রাজনীতির ময়দানে প্রতিপক্ষ আপন ভাই। বাবার সমর্থনও সেদিকে। তাই নির্বাচনে একলা চলো নীতি আপন করেছেন দাদা। এমনটা স্রেফ একটা পরিবারে হয়নি। চলতি নির্বাচনে রাজনীতির জেরেই ভাঙন ধরেছে ওড়িশার তিন পরিবারের অন্দরে। আসুন শুনে নেওয়া যাক।
ভোট বড় বালাই! ক্ষমতার লড়াইয়ে রক্তের সম্পর্ক ভুলতেও আপত্তি নেই। রাজনীতির ময়দানে পরিবারতন্ত্রের কথা হামেশাই শোনা যায়। একই পরিবারের একাধিক সদস্য ক্ষমতায় আসীন হচ্ছেন এমনটাও নতুন নয়। তবে এক্ষেত্রে পরিবার এক হলেও কারও মনের মিল নেই। বাবা-ছেলে-ভাই সকলেই ভিন্ন দলের সমর্থক। যার দরুন রাজনীতির লড়াই উঠে এসেছে একেবারে ড্রয়িংরুমে।
আরও শুনুন: মোদির আমলে রেকর্ড চাকরি, ইতিহাসে এমনটা হয়নি! দাবি অর্থনীতিবিদের
ভুবনেশ্বরের রৌতরে(Routray) পরিবারের কথাই ধরা যাক। এলাকার জনপ্রিয় কংগ্রেস নেতা সুরেশ রৌতরে। ৬ বারের জয়ী বিধায়ক। সকলকে চমকে দিয়ে লোকসভায় তিনি প্রচারে নেমেছেন বিজেডি-র হয়ে। সকলের কাছে ওই দলের হয়েই ভোট প্রার্থনা করছেন। সবাই যাকে কংগ্রেসি বলে চেনেন তিনি এবার অন্য দলের পতাকা ধরলেন কেন? একটু খোঁজ নিতেই জানা গেল আসল সত্যিটা। নিজের জন্য নয়, বর্ষীয়ান কংগ্রেস নেতা প্রচারে নেমেছেন ছেলের হয়ে। চলতি নির্বাচনে তাঁর ছোট ছেলে মন্মথ বিজেডির হয়েই লড়াইয়ে নেমেছেন। সুতরাং ছেলের সমর্থনেই বিপক্ষ দলের হয়ে প্রচারে নেমেছেন সুরেশ, এমনটাই ভাবা হয়েছিল। চমকের শুরু এখানেই। চলতি নির্বাচনে প্রার্থী হচ্ছেন সুরেশের বড় ছেলে সিদ্ধার্থও। তিনি টিকিট পেয়েছেন কংগ্রেসের তরফেই। তাহলে বড় ছেলেকে বাদ দিয়ে কেন ছোট ছেলের হয়ে প্রচারে নামলেন সুরেশ?
আরও শুনুন: মশলায় মিশছে কাঠের গুঁড়ো! দিল্লির ঘটনা চিন্তা বাড়াচ্ছে গোটা দেশেরই
সবটাই ক্ষমতার খেলা। মাসখানেক আগে কংগ্রেসের সমস্ত পদ থেকে ইস্তফা দেন সুরেশ। তারপরই ছেলের হয়ে প্রচার শুরু করেন। তার জন্য দলের তরফেও তাঁর বিরুদ্ধে পদক্ষেপ করা হয়। এমনকি দল থেকে বহিষ্কারও করে দেওয়া হয় তাঁকে। তাই কংগ্রেসের হয়ে বড় ছেলের প্রচারে তিনি যাবেন না, এটাই স্বাভাবিক। যদিও এই নিয়ে তেমন অভিমান নেই সিদ্ধার্থ রৌতরের। ভাইয়ের মতো বাবাকেও রাজনৈতিক স্বার্থে কার্যত ‘বয়কট’ করেছেন তিনি। একলা চলো নিতিতেই নির্বাচনে জিততে চান। খানিকটা একইরকম গল্প গাঞ্জাম প্রদেশের সামান্তরায় পরিবারে। দুই ভাইয়ে রাজনৈতিক দ্বন্দ। একজন বিজেপি প্রার্থী অন্যজন কংগ্রেসের। তবে পরিবারের মধ্যে ভাঙন ধরেনি এর জেরে। যে কোনও অনুষ্ঠানে একসঙ্গেই আনন্দে শামিল হন তাঁরা। পরিবারের অন্যান্য সদস্যদের মধ্যেও বার্তালাপ রয়েছে। পরিবারের মাথা অর্থাৎ তাঁদের বাবাও দাপুটে নেতা। প্রথমে কংগ্রেস পরে বিজেপির হয়ে ভোটে লড়েছেন তিনি। তবে সুরেশের মতো তিনি কারও পক্ষ নেননি। কোনও ছেলের হয়েই ভোট প্রচারে যাননি তিনি। তাই দুই ভাইয়ের মধ্যে রাজনৈতিক মতপার্থক্য ছাড়া আর কোনও বিরোধ নেই বললেই চলে। আবার কেন্দ্রাপাড়াতেও খানিক একই ঘটনা। এখানে বাবা-ছেলে আলাদা দলের সমর্থক। একজন বিজেপি অন্যজন বিজেডি। কিন্তু ভোটপ্রচারে সেই মতভেদ ধরা পড়েনি। ছেলের হয়েই বিজডির সমর্থনে নেমেছেন বিজেপি সমর্থক বাবা। সবমিলিয়ে ওড়িশায় ভোটের লড়াই যেন সিনেমার গল্পকেও হার মানাচ্ছে। এবার নির্বাচনে কোন পরিবারের কোন সদস্য শেষ হাসি হাসে, সেটাই দেখার।