এদেশের কোনও ঐতিহ্যবাহী স্থাপত্যে লিফট বসছে এই প্রথমবার। হ্যাঁ, ইউনেস্কো কর্তৃক হেরিটেজ সাইট বলে চিহ্নিত ইলোরা গুহাতেই এবার যুক্ত করা হচ্ছে হাইড্রলিক লিফটের সুবিধা। সম্প্রতি এমনটাই জানিয়েছে আর্কিওলজিক্যাল সার্ভে অফ ইন্ডিয়া। আসুন, শুনে নেওয়া যাক।
‘কৈলাসে কেলেঙ্কারি’, তথা কৈলাস মন্দিরে একটি খুনের রহস্যভেদ করেছিল বাঙালির প্রিয় গোয়েন্দা চরিত্র ফেলুদা। যে কৈলাস কার্যত শিবের মন্দির হলেও আদতে তার ঠিকানা শিবের বাসভূমি কৈলাসে নয়, বরং মহারাষ্ট্রের ইলোরা গুহা। আর সেই কৈলাস গুহাটিকেই এবার নব অবতারে সাজানোর ঘোষণা করল আর্কিওলজিক্যাল সার্ভে অফ ইন্ডিয়া। সেই সূত্রেই প্রথমবার এদেশের কোনও ঐতিহ্যবাহী স্থাপত্যে লিফট বসানোর সংবাদ সামনে এল। বস্তুত যে প্রাচীন শিল্পকীর্তিগুলির জন্য এ দেশ বিশ্বের দরবারে গৌরবের দাবি জানাতে পারে, ইলোরা গুহা তার মধ্যে অন্যতম। মহারাষ্ট্রের আওরঙ্গবাদ শহর থেকে ৩০ কিমি দূরে অবস্থিত এই প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শনটিতে এই অঞ্চলের মধ্যে সবচেয়ে বেশি দর্শক সমাগম হয়। কেবল দেশের মানুষই নন, এখানে প্রতিদিন ভিড় জমান অসংখ্য বিদেশি দর্শকও। কিন্তু পাথর কেটে বানানো, বা বলা ভাল পাহাড় খোদাই করে তৈরি করা এই আশ্চর্য শিল্পকীর্তি ভালভাবে ঘুরে দেখতে পারেন না অনেক পর্যটকই। বাধা হয়ে দাঁড়ায় শারীরিক দুর্বলতা। বিশেষভাবে সক্ষম মানুষদের পক্ষেও ইলোরা গুহার পার্বত্য উপত্যকা ঘুরে দেখা রীতিমতো কষ্টকর। সেইসব মানুষদের কথা ভেবেই ইলোরা গুহাকে আরও বেশি পর্যটনবান্ধব করে তোলার উদ্যোগ নিয়েছে আর্কিওলজিক্যাল সার্ভে অফ ইন্ডিয়া। সেইমতো ৫০০ মিটার এলাকা জুড়ে ছড়িয়ে থাকা এই অঞ্চলটিকে সাজিয়ে তুলতে একাধিক সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে এএসআই-এর তরফে। তার মধ্যেই অন্যতম এই লিফটের ব্যবস্থা।
আরও শুনুন: মহিলা সরকারী কর্মীদের জন্য ঋতুকালীন ছুটির কথা ভাবছে না সরকার, জানালেন স্মৃতি ইরানি
মহারাষ্ট্রের দুটি প্রাচীন মন্দির এলাকা অজন্তা এবং ইলোরার গুহার দেওয়াল জুড়ে ছড়িয়ে আছে ইতিহাস। পাথরের ভাঁজে ভাঁজে এখানে মিলেমিশে গিয়েছে ইতিহাস, ধর্ম আর শিল্প। তাও কোনও একটিমাত্র ধর্ম নয়। ইলোরা গুহার শিল্পস্থাপত্যে হিন্দু ধর্মের চিহ্নবাহী স্তম্ভ, মণ্ডপ; দেবদেবী, যক্ষ, গন্ধর্ব, অপ্সরার মূর্তি; রামায়ণের কাহিনি সংবলিত ১৭টি গুহার পাশাপাশি একইসঙ্গে সহাবস্থান করছে বৌদ্ধ ধর্মের বিভিন্ন প্রতীক ও জাতকের কাহিনি অবলম্বনে খোদাই করা ১২টি গুহা, এমনকি পার্শ্বনাথের মন্দির-সহ খান পাঁচেক জৈন গুহাও। অর্থাৎ কেবল অতুলনীয় শিল্পকীর্তিই নয়, ইলোরা গুহার মধ্যে দিয়ে সেই বার্তাও বাহিত হয়ে চলেছে, যে সমন্বয়ের ভাবনাকে ছুঁয়ে ছিল প্রাচীন ভারত। ইলোরার এই ৩৪টি গুহার মধ্যে অন্যতম ১৬ নম্বরে থাকা কৈলাস গুহা। বিশালাকার এক পাহাড় কেটে কেটে গড়ে তোলা এই স্থাপত্যটি আসলে দোতলা। পর্যটকদের কাছে অত্যন্ত আকর্ষণের এই গুহাটিতে সিঁড়ি রয়েছে, হুইলচেয়ারের চলাচলের জন্য রয়েছে র্যাম্পও। তবুও পর্যটকদের আরও সুবিধার কথা ভেবে এই বিশেষ গুহাটির দুদিকেই ছোট হাইড্রলিক লিফট বসানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে আর্কিওলজিক্যাল সার্ভে অফ ইন্ডিয়া। মাত্র ৯ বর্গফুটের এই লিফটে অনায়াসেই জায়গা হয়ে যাবে একটি হুইলচেয়ারের। তবে যাতে এই প্রযুক্তির সুবিধা নিতে গিয়ে প্রাচীন স্থাপত্যের কোনোরকম ক্ষতি না হয়, সেদিকেও বিশেষভাবে নজর রাখার কথা জানিয়েছেন আধিকারিকেরা। এ ছাড়াও একাধিক টিকিট কাউন্টার, শৌচাগার, স্যানিটারি ন্যাপকিন ভেন্ডিং মেশিনের ব্যবস্থা করার কথাও ভাবা হয়েছে। পাশাপাশি গুহাতে পর্যাপ্ত আলোর ব্যবস্থা করা এবং প্রয়োজনমাফিক সংস্কারকাজও চালিয়ে যাওয়া হবে বলেই জানিয়েছেন আর্কিওলজিক্যাল সার্ভে অফ ইন্ডিয়া কর্তৃপক্ষ।