেসে ওঠেন বিজেপি সাংসদরা। পালটা তাঁদের দিকে চুমু ছুড়ে দেন রাহুল। স্মৃতি ইরানি সহ বিজেপির মহিলা সাংসদদের দাবি, এহেন আচরণ আসলে মহিলাদের পক্ষে অপমানজনক, নারীবিদ্বেষী। এবার কথা হল, ফ্লায়িং কিস বা এয়ার কিসের ধরনটি এসেছে পাশ্চাত্য থেকেই। সেখানে এই আচরণ ভালবাসা প্রকাশ করে, কিংবা সাদর সম্ভাষণ হিসেবে ব্যবহৃত হয়। বর্তমানে অবশ্য এ দেশেও এই আচরণ যথেষ্ট প্রচলিত। খেলার মাঠে, বিনোদনের জগতে তারকারা হামেশাই অনুরাগীদের দিকে চুমু ছুড়ে দেন। আবার অভিজাত পার্টিতেও অনেকেই এয়ার কিসের মাধ্যমে, অর্থাৎ গালে গাল ঠেকিয়ে সম্ভাষণ করেন। তাহলে দেখা যাচ্ছে, যে আচরণটি এক জায়গায় কার্টসি হিসেবেই মান্যতা পায়, তাকেই আবার স্থানভেদে অসম্মানজনক বলে মনে করছেন কেউ কেউ। আর সেই কারণেই উড়ন্ত চুমু নিয়ে জোর বিতর্ক চলছেই।
আরও শুনুন: অসম্মান নাকি ভালবাসা! মোদির সমর্থকদেরও উদ্দেশেও ছুটে গিয়েছিল রাহুলের ‘ফ্লাইং কিস’
কিন্তু কথা হল, এহেন বিতর্ক কিন্তু এই প্রথম নয়। আর শুধুমাত্র উড়ন্ত চুমু নিয়েই যে এহেন বিতর্কের সূত্রপাত, তাও কিন্তু নয়। ধরা যাক, থাম্বস আপ চিহ্নটি। সোশ্যাল মিডিয়ায় কোনও পোস্ট পছন্দ হলেই এই চিহ্ন দিয়ে আমরা ‘লাইক’ দিয়ে থাকি। কিন্তু আফ্রিকার কিছু দেশের পাশাপাশি ইরান, গ্রিস, রাশিয়াতেও এই ভঙ্গি করাই চলবে না। মার্কিন সমাজে যেমন মধ্যমা দেখানো মানে চূড়ান্ত অপমান, তেমনই এই দেশগুলিতেও বুড়ো আঙুল দেখানো মানা। সত্যি বলতে, একসময় ভারতেও এই ভঙ্গিটিকে ‘কাঁচকলা দেখানো’ বলা হত, অর্থাৎ ব্যঙ্গার্থেই তার ব্যবহার ছিল। আবার হাতের তর্জনী আর কনিষ্ঠা উঁচু করে, বাকি আঙুল মুঠো করে যে ভঙ্গি, তাকে আমরা ‘রক অন সাইন’ বলি। কিন্তু মধ্য প্রাচ্য বা লাতিন আমেরিকার কিছু দেশে তা হল শয়তানের শিং। সেখানকার মানুষেরা মনে করেন, কাউকে এই চিহ্ন দেখানো মানে বোঝানো হচ্ছে, ওই ব্যক্তিকে ঠকাচ্ছেন তাঁর স্ত্রী।
আরও শুনুন: ‘ইন্ডিয়া’ নয় ‘ভারত’! রব তুলেছিল বিজেপি, সংসদে ফিরে কৌশলী রাহুলের মুখে শুধুই ভারত
এখানেই শেষ নয়। বুড়ো আঙুলের মাথায় তর্জনীর আগা ঠেকিয়ে বিশেষ ভঙ্গি করে বোঝানো হয়, সবকিছু একদম ঠিক আছে। কাউকে সুন্দর লাগছে বোঝাতেও এই ভঙ্গিটি চলে। কিন্তু ইউরোপের এক অংশের মানুষের কাছে এই ভঙ্গির মানে হল, সেই মানুষটি একেবারেই অপদার্থ। ভাগ্যের উপর ভরসা করে যে ‘ফিঙ্গার ক্রস’ ভঙ্গি করা হয়, সেই ভঙ্গিতে আপত্তি ভিয়েতনামের মানুষদের। এটি নাকি সেখানে নারীদেহের বিশেষ অঙ্গের প্রতীক। ঠিক যেভাবে ভিক্টরি সাইনটিকেও একইরকম নারীবিদ্বেষী বলে ভাবেন যুক্তরাজ্য, অস্ট্রেলিয়া, আয়ারল্যান্ড বা নিউজিল্যান্ডের মানুষেরা। সুতরাং, কোনও ভঙ্গি বা আচরণ অসম্মানজনক মনে হবে কি না, তা যে অনেকটা স্থান কাল ভেদে বদলে বদলে যাচ্ছে, তা বলাই যায়।