কেবল বইকে কেন্দ্র করেই উৎসব। অক্ষরকে ছুঁয়েই মানুষের সঙ্গে বেঁধে বেঁধে থাকা। বইমেলা আসলে এক আশ্চর্য মিলনের আখ্যান। সে আখ্যানে কখনও থাকে ফুলের বিনিময়ে বই উপহারের গল্প, কখনও আবার থাকে ড্রাগনকে নিকেশ করে রাজকন্যাকে বাঁচানোর রূপকথাও। আসুন, শুনে নেওয়া যাক।
বইমেলা আসলে এক সমন্বয়ের কথাই বলে। তাই বইমেলাকে কেন্দ্র করে যত কাহিনি উপকাহিনি, কোথাও গিয়ে সেখানেও থেকে যায় মিলনের কথা, মানুষে মানুষে ভালোবাসার কথা। যেমন ধরুন, স্পেনের বার্সেলোনায় যে বইমেলা হয়, তাকে গোলাপের দিন বা প্রেমের দিন বলেই ডাকেন অনেকে। কোথাও আবার ফুলের বিনিময়েই রয়েছে বই উপহার দেওয়ার চল। বইমেলার ইতিহাস যত পুরোনো হয়েছে, ততই তার সঙ্গে জুড়ে গিয়েছে এমনই নানা প্রথা, নানা মিথও।
আরও শুনুন:
বইমেলায় নজর কাড়ছে সুলেখার ‘ফিরিঙ্গী কালি’, কেন এমন নামকরণ জানেন?
বইকে ঘিরে এমন উৎসব শুরু হয়েছিল ঠিক কবে? মনে করা হয়, বিশ্বের সবচেয়ে বড় বইমেলা এখন যেখানে অনুষ্ঠিত হয়, জার্মানির সেই ফ্রাঙ্কফুর্ট শহরেই পৃথিবীর প্রথম বইমেলা হয়েছিল। শোনা যায়, ছাপাখানা আবিষ্কারের আগে দ্বাদশ শতাব্দীর জার্মানিতে হাতে লেখা বই বিক্রি হত। পরে ১৪৬২ সালে জার্মানির ফ্রাঙ্কফুর্টার মেসেই বিশ্বের প্রথম বইমেলা অনুষ্ঠিত হয়। বর্তমানে ‘দ্য ফ্রাঙ্কফুর্ট বুকফেয়ার’ বিশ্বের সবচেয়ে বড় বইমেলা। এ মেলাতে বিশ্বের প্রায় ১০০টি দেশ থেকে প্রায় হাজার দশেক প্রকাশক অংশ নিয়ে থাকেন। কখনও ধর্মের কারণে, রাজনৈতিক কারণে অনেক বইয়ের উপরে নিষেধাজ্ঞা নেমেছে, তার আঁচ পড়েছে বইমেলার উপরেও। কখনও প্রাকৃতিক বিপর্যয় বা অঘটনেও থমকে গিয়েছে বইমেলা। যেমনটা ঘটেছিল কোভিড কালে। তার আগে ভয়াবহ আগুনে পুড়ে ছাই হয়েছিল কলকাতার বিস্তৃত বইমেলা। কিন্তু তারপরেও রোখা যায়নি বইকে, বইমেলাকেও।
আসলে বইমেলার সঙ্গে এমন বেঁচে থাকার গল্পই তো মানায়। স্পেনের জনপ্রিয় মিথ বলে, একসময় এক ড্রাগনের হাত থেকে বাঁচতে মানুষেরা ঠিক করেছিল, রোজ একজনকে পাঠাবে ড্রাগনের খাদ্য হতে। একসময় সেই বলির তালিকায় নাম ওঠে খোদ রাজকুমারীর। কিন্তু রাজকন্যা ড্রাগনের গুহায় গেলেও মরতে হয়নি তাঁকে। ড্রাগনকে মেরে রাজকন্যাকে বাঁচান সেন্ট জর্জ। ড্রাগনের প্রাণহীন শরীর থেকে গড়িয়ে পড়া রক্তে জেগে ওঠে গোলাপ গাছ। এই সেন্ট জর্জের মৃত্যুদিন, ২৩ এপ্রিলে, তাঁর স্মরণেই নাকি বইমেলা শুরু করেছিল স্পেনের বার্সেলোনা। তাই গোলাপের দিন বা প্রেমের দিনের তকমা পেয়েছে এই উৎসব।
আরও শুনুন:
নিষিদ্ধ বই দিয়েই তৈরি আশ্চর্য স্থাপত্য, বার্তা দেয় গণতন্ত্র আর বাকস্বাধীনতার
দ্য আটলান্টিক পত্রিকায় এক সাক্ষাৎকারে গ্যাব্রিয়েল গার্সিয়া মার্কেজ জানিয়েছিলেন এক বই উৎসবের কথা। যে বইমেলার রেওয়াজ, পুরুষেরা তাদের বান্ধবীর হাতে ফুল তুলে দেন। আর বিনিময়ে নারীটি সেই পুরুষকে উপহার দেন বই। হয়তো স্পেনের বই উৎসবকে ঘিরেই এ অভিজ্ঞতা জানিয়েছিলেন খ্যাতনামা সাহিত্যিক। কিন্তু ঠিক কোথায় এ রীতি রয়েছে, তা না জানলেও বোধ করি কিছু এসে যায় না। আমরা তো জানিই, বই আদতে ভালোবাসার কথাই বলে। আর সেই ভালোবাসার আশ্চর্য চিহ্নই লেগে থাকে বইমেলার গায়েও।