জানলা ভেঙে বাড়ির ভিতরে ঢুকে পড়েছিল সশস্ত্র চোর। তবে চোর হলে কী হবে, সে কিন্তু নিতান্তই ভদ্রলোক। তাই আলমারি-ভর্তি গয়নাগাটি থাকা সত্ত্বেও তাতে হাত দেয়নি সে। শুধু গৃহস্থের বাড়িতে চান-খাওয়াটুকু সেরে একটু জিরিয়ে নিয়েছিল। তবে তার মধ্যেই বাড়ি ফিরে এসেছিলেন বাড়ির মালিক। তাতেও বন্দুক নিয়ে ভয় দেখানোর কথা ভাবেনি চোরবাবাজী। বরং কাঁচুমাচু মুখে জানলা ভাঙার জন্য চেয়ে নিয়েছে ক্ষমা। শুধু কি তাই রেখে গিয়েছে জানলা ভাঙার ক্ষতিপূরণ। কস্মিনকালেও এমন মার্জিত চোরের কথা শুনেছেন কি! কোথায় ঘটেছে এমন ঘটনা? শুনে নিন।
‘বিড়াল বলে মাছ খাব না, আঁশ ছোব না, কাশী যাব।’ এ যেন অনেকটা তেমনই ব্যাপার। নিঝুম বাড়িতে জানলা ভেঙে ঢুকে পড়েছিল চোর। না, ছিঁচকে চোর বললে ভুলই বলা হবে। হাতে তার এআর-১৫ রাইফেল। তবে এ চোর যেন কাশীবাসী বিড়াল। তাই আলমারি ভর্তি গয়না থাকা সত্ত্বেও সেদিকে তাকিয়েও দেখেনি সে।
বরং গৃহস্থের বাড়ির বাথরুমে ঢুকে সে স্নান করেছে। গৃহস্থের ফ্রিজে উঁকিঝুঁকি মেরে সেরে ফেলেছে আহারও। তার পর একটু মদ গলায় ঢেলে গৃহস্থের বিছানায় শুয়ে নির্ঝঞ্ঝাট ঘুম।
তবে শেষ অবধি পুরো ব্যাপারটা মোটেও অতটা নির্ঝঞ্ঝাট থাকেনি। ইতিমধ্যেই বাড়ি ফিরে আসেন গৃহস্থ। এসে দেখেন, পিছনের ঘরে ঘুমিয়ে রয়েছে এক অচেনা ব্যাক্তি। তার পাশে আবার পড়ে একটি আস্ত রাইফেল। তা এসব দেখে ভয় পেয়ে যাওয়াটাই তো স্বাভাবিক। তবে আগেই বলেছি, এ চোর একেবারে অন্য ধাতুতে গড়া। হাতের কাছে অস্ত্র থাকা সত্ত্বেও সে কিন্তু ভয়টয় দেখানোর চেষ্টা করেনি একেবারেই। বরং রীতিমতো কাঁচুমাচু মুখ করে ঘরের জানলা ভেঙে ফেলার জন্য ক্ষমা চেয়ে নিয়েছে সে। শুধু কি তাই, যাওয়ার সময় বসার ঘরে দু-শো ডলার ক্ষতিপূরণ বাবদ রেখেও গিয়েছে চোর। তা এমন নির্ঝঞ্ঝাট মার্জিত চোর কিন্তু সচরাচর দেখা যায় না।
আরও শুনুন: চুরি করতে গিয়ে পেল খিদে, গেরস্থের রান্নাঘরেই খিচুড়ি রান্না চোরের, অতঃপর…
তবে সত্যি কি তাই! পরের দিন যা জানা গেল, তার সঙ্গে কিন্তু আগের দিনের চোরবাবাজীকে মেলানো বেশ মুশকিল। ওই বাড়ির মালিককে চোর জানিয়েছিল, শুধু একটু আশ্রয়ের খোঁজেই সে ওই বাড়িতে জানলা ভেঙে ঢুকে পড়ে। আরও জানায়, তার বাড়ির সকলকে খুন করা হয়েছে। সে দুষ্কৃতীদের হাত থেকে পালাচ্ছিল। কিন্তু মাঝরাস্তায় তার গাড়ি খারাপ হয়ে যাওয়ায় বাধ্য হয়েই ওই বাড়িতে আশ্রয় নিতে হয় তাঁকে।
তবে পরের দিন পুলিশ যা জানিয়েছে তাতে অবশ্য চক্ষু ছানাবড়া হওয়ার জোগার। তারা জানায়, এক মহিলাকে ভয় দেখিয়ে তাঁর গাড়ি ছিনতাই করে পালাচ্ছিল ওই চোর। মহিলা চেঁচামেচি জুড়লে ওই বাড়িতে কোনও রকমে আশ্রয় নেয় সে।
পরে অবশ্য শহরেরই একটি রাস্তা থেকে তাকে গ্রেফতার করেছে মেক্সিকো পুলিশ। ধৃত যুবকের নাম টেরাল ক্রিস্টেসন। বয়স চৌত্রিশের কাছাকাছি। তবে কেবল গাড়িচুরি নয়, মারধর, ভাঙচুর-সহ একাধিক ফৌজদারি অভিযোগ রয়েছে ওই যুবকের বিরুদ্ধে। গাড়ি ছিনতাইয়ের অভিযোগ এড়িয়ে গেলেও বাড়ির জানলা ভেঙে ঘরে ঢোকার কথা কিন্তু স্বীকার করে নিয়েছে সে। জানিয়েছে, মনটা ঠিক ভাল লাগছিল না। তাই ওই বাড়িটিতে বিশ্রাম নিতে ঢুকেছিল।
আরও শুনুন: আজব কাণ্ড! টেমস পারের লন্ডন নকল হয়ে উঠে এল চিনে! ব্যাপারটা কী?
তবে পুলিশ যাই বলুক, ছিনতাইবাজ হওয়া সত্ত্বেও বাড়ির গয়নাগাটি বা অন্যান্য জিনিসপত্রের ব্যাপারে যে সংযম দেখিয়েছে ওই যুবক, তা কিন্তু অস্বীকার করা যায় না মোটেই। তার উপর আবার জানলা ভাঙার ক্ষতিপূরণ দিতেও ভোলেনি সে। তা এই চোরকে ‘ভদ্রচোর’ ছাড়া আর কীই বা বলা যায় বলুন তো!