চাঁদের মাটিতে পা রাখার স্বপ্ন ছিল বরাবরের। কিন্তু ভাগ্যে না থাকলে এ সুযোগ মেলা ভার। যোগ্যতা থাকলেও জীবদ্দশায় চাঁদে যাওয়া হয়ে ওঠেনি এই বিজ্ঞানীর। তবে মৃত্যুর পর চাঁদে যাওয়ার সুযোগ তিনি পেয়েছেন। কার কথা বলছি? আসুন শুনে নিই।
বাঙালির গল্প, ছড়ার চাঁদ বহু আগেই বিজ্ঞানীদের হাতের মুঠোয় এসেছে। চাঁদের মাটিতে মহাকাশযান পাঠানো তো বটেই, পৃথিবীর এই উপগ্রহে সশরীরে হাজিরও হয়েছেন বিজ্ঞানীরা। কোনও একটা দেশ নয়, চাঁদের মাটি ছোঁয়ার নজির গড়েছে বিশ্বের একাধিক দেশ। সম্প্রতি তালিকায় ভারতের নামও যোগ হয়েছে চন্দ্রযান ৩-এর মাধ্যমে। সেই চাঁদেই রয়েছে এক বিজ্ঞানীর সমাধি।
আরও শুনুন: বই পড়লে শাস্তি মাফ! কোন সংশোধনাগারের বন্দিরা পান এই সুযোগ?
শুনতে অবাক লাগলেও সত্যি। আমেরিকান ভূতত্ত্ববিদ ইউজিন মেরেলা সুমেকার-এর সমাধি পৃথিবীর বাইরে। আসলে স্রেফ ভূতত্ত্ববিদ বললে, তাঁর পরিচয় সম্পূর্ণ হয় না। মহাকাশ বিজ্ঞানেও তাঁর অবদান নেহাতই কম নয়। আর সেই সুবাদেই চাঁদের মাটিতে তাঁর সশরীরের শেষ অবশেষ পাঠানো হয়। আমেরিকান এই বিজ্ঞানী, দির্ঘদিন মহাকাশ গবেষণা কেন্দ্র নাসা-র সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। তাঁর আমলেই চাঁদে মানুষ পাঠানোর সিদ্ধান্ত নেয় নাসা। ১৯৬৯ সালে সেই মিশনের নাম ছিল অ্যাপেলো ১১। চাঁদের মাটিতে পা রাখা প্রথম মহাকাশ বিজ্ঞানী নীল আর্মষ্ট্রং ছিলেন এই মিশনের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ সদস্য। তবে তাঁর কাজ ছিল চাঁদের পরিবেশ বা সেই সংক্রান্ত গবেষণা করা। এদিকে সুমেকারের দায়িত্ব ছিল চাঁদের মাটিতে গহ্বর কোথায় কেমন রয়েছে সেই খোঁজ নেওয়া। আর এই কাজ সেরে নিতে হবে আগেভাগেই। এতদিনে চাঁদের যা ছবি উঠেছে স্যাটেলাইটের মাধ্যমে, সেইসব খুটিয়ে দেখে এবং আরও কিছু বিষয় দেখেশুনে এই কাজ করতে শুরু করেন সুমেকার। ঠিক ছিল, এই মিশনের সঙ্গে জড়িত বিজ্ঞানীরা চাঁদে যাওয়ার সুযোগ পাবেন। আর এই স্বপ্ন সুমেকার দেখে এসেছেন ছোট থেকেই। বরাবরের মেধাবী ছাত্র সুমেকার নিএর কাজের জায়গাতেও বেশ দক্ষ ছিলেন। তাই তাঁকে চাঁদে পাঠানোর সিদ্ধান্ত একবারেই নিয়ে নেয় কর্তৃপক্ষ। কিন্তু বাদ সাধে তাঁর শরীর। মেডিক্যাল টেস্টে ধরা পড়ে অ্যাডিসন রোগ। যা একধরনের আভ্যন্তরীণ সমস্যা বলা চলে। নিয়ম অনুযায়ী চাঁদে যাওয়ার ক্ষেত্রে বিজ্ঞানীদের শরীর সম্পূর্ণ সুস্থ থাকা আবশ্যক। তার ওপর সুমেকার যে সমস্যায় ভুগছিলেন তা নিয়ে চাঁদে গেলে অসুস্থ হয়ে পড়তেন। তাই চিরকালের মতো তাঁর চাঁদে যাওয়ার স্বপ্নে ছেদ পড়ে।
আরও শুনুন: মুদ্রায় খোদাই রাম-সীতার ছবি, সমন্বয়ের বার্তা দিয়েছিলেন সম্রাট আকবর
নির্ধারিত সময় চাঁদের উদ্দেশে রওনা দেয় মার্কিন মহাকাশযান। চাঁদের মাটিতে প্রথম মানুষ হিসেবে পা-ও রাখেন নীল আর্মষ্ট্রং। এদিকে, অবসরের পর দেশ বিদেশ ঘুরে সময় কাটাতে থাকেন সুমেকার। ১৯৯৭ সালে এক পথ দুর্ঘটনায় তাঁর মৃত্যু হয়। এরপরই এমন একজন বিজ্ঞানী ভূতাত্তিককে শেষ সম্মান জানাতে বিশেষ সিদ্ধান্ত নেয় নাসা। সেই বছরই চাঁদের উদ্দেশে পাঠানো হয় আরও এক মহাকাশযান ‘লুনার প্রসপেক্ট’। যার মধ্যে ছিল সুমেকারের অস্থি। চিরকালের মতো যা পাঠিয়ে দেওয়া হয় চাঁদে। আসলে, যার সারা জীবনের ইচ্ছা ছিল চাঁদে যাওয়ার, তাঁকে এর থেকে বেশি সম্মান আর কীভাবেই বা দেওয়া যায়। এভাবেই মৃত্যুর পর শেষ ইচ্ছা পূরণ হয় আমেরিকান ভূতাত্তিক মেরেলা সুমেকারের।