পাশবালিশের পর আমাদের সবচেয়ে বিশ্বস্ত সঙ্গী তো ফেসবুকই। আমাদের সবরকম চাওয়া না-চাওয়া, ভালো লাগা মন্দ লাগার কথা একমাত্র তাকেই বলতে অভ্যস্ত হয়ে গিয়েছি আমরা। এ জগতে কেন্দ্র রাজ্য কেউ কথা না রাখুক, একমাত্র সে-ই আপনার কথা শোনার প্রতিশ্রুতি রেখেছে। সে না ফিরলে আপনার জীবন চলে কী করে! অন্য কেউ দল ছাড়ুক বা দলে ফিরুক, আপনার দলে সে-ই একমাত্র নির্ভরযোগ্য সেনা।
সে যে চলে গেল, বলে গেল না! সে কোথায় গেল, ফিরে এল না… না না, ফিরে এসেছে বইকি ফেসবুক। পাগলা দাশুর মতোই প্রস্থানের পর ফের মঞ্চে ফিরে এসে বুক ঠুকে ঘোষণা করেছে, ‘আবার সে এসেছে ফিরিয়া’। অবশ্য তার আলাদা করে ঘোষণার দরকারই বা কী! ফেসবুকের বলা কওয়ার লোকের অভাব নেই। মাইনের কানাকড়ি নেই, তবু তার ঢের ঢের মুখপাত্র। যাঁরা ফেসবুকে সারাক্ষণ নিজের কথা বলেন, ফেসবুকের ফেরা না-ফেরার খবর জানাতেও তাঁরাই যথেষ্ট। না জানিয়ে উপায় আছে? পাশবালিশের পর আমাদের সবচেয়ে বিশ্বস্ত সঙ্গী তো ফেসবুকই। আমাদের সবরকম চাওয়া না-চাওয়া, ভালো লাগা মন্দ লাগার কথা একমাত্র তাকেই বলতে অভ্যস্ত হয়ে গিয়েছি আমরা। এ জগতে কেন্দ্র রাজ্য কেউ কথা না রাখুক, একমাত্র সে-ই আপনার কথা শোনার প্রতিশ্রুতি রেখেছে। সে না ফিরলে আপনার জীবন চলে কী করে! অন্য কেউ দল ছাড়ুক বা দলে ফিরুক, আপনার দলে সে-ই একমাত্র নির্ভরযোগ্য সেনা।
-: আরও শুনুন :-
অনুরাগে যত রাগ! যেন সোশ্যাল মিডিয়া ছাড়া হারানোর কিছুই নেই
খোকাবাবুর প্রত্যাবর্তনে খোদ উত্তমকুমারের যা টিআরপি ছিল, ফেসবুকের ফিরে আসা তার চেয়ে ঢের বেশি হাইপ কুড়িয়ে নিয়েছে। তা আর হবে না? প্রায় ঘণ্টা দেড়েকের সোশাল লকডাউনে যে চোখে অন্ধকার দেখেছি আমরা! কোভিডের সময়কার লকডাউনে নাহয় ফেসবুকে মুখ গুঁজে ফেলা গিয়েছিল, কিন্তু ফেসবুকের লকডাউনে যাওয়ার জায়গা কই! সত্যি বলতে কি, বহুদিন হল কেউ আর কাউকেই জিজ্ঞাসাও করেন না যে, কেমন আছেন? কেননা সোশাল মিডিয়াই আজকাল মানুষের হয়ে সব কথা বলে দেয়। মানুষের সোশাল মিডিয়া ব্যবহারের গড় নকশাই এমন এক নতুন ভাষা তৈরি করে ফেলেছে, যা ছুঁয়ে ছুঁয়ে কোনও মানুষের একটা অবয়ব তৈরি করে নেওয়া চলে। ঠিক যেমন আমার আপনার সকলেরই একেকটা এমন ভারচুয়াল অবয়ব তৈরি করে ফেলেছে সোশাল মিডিয়া। এই যে কাউকে কিচ্ছুটি না বলে ফেসবুকের আচমকা দরজা বন্ধ করে দেওয়া, তাতে ওই অন্য আমিকে আর খুঁজে পাওয়া যাচ্ছিল না। লেখা হারিয়ে গেল কি না, ছবিও হারিয়ে গেল, হারিয়ে গেল ফেসবুকে শেয়ার করা গান কবিতা নাচের ভিডিও… এইসব নিয়ে মানুষের যে হাহাকার, আসলে এই সব হারানোর আড়ালে মূর্ত হয়ে উঠছে আরও এক হারানোর ভয়। আমার ওই অন্য আমি, যে আমি সোশাল মিডিয়ায় নিত্য বিরাজমান, তাকে তো আর কোথাও খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। যারা ডিজিটাল মিডিয়ায় কাজের সঙ্গে যুক্ত, তাঁরা ছাড়াও বিপুলসংখ্যক আমজনতাই কিন্তু হন্যে হয়ে ফেসবুকের দরজা ঠেলে চলেছিলেন ওই ঘণ্টা দেড়েক। কারণ সবার উপর সোশাল মিডিয়া সত্যি! যেন তাহার উপর নাই!
