ভারত কামসূত্রের দেশ। খাজুরাহোর মন্দির গাত্রে এখানে শোভা পায় অপরূপ সব মিথুন মূর্তি। সেই দেশেই পর্ন তৈরি নিয়ে হইচই। ভারতীয় আইনে পর্ন তৈরি এবং বিক্রি নিষিদ্ধ। তথ্য বলছে ইন্টারনেটমুখী জনতা কিন্তু পর্নে মগ্ন। এহেন পরিস্থিতিতে আমাদের কি ভেবে দেখা উচিত?
বছর পনেরো আগে নেহা ধুপিয়া ঘোষণা করেছিলেন, ভারতে দুটো জিনিস চলে- ‘সেক্স আর শাহ্রুখ খান’। মন্দ বলেননি নেহা। ইদানীং ভারত জুড়ে পর্ন কাণ্ড নিয়ে চলছে নিদারুণ হইচই।
তা দেখে অবশ্য অনেকেই বিস্মিত। কারণ অনেক। আমাদের বাংলা ইন্ডাস্ট্রির কথাই ধরুন। সিনেমায় শয্যাদৃশ্য দেখাতে ছিল বিস্তর আপত্তি এবং অসুবিধে। বঙ্গীয় ভদ্রলোককূল সেইসব পরিবারের সঙ্গে বসে দেখবেন! সংস্কৃতির তাহলে কি দশা হবে! অতএব আমাদের সিনেমা দেখিয়েছে ফুলশয্যা বা ঘনিষ্ঠতা মানেই পায়ে পা ঘষা। হিন্দি সিনেমার ট্রেন্ড ছিল অন্য। অন্ধকার বৃষ্টির রাতে হয় নায়ক-নায়িকার ঘনিষ্ঠতা। খলনায়ক নায়িকাকে হেনস্তা, বলপূর্বক ঘনিষ্ঠতার চেষ্টা করবে, নায়ক মসিহা হয়ে তাকে বাঁচাবে।
আরও শুনুন: সেকালের বাইজিরা কি যুক্ত ছিলেন যৌনপেশায়?
আট এবং নয়ের দশকে সিনেমাহলে আসত অজস্র বি গ্রেড ফিল্ম। বম্বেতেও চলত একটি প্যারালাল ইন্ডাস্ট্রি। একটু উষ্ণতার জন্য সেই সিনেমা দেখতে হামলে পড়ত অনেকেই। যখন সিনেমাহলে নিয়মিত বিদেশি সিনেমার রমরমা। ঘনিষ্ঠ দৃশ্য থেকে অন্যান্য অনায়াস প্রদর্শন চলে। সেখানে আমাদের সিনেমাহলে এই বি গ্রেড ছবি দেখতে এবং দেখাতে ছুঁতমার্গের অন্ত ছিল না। নব্বই দশকের পর থেকে ডিভিডি এবং পরের দশক থেকে অনলাইনে ধীরে ধীরে শুরু হল পর্নের রমরমা। এই নতুন দশকের শুরুতে যেখানে ইন্টারনেট ক্রমশ সস্তা হয়ে উঠছে সেখানে পর্ন দেখা হয়ে উঠল রীতিমতো জলভাত। এখন সবাইয়ের হাতে শোভে স্মার্টফোন। সস্তার ইন্টারনেট তো রয়েছেই। ফলে পর্ন দেখা এখন আরও জলভাত।
বছর পাঁচেক আগের একটি সমীক্ষায় জানা গিয়েছিল, ভারতে ইন্টারনেট পর্নগ্রাফি প্রবল জনপ্রিয়। ইন্টারনেটের মোট জনতার ৩০-৭০% অনায়াস অবাধ যাতায়াত এইসব পর্ন সাইটে। টেলিফোন সংস্থাগুলি তাদের রেভেনিউর সিংহভাগ অংশ এই জনতাদের থেকে আদায় করে।
আরও শুনুন: একঘেয়েমি না-পসন্দ, কীরকম পর্ন পছন্দ করে মেয়েরা?
দুঃখ ছিল অনেকেরই। পর্ন সাইটে গেলে, ভারতের উপস্থিতি নগণ্য। অথচ ভারত কামসূত্রের দেশ। এখানে চর্চা হত ছত্রিশ কলার। কাংড়া থেকে মুঘল যুগ সব ক্ষেত্রেই যুগল ঘনিষ্ঠতার ছিল প্রাধান্য। খাজুরাহো থেকে কোনার্কের মন্দিরগাত্রে অজস্র মৈথুনমূর্তি সেই সাক্ষ্য বহন করে। বাৎসায়ন যেসব কামকলার কথা বলেছেন সে কতটা শিল্প, কতটা ব্যবহারিক জীবনে প্রয়োগের সে নিয়ে বিস্তর ব্যবধান ছিল। সেই নিয়ে অনেকেরই বিশেষ ধ্যান ধারণাও নেই। অথছ পাশ্চাত্যের মানুষ বারবার ভারতে ছুটে এসেছেন, খাজুরাহো, যোগ, বাৎসায়নের কামকলার উৎস সন্ধানে। অথছ আমাদের এখানে সঠিক সেক্স এডুকেশনের পাঠ অবধি হয়নি। টিভিতে স্যানিটারি ন্যাপকিন অথবা কন্ডোমের বিজ্ঞাপন এলে আমরা চ্যানেল ঘুরিয়ে বা মিউট করে দিয়েছি আমরা সম্মতি বা কনসেন্ট শব্দের ব্যবহারিক অর্থ শিখিনি।
বাকিটা শুনে নিন প্লে-বাটন ক্লিক করে।