বিশেষভাবে সক্ষম দুই কন্যার হাত ধরেই পৃথিবীকে অন্যভাবে চিনতে শিখেছেন, মানলেন খোদ সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতি ডি ওয়াই চন্দ্রচূড়। ঠিক কী বললেন তিনি? আসুন, শুনে নেওয়া যাক।
দেশের শীর্ষ আদালতের প্রধান বিচারপতি। তাঁর মতের উপর দাঁড়িয়ে থাকে গোটা দেশের বহু বড় বড় সিদ্ধান্ত। কোন পরিস্থিতিকে তিনি কীভাবে দেখছেন, তার দিকে তাকিয়ে থাকে দেশবাসী। সেই বিচারপতি চন্দ্রচূড়ই বলছেন, কীভাবে পৃথিবীকে দেখব, সেই দেখার ধরনটাই বদলে দিয়েছে আমার দুই মেয়ে। যারা দুজনেই বিশেষভাবে সক্ষম। এ কথা তো বলার অপেক্ষা রাখে না যে, বিশেষভাবে সক্ষম মানুষদের জন্য আমাদের সমাজ এখনও সর্বতোভাবে সংবেদনশীল হয়ে উঠতে পারেনি। তাদের কার্যত প্রান্তিক করেই রাখতে চান অনেকেই। কিন্তু বিশেষভাবে সক্ষম দুই মেয়ের বোধ আর বুদ্ধিকে মান্যতা দিয়ে যেন সেই দেওয়ালটাই সরিয়ে দিতে চাইলেন প্রধান বিচারপতি চন্দ্রচূড়।
সম্প্রতি ‘Protecting the Rights of Children Living with Disability and Intersectionality of Disabilities’, অর্থাৎ বিসেশভাবে সক্ষম শিশুদের যাপন বিষয়ে এক জাতীয় সেমিনারে যোগ দিয়েছিলেন শীর্ষ আদালতের প্রধান বিচারপতি। সেখানেই নিজের দুই মেয়ের কাছে কার্যত ঋণ স্বীকার করেন তিনি। চন্দ্রচূড়ের দুই পালিতা কন্যা মাহি এবং প্রিয়ঙ্কার বয়স বর্তমানে আঠেরো এবং বাইশ। তাঁরা দুজনেই নেমালাইন মায়োপ্যাথি নামে একটি বিরল রোগে আক্রান্ত। যে রোগ সম্পর্কে স্বাস্থ্যকর্মীদের মধ্যেও জানাশোনা কম। ফলে তার বাইরের দুনিয়ায় এই রোগ ও তার যত্ন নেওয়ার বিষয়ে আরও বেশি করে উদাসীনতা ছড়িয়ে আছে। এই পরিস্থিতিতে কী কী প্রতিকূলতা পেরিয়ে দুজনের বেড়ে ওঠা, সেই কথা জানিয়েই চন্দ্রচূড় বলেন, দুই কন্যার এই কঠিন পথ পেরোনো তাঁর এবং তাঁর স্ত্রীর মনের জোর বাড়িয়েছে।
চন্দ্রচূড় জানিয়েছেন, চিকিৎসার প্রয়োজনে একবার একটি টেস্ট করতে হয়েছিল তাঁর দুই কন্যাকেই। সেখানে অ্যানেস্থেশিয়া ছাড়াই কোশের এক অংশ সরিয়ে ফেলতে হত। অসম্ভব যন্ত্রণার সেই পরীক্ষা পেরিয়ে প্রিয়ঙ্কা কেবল বলেছিলেন, ছোট বোনকে যেন এই টেস্ট না করানো হয়। কন্যাদের এই মানসিক জোরকেই কুর্নিশ জানিয়েছেন চন্দ্রচূড়। জানিয়েছেন, মেয়েরাই তাঁকে বুঝিয়েছে জীবনযাপনে নিষ্ঠুরতা ত্যাগ করার কথা। তাদের দ্বারা অনুপ্রাণিত হয়েই ভেগান মতে জীবনযাপন করেন চন্দ্রচূড় এবং তাঁর স্ত্রী কল্পনা। নিরামিষ খাওয়ার পাশাপাশি তিনি বা তার স্ত্রী কেউই সিল্ক বা চামড়ার পণ্য কেনেন না, যেহেতু সেখানে কোনও না কোনও প্রাণীর ক্ষতি জড়িয়ে আছে। আপাতভাবে যে সূক্ষ্ম ক্ষতিগুলি আমাদের চোখে পড়ে না। দুই মেয়ের হাত ধরেই সেই সূক্ষ্ম সংবেদনের কাছে পৌঁছেছেন, নির্দ্বিধায় জানালেন দেশের শীর্ষ আদালতের প্রধান বিচারপতি।