মহিলার বয়স প্রায় পঞ্চাশ বছর। অকালে প্রয়াত হয়েছিলেন তাঁর স্বামী। তাই নতুন করে বসছেন বিয়ের পিঁড়িতে, শুরু করছেন নতুন জীবন। তবে এটুকু বললে আসলে কিছুই বলা হয় না। কেননা, এই পঞ্চাশে পৌঁছে নতুন জীবন শুরু করার ক্ষেত্রে তাঁকে রাজি করিয়েছেন তাঁরই মেয়ে। মেয়ের ইচ্ছেতেই হল মায়ের বিয়ে। আসুন শুনে নিই সেই গল্প।
তখন তাঁর বয়স মাত্র ২৫। চিকিৎসক স্বামী আর ছোট্ট মেয়েকে নিয়ে ছিল সুখের সংসার। আচমকাই ছন্দপতন। মস্তিষ্কের রক্তক্ষরণের দরুন মৃত্যু হয় স্বামীর। তারপর থেকে শুরু হল নতুন লড়াই। ছোট্ট মেয়েকে বড় করে তোলাই তখন জীবনের একমাত্র লক্ষ্য ছিল তাঁর। আর সেই করতে করতে কবে যে কেটে গিয়েছে জীবনের পঁচিশটা বছর, তা যেন খেয়ালই করেননি তিনি। পঁচিশের সেই তরুণী এখন পঞ্চাশের প্রৌঢ়া। তবু জীবন যেন তাঁর জন্য সাজিয়ে রেখেছিল অপ্রত্যাশিত চমক। আর তাই পঞ্চাশে এসে তিনি শুরু করলেন নতুন জীবন। আর সে জীবনের দিকে তাঁকে হাত ধরে এগিয়ে দিলেন তাঁরই কন্যা।
আরও শুনুন: হিন্দু স্ত্রীর জন্য নিজেই ধর্মান্তরিত হলেন মুসলিম ব্যক্তি, নাম হল কৃষ্ণ সনাতনী
এ গল্প মৌসুমী চক্রবর্তী এবং তাঁর কন্যা রিয়ার। বাবা যখন প্রয়াত হয়, তখন রিয়া ছোট্টই। মায়ের একাকীত্ব বোঝার মতো বয়স ছিল না তার। এদিকে স্বামীর মৃত্যুর পর মৌসুমী তাঁর বাবার বাড়ি চলে যান। পেশায় শিক্ষিকা তিনি। নিজের উপার্জনে বড় করে তোলেন মেয়েকে। মেয়ে বড় হয়ে মায়ের একাকী জীবনের বেদনা বুঝতে পারেন। কিন্তু মাকে আবার বিয়ের জন্য রাজি করানো কি চাট্টিখানি কথা! এর জন্য কম কাঠখড় পোড়াতে হয়নি রিয়াকে! অনেক বুঝিয়েছেন মাকে। বলছেন, অন্তত কারও সঙ্গে বন্ধুত্ব করতে। যাতে তাঁর একাকীত্ব কাটে। সেই শুরু। এরপর মেয়ে মাকে বোঝান সম্পর্কের বিষয়ে। প্রথমে গররাজি হলেও মৌসুমী রাজি হন নতুন জীবন শুরু করতে। স্বপন নামে এক ব্যক্তির সঙ্গে গাঁটছড়া বাঁধেন তিনি। তিনিও এতদিন অবিবাহিত ছিলেন। মায়ের বিয়ের সেই ছবিই সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাগ করে নিয়েছেন মেয়ে। জানিয়েছেন, এই হল তাঁদের সুখী পরিবার। মজা করে বলেছেন, নতুন জীবন পেয়ে তাঁর মা বেশ খুশি। কেননা আগে প্রায় সবকিছুতেই তিনি খিটখিট করতেন, কিন্তু এখন আর করেন না।
আরও শুনুন: শিঙাড়া খাওয়াও ধর্মবিরুদ্ধ! কোন দেশে চালু আছে এই নিয়ম?
মেয়ের এই কীর্তিতে প্রশংসায় পঞ্চমুখ নেটিজেনরা। সন্তানের কথা ভেবে মায়েরা নিজেদের জীবন উৎসর্গ করেন। সে তো জানা কথাই। কিন্তু মায়ের জীবনের সুখ-অসুখ দেখা, তাঁদের অনুভূতিকে সম্মান করাও যে সন্তানের কর্তব্য, সে কথাই যেন মনে করিয়ে দিয়েছেন রিয়া।