প্রচণ্ড গরমের হাত থেকে বাঁচতে কেউ বাড়িতে এসি লাগান, কেউ বা কেনেন এয়ার কুলার। কেউ বা আবার তাপ রুখতে ছাদটাকেই ঘিরে ফেলেন অ্যাডবেসটাস দিয়ে। তবে গাড়ি ঠান্ডা রাখতে এমন অভিনব ব্যবস্থার কথা সম্ভবত কেউ কখনও শোনেনি! না, ফ্যান, এসি কিংবা গাছ কোনওটাই লাগাননি তিনি। বরং গোটা গাড়িটাকে মুড়ে দিয়েছেন এমন জিনিস দিয়ে, যেটা শুনলে আপনি নাক সিঁটকোতেই পারেন। কী সেই জিনিস? আসুন, শুনে নেওয়া যাক।
যে ভাবে দিন কে দিন তাপমাত্রার পারদ চড়ছে, তাতে প্রাণ ওষ্ঠাগত মানুষের। বাড়িতে নাহয় ছায়ায় ছায়ায় থাকা সম্ভব, ফ্যানের তলায় একটু জিরিয়ে নেওয়াও যায়, তবে রাস্তাঘাটে সেসব সুবিধা কোথায়? বরং রোদে রোদে ঘুরে গাড়ির ধাতব শরীর আরও তেঁতে ওঠে। ফলে গাড়ির চালক ও যাত্রীদের জন্য টেকা দায় হয়ে ওঠে সেই গাড়িতে। এসব ভেবেচিন্তেই একটা ব্যবস্থা করে ফেলেছেন পুণের এই গাড়ির মালিক।
নিজের ‘মারুতি অমনি’ গাড়িটির সারা গায়ে তিনি লেপে ফেলেছেন গোবর। আর তাতে নাকি গাড়িটি ঠান্ডা থাকবে বলেই বিশ্বাস তাঁর। মারাত্মক গরমের প্রকোপ থেকে বাঁচতে এমনই অভিনব ব্যবস্থা নিয়েছেন ওই ব্যক্তি।
আরও শুনুন: উত্তীর্ণ দশম শ্রেণির বোর্ডের পরীক্ষায়, নিজের ছবি দিয়ে এলাকায় ফ্লেক্স লাগাল কিশোর
তা সত্যিই কি গোবর তাপ কমাতে সাহায্য করে? না শুধুমাত্র বিশ্বাসের বশেই এমন কাজ করেছেন তিনি? কী বলছেন বিশেষজ্ঞেরা?
গোবরের যে বিশেষ তাপরোধী গুণ বা থার্মাল ইনসুলেশনের ক্ষমতা থাকে, সে বিষয়টি একবাক্যেই মেনেছেন তাঁরা। সেই জন্যই গ্রামের দিকে আজও মাটির বাড়ির মেঝে ও দেওয়ালে গোবর লেপার রেওয়াজ রয়েছে। ওই গোবর শুকিয়ে গেলে তা নাকি তাপ পরিবহণে বাধা দেয়। ফলে শীতকালে ঘর গরম এবং গরমকালে ঘর ঠান্ডা থাকে সহজেই।
তবে মাটির বাড়ির উপরে যে গোবর ভাল কাজ করে, তা আদৌ গাড়ির ধাতব শরীরে ততটাই কাজ করবে কিনা তা ততটা জোর দিয়ে বলা যাচ্ছে না। তবে এত সব কথা ভেবে মোটেও পিছিয়ে আসেননি পুণের সেই ব্যক্তি। বরং তাঁর গাড়িটির সামনে থেকে শুরু করে পিছন, গোটা অংশটাই তিনি ঢেকে দিয়েছেন তিনি গোবর দিয়ে। শুধু উইন্ডশিল্ড, বাম্পার আর আলো, এই অংশগুলোই বেঁচেছে গোবরের কবল থেকে।
আরও শুনুন: ভূমিকম্পে মৃত মালিক, ভাঙা বাড়ির সামনে ‘আত্মীয়ের’ খোঁজে তবু ফিরে আসে পোষ্য কুকুর
এর ফলে তাপ পুরোপুরি কমানো যাবে কিনা সে বিষয়ে বলা না গেলেও, জানলার কাচ দিয়ে গাড়ির ভিতরে রোদ ঢুকে যে ‘গ্রিন হাউস এফেক্ট’ তৈরি করে, তার হাত থেকে অনেকটাই বাঁচানো যাবে যাত্রীদের। এমনটাই মনে করছেন ওয়াকিবহাল মহল। তবে তার সঙ্গে দুঃসহ দুর্গন্ধ যে একেবারেই বিনামূল্যে, তা তো আর বলার অবকাশ থাকে না।
কী ভাবছেন, গরম কমাতে এমন উদ্ভট কাজ এই প্রথম? মোটেও না। এর আগেও একাধিক বার গাড়িতে গোবর মাখিয়ে এমন গরম কমানোর চেষ্টা হয়েছে এ দেশেই। ২০১৯ সালে আমেদাবাদের এক মহিলা ঠিক একই কাজ করেছিলেন। তাঁর গাড়িটিকে তিনি মুড়ে ফেলেছিলেন গোবর দিয়ে। জানিয়েছিলেন, শুধু গরমের হাত থেকে বাঁচতেই নয়, পরিবেশ দূষণও আটকাতেও নাকি সাহায্য করবে এই প্রক্রিয়া। এমনতিও গাড়িতে শীতাতপ যন্ত্র চালালে তার থেকে বেশ কিছু বিষাক্ত গ্যাস নির্গত হয়, যা আদতে বিশ্ব উষ্ণায়নকে বাড়িয়ে তুলতেই সাহায্য করে বেশি করে। তার থেকে ঠান্ডা করার জন্য এই বিশেষ প্রক্রিয়ার উপরেই বেশি আস্থা দেখিয়েছিলেন ওই মহিলা। ফলে গোবরের গন্ধ যদি এতটাও অসহ্য না- হয়ে থাকে, তবে নিজের গাড়িটিকেও সাজিয়ে তুলতেই পারেন এমন অভিনব গোবর-সাজে।