এ যেন এক অন্যরকমের জয়। অন্যরকম মানুষদের জয়। হ্যাঁ, সমাজের চোখে ওঁরা অন্যরকম বা ‘অপর’। তাই সব ক্ষেত্রেই বিভিন্ন রকমের প্রতিকূলতার মুখোমুখি হতে হয় রূপান্তরকামী মানুষদের। সেইসব বাধার মধ্যে দাঁড়িয়েই, নিজেদের কথা বলার জন্য এক নতুন মঞ্চ পেলেন তাঁরা। তার চেয়েও বড় কথা, সেই মঞ্চ তৈরিও হল তাঁদের নিজেদের হাতেই। আসুন, শুনে নেওয়া যাক।
যা কিছুকে প্রচলিত গতে বাঁধা যায় না, তাকে নিয়েই অস্বস্তিতে পড়ে সমাজ। তাই বাধ্যত প্রান্তিক হয়ে যেতে হয় তাদের। রূপান্তরকামীদের ক্ষেত্রেও সে কথা প্রযোজ্য। সমাজের মূলধারায় বিশেষ ঠাঁই হয় না ওঁদের। পদে পদে নানারকমের প্রতিকূলতা, অবহেলা, অবজ্ঞার মুখে পড়েন তাঁরা। এবার যেন সেসবেরই সপাট জবাব মিলল। তবে মৌখিকভাবে নয়। অভিনব উপায়ে পালটা দিলেন রূপান্তরকামী মানুষেরা। মাদুরাইয়ে প্রথম চলচ্চিত্র এবং প্রকাশনা সংস্থা খুললেন তাঁরা। যা কাজ করবে সমাজের এই প্রান্তিক মানুষদের জন্যই। চলচ্চিত্রের জগতে রূপান্তরকামী মানুষদের নিজস্ব স্বর তুলে ধরবে সংস্থাটি। ‘ট্রান্স ফিল্মস’ ও ‘ট্রান্স পাবলিকেশন’ নামে দুটি শাখা নিয়ে পথচলা শুরু করেছে এই সংস্থাটি। যা স্বভাবতই প্রেরণা জোগাচ্ছে রূপান্তরকামী মানুষদের।
আরও শুনুন: দাড়ি-গোঁফ রাখা চলবে না, সংস্থার ‘আজব’ ফরমানে চাকরি হারালেন শতাধিক শিখ কর্মী
একুশ শতকে পৌঁছেও তৃতীয় লিঙ্গ কিংবা রূপান্তরকামী মানুষদের জন্য স্বনির্ভর হওয়ার যাত্রাটা খুব বেশি সহজ নয়। পেশাদার জগতে তাঁদের গ্রহণ করার ক্ষেত্রে প্রতিবন্ধকতা দেখা গিয়েছে বারেবারেই। সেখানে এই ধরনের মানুষের কাছে নতুন দিশা দেখাতে পারে সংস্থাটি। সংস্থার ডিরেক্টর প্রিয়া বাবু, ব্যক্তিজীবনে যিনি নিজেও একজন রূপান্তরকামী মানুষ, তাঁর মতে প্রথমবার এই ধরনের কোনও উদ্যোগ নেওয়া হল। কেন্দ্রের এমএসএমই প্রকল্প, অর্থাৎ ক্ষুদ্র, মাঝারি এবং কুটিরশিল্প বিভাগের অধীনে নথিভুক্ত হয়েছে এই সংস্থাটি। সুতরাং সরকারিভাবে আর্থিক সাহায্য পাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে সংস্থাটির। ‘ট্রান্স ফিল্মস’-এর ব্যানারে নির্মিত প্রথম শর্টফিল্মটি মুক্তি পেতে পারে চলতি বছরের আগস্ট মাসেই। আর ‘ট্রান্স পাবলিকেশন’ থেকে প্রকাশিত পাবে রূপান্তরকামী মানুষদের লেখা বই এবং এই বিষয়ক লেখালিখি। অর্থাৎ প্রিন্ট মিডিয়া এবং ভিজুয়াল মিডিয়া- দুই মাধ্যমেই সমাজের এই প্রান্তিক মানুষদের স্বর তুলে ধরার উদ্যোগ নিয়েছে সংস্থাটি।
আরও শুনুন: খাবার অর্ডারের সময় বাড়ির ঠিকানা ভুল দিল ছেলে, বাবার উত্তরে হেসে খুন নেটদুনিয়া
শুধু তাই নয়, এই দুই শাখার পাশাপাশি একটি ট্রান্সজেন্ডার লাইব্রেরিও গড়ে তুলেছে ওই সংস্থা। যেখানে ট্রান্সজেন্ডার সাহিত্যের পাশাপাশি থাকছে রূপান্তরকামীদের বিষয়ে আদালতের দেওয়া ১০ হাজার নয়া রায়ের সংগ্রহও। সব মিলিয়ে এলজিবিটিকিউ আন্দোলনের এক বড়সড় পদক্ষেপ হতে চলেছে এই সংস্থাটি।