সন্তান রাজনীতিতে নামবে, এমনটা অনেক বাবা-মাই চান না। কিন্তু এক্ষেত্রে ঠিক তার উলটোটা হয়েছে। নিজের মেয়েকে রাজনীতি যোগদানে উৎসাহ যুগিয়েছেন বাবা-ই। এমনকি সম্পত্তি বেচে মেয়ের নির্বাচনী লড়াইয়ের খরচ যুগিয়েছেন ওই ব্যক্তি। কার কথা বলছি? আসুন শুনে নেওয়া যাক।
নির্বাচনে লড়াই মোটেও সহজ ব্যাপার নয়। প্রথমে দলের ছাড়পত্র। তারপর এলাকার মানুষের সহযোগিতা। সঙ্গে থাকতে হবে টাকার জোরও। নাহলে প্রচারের খরচ যোগাতে হিমিসিম খেতে হবে। অনেকসময় ট্যাঁকের জোর না থাকলে, প্রার্থীকে টিকিটও দিতে চায় না দল। তাই নির্বাচনে লড়তে সম্পত্তি পর্যন্ত বেচতে হয় প্রার্থীদের। তবে এক্ষেত্রে প্রার্থী কিছু করেননি। সম্পত্তি বেচে ভোটের খরচ যুগিয়েছেন তাঁর বাবা।
আরও শুনুন: গেরুয়া মানেই দল! রং না বদলেও সম্ভব গেরুয়াকরণ
ঘটনাটি ওড়িশার। সে রাজ্যের কেদ্রাপাড়া জেলার আউল বিধানসভা কেন্দ্রের এবারের কংগ্রেস প্রার্থী দেবস্মিতা শর্মা। পেশায় সরকারি চিকিৎসক। তবে ভোটের আগে সে চাকরি ছেড়েছেন দেবস্মিতা। বদলে যোগ দিয়েছেন রাজনীতিতে। নিজের ইচ্ছায় সবটা করেছেন বললে ভুল হয়। রাজনীতির ময়দানে নামার জন্য উৎসাহ যুগিয়েছেন তাঁর বাবা দেবেন্দ্র শর্মা। যিনি নিজে ওই এলাকার বিধায়ক ছিলেন। তবে আসন্ন নির্বাচনে শারীরিক অসুস্থতার কারণে প্রার্থী হতে পারেননি দেবেন্দ্র। তাঁর জায়গায় দাঁড় করিয়েছেন মেয়ে দেবস্মিতাকে। দলও ছাড়পত্র দিয়েছে। কিন্তু নির্বাচনের খরচ সামলানো তো মুখের কথা নয়। বিশেষ করে প্রচারের সময় যথেষ্টই টাকা খরচ করতে হয় প্রার্থীদের। তাই মেয়ের জন্য সম্পত্তির বেশ কিছুটা বিক্রি করেছেন দেবেন্দ্র। আর একথা সামনে আসতেই শোরগোল পড়েছে। যেখানে সন্তান রাজনীতিতে আসুক, এটাই মেনে নিতে পারেন না কিছু পরিবার, সেখানে মেয়ের জন্য এমন পদক্ষেপ বিরলই বটে।
আরও শুনুন: হিন্দুত্ব বা সঙ্ঘ নিয়ে ধারণা নেই, মোদিই রোল মডেল, তাই প্রার্থী মুসলিম ব্যক্তি
তবে এমনটা নতুন নয়। দেবেন্দ্রর কথায়, তাঁর পরিবার বহু আগে থেকেই রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত। ১৯৬৭ সালে বিধায়ক হয়েছিলেন তাঁর বাবা দিবাকর নাথ শর্মা। তিনিও ছেলে অর্থাৎ দেবেন্দ্রকে রাজনীতির ময়দানে নামতে উৎসাহ যোগাতেন। এমনকি ছেলেকে নির্বাচনে আর্থিক সাহায্য করতে জমি জায়গাও বিক্রি করেন। তাই মেয়ের জন্য একই কাজ করে নতুন কিছু করলেন বলে মনে করছেন না দেবেন্দ্র। এছাড়া তিনি নিজেও এর আগে নির্বাচন লড়তে সম্পত্তি বেচেছেন। বেশ কয়েকবার প্রার্থী হলেও জিতেছিলেন, ২০১৪ সালে। তাতে কি! লড়াই থামাননি। আসন্ন নির্বাচনে নিজে না পারলেও মেয়েকে দিয়েই লক্ষপূরণ করতে চাইছেন দেবেন্দ্র। মেয়ে জয়ী হলে, শর্মা পরিবারের তিন প্রজন্ম রাজনীতির সঙ্গে সরাসরি যুক্ত হবেন। মেয়ে দেবস্মিতাও সেই আশাতেই বুক বেঁধেছেন। বাবার স্বপ্ন সত্যি করতে দিনরাত এক করে প্রচারও শুরু করেছেন তিনি। এমনিতেই ওই এলাকা তেমন উন্নত নয় বললেই চলে। বেশিরভাগ পরিবারই চাষবাসের উপর নির্ভরশীল। তাই সেখানকার মানুষজন কীভাবে আরও উন্নত জীবন পেতে পারেন, সেই ব্যবস্থাই করতে চান দেবস্মিতা।