পাহাড়ের চূড়ায় রয়েছেন আরাধ্য। নিত্য পুজো করার জন্য বহুকষ্টে পাহাড়ের ধাপ বেয়ে উপরে উঠতে হয় গ্রামবাসীদের। এমন দৃশ্য দেখে এক দুঃসাহসিক সিদ্ধান্ত নিলেন বিহারের এক ব্যক্তি। নিজের উদ্যোগে পাহাড় কেটে তৈরি করলেন ৪০০ সিঁড়ি। তাও আবার ছেনি হাতুড়ির মতো সাধারণ যন্ত্রের সাহায্যেই। কাকে দেখে এমন কাজের সাহস পেলেন তিনি? আসুন, শুনে নেওয়া যাক।
আচ্ছা, দশরথ মাঝি-র কথা মনে পড়ে? একা হাতে পাহাড় কেটে একটা গোটা রাস্তা বানিয়ে ফেলেছিলেন তিনি। হয়ে উঠেছিলেন প্রায় ‘অতিমানব’। যাঁর জীবন সংগ্রামের কাহিনি আমরা দেখেছিলাম ‘মাঝি-দ্য মাউন্টেন ম্যান’ সিনেমায়! সেই অতিমানবকে অনুসরণ করেই এবার পাহাড় কেটে ৪০০ ধাপ সিঁড়ি বানিয়েছেন আরও এক ব্যক্তি।
আরও শুনুন: হাত ফসকে খাবার পড়ল মেট্রোয়, নিজে হাতে পরিষ্কার করে প্রশংসা কুড়োল খুদে
বিহারের বানওয়ারিয়া গ্রামের বাসিন্দা গনৌরি পাসওয়ান এমনই অসাধ্য এক কাজ করেছেন। তাঁর গ্রামের অন্যতম আরাধ্য দেবতা হলেন বাবা যোগেশ্বর নাথ। আসলে যা ভগবান শিবের প্রতিরূপ। কিন্তু সেই মন্দির রয়েছে গ্রামের একেবারে প্রান্তে অবস্থিত এক পাহাড়ের চূড়ায়। ফলত মন্দিরে যেতে গেলে খুবই সমস্যায় পড়তে হত গ্রামবাসীদের। বিশেষত গ্রামের বৃদ্ধ ও শিশুদের পক্ষে এই মন্দিরে যাওয়া খুবই কঠিন হতো। গ্রামবাসীদের মতে, একবার মন্দিরে উঠতে গেলেই নাকি ৮ ঘণ্টা সময় লেগে যেত। তার উপর খাড়াই পাহাড়ে একটু অসাবধান হলেই রক্তপাত অনিবার্য। এইসব সমস্যা দেখেই নিজ উদ্যোগে পাহাড় কেটে সিঁড