-: আরও শুনুন :-
বছরের বাড়তি দিনে যা বলাই বাহুল্য
মানুষ কী বলে, কী করে, তার উপর ভিত্তি করেই তার ইমেজ গড়ে ওঠে। কিন্তু বর্তমানে এমন একটা সময়ে এসে আমরা পৌঁছেছি, যেখানে ওই বলা কওয়া সবকিছুরই প্ল্যাটফর্ম একটাই। আমাদের বসার ঘর নেই, চায়ের ঠেক নেই, মিছিলে হাঁটা নেই, পার্কের আঙুল ছোঁয়া ও নেই। আমাদের প্রেম থেকে প্রতিবাদ, আড্ডা থেকে আপ্যায়ন- সবকিছুর এক ও একমাত্র গন্তব্য সোশাল মিডিয়া। আপনার সোশাল সিলেবাস যা বলছে, তা যে আপনি বাস্তবে হবেনই, তার কোনও মানে নেই। অর্থাৎ আপনি যা নয়, অথচ নিজেকে যেভাবে দেখাতে চান, তার একটা রেপ্লিকা বাজারে ছড়িয়ে দিতে পারেন। অথচ সেই সোশালের বাজারেই কারও ছবি দেখে আমরা ঠিক করি তিনি ভালো আছেন কি নেই। কোনও কিছু ঘটলে ফেসবুকেই আমরা পোস্ট লিখি কিংবা অন্য কারও প্রতিবাদে সলিডারিটি জানিয়ে বলি, ‘মোর পাওয়ার টু ইউ’। যাকে নিয়ে প্রতিবাদ করা হচ্ছে, পথে তার সঙ্গে দেখা হলেও আর প্রতিবাদের দায় থাকে না- কেননা দুটো তো আলাদা দুনিয়া। অন্যরাও আমাদের ফেসবুকের প্রতিবাদ বা প্রতিরোধের ইমেজেই চিনে রাখে, আমরাও নিজেদের সেই ইমেজেই বাঁচি। আসলে কি প্রতিবাদ দানা বাঁধল? আসলে কি কারও পাশে থাকা গেল? সোশালের উইন্ডো ঠেলে সেই আসলে আর পৌঁছনো হয়ে ওঠে না আমাদের, অথবা সেই পৌঁছনোর পথটাই আমরা ভুলে গিয়েছি।
সাম্প্রতিক কালে এক সমীক্ষা জানিয়েছিল, দেশের ১০ থেকে ১৭ বছর বয়সি শিশু-কিশোরদের প্রায় ৪৩ শতাংশ কোনও না কোনও সোশাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্মের সঙ্গে যুক্ত। একেবারে তৃণমূল স্তর থেকেই যখন এই সোশাল মিডিয়া যাপন শুরু হয়ে গিয়েছে, তখন গোটা দেশের ছবিটা আন্দাজ করাই যায়। ফেসবুকের একেকটা আলো জ্বলা নামই যেখানে আমাদের পরিচয়, সেখানে নাম হারিয়ে যাওয়ার ভয় না পেয়ে আমরাই বা কোথায় যাব!