প্যারিস প্যারালিম্পিকসে ভারতীয় প্রতিযোগীদের বিপুল সাফল্য শিখিয়ে দিল, মনের জোরে কীভাবে জয় করা যায় প্রতিকূলতাকে। আর সেই বিজয়ীদেরই এবার বিশেষ স্বীকৃতি ভারতীয় ডাক বিভাগের। আসুন, শুনে নেওয়া যাক।
প্যারিস প্যারালিম্পিকসে সব মিলিয়ে ২৯টি পদক এসেছে ভারতের ঝুলিতে। অবনী লেখারার জোড়া সোনা সহ ৭টি সোনা, ৯টি রুপো আর ১৩টি ব্রোঞ্জ পদক। আর এই পদকজয়ীদেরই এবার বিশেষ স্বীকৃতি ভারতীয় ডাক বিভাগের। পদকজয়ীদের ছবি সহ ২৮টি পোস্টকার্ডের সেট প্রকাশ করল বেঙ্গালুরু জিপিও।
১৯৪৮ সালে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ ফেরত কয়েকজন ব্রিটিশ সৈন্য জড়ো হয়েছিলেন এক জায়গায়। সেখান থেকেই আজকের প্যারালিম্পিক্সের সূত্রপাত। বিশেষভাবে সক্ষম মানুষরাই অংশ নিতে পারেন প্যারালিম্পিক্সে। অলিম্পিকসের সমান্তরালে আয়োজন করা হয় বটে। তবে অলিম্পিকসের গ্ল্যামার, ফান্ডিং, প্রচারের ছিটেফোঁটা জোটে প্যারালিম্পিক্সের বরাতে। কিন্তু যে মানুষরা শারীরিক প্রতিবন্ধকতা পেরিয়ে খেলার মাঠে নেমেছেন, কোন প্রতিকূলতা আর দমিয়ে রাখবে তাঁদের? ভারতের এই পদকজয়ী অ্যাথলিটদের দেখলেই সে কথা মালুম হয়। গাড়ি দুর্ঘটনায় কোমরের নীচের অংশ প্যারালাইজড হয়ে যাওয়া অবনী লেখারা থেকে বাইক অ্যাক্সিডেন্টে বাঁ পা বাদ যাওয়া সুমিত আন্টিল, কাশ্মীরের যুদ্ধে মাইন ফেটে পা হারানো হোকাতো সেমা, সপাটে উড়িয়ে দিচ্ছেন শরীরের যাবতীয় প্রতিবন্ধকতাকে। আর সেই জয়কেই উদযাপন করতে চেয়েছে ভারতীয় ডাক বিভাগ।
আসলে প্যারিস প্যারালিম্পিক্সে দেশ একের পর এক মেডেল জিততে শুরু করার পরেই এই ভাবনাটা মাথায় এসেছিল তামিলনাড়ুতে বসে থাকা জনাকয়েকের। তাঁরা সকলেই শিল্পী এবং পিকচার পোস্টকার্ডের সংগ্রাহক-গবেষক। এঁদের মধ্যেই ছিলেন শিল্পী এস শিভাবলন এবং পোস্টক্রসিং সোসাইটি অফ ইন্ডিয়ার প্রতিষ্ঠাতা কোশাধ্যক্ষ পি ভেঙ্কটেশন। পদকজয়ীদের রেখাচিত্র এঁকে পোস্টকার্ড বানাতে শুরু করেছিলেন তাঁরা। ভারত পদক জিতলেই সেদিনই ছবি এঁকে ফেলা হত। এইভাবে চলতি মাসের ৯ তারিখেই শুধু গোল্ড মেডালিস্টদের ছবি নিয়ে ৭টি পিকচার পোস্টকার্ডের একটি সেট প্রকাশিত হয়। আর এবার সামনে এল সমস্ত পদকজয়ীদের ছবি-সহ পোস্টকার্ডের সেট।
আসলে প্রতিবন্ধকতা তো কেবল শরীরের হয় না। জীবনের পথে প্রতিকূলতা নিত্যসঙ্গী। কেবল তার রূপ বদলে যায়। সেই প্রতিবন্ধকতা কখনও শারীরিক, কখনও আবার মানসিক, কিংবা সামাজিক। জীবনের প্রতিটি বাঁকেই হয়তো ভেঙে পড়ার মতো মুহূর্ত তৈরি হয়। কিন্তু সেইসব পরিস্থিতিকে হারিয়ে দেওয়ার জোর জোগাচ্ছেন অবনী-সুমিতরা। আর তাঁদের সেই পারা-র নিশান হয়ে এল ডাক বিভাগের এই স্বীকৃতি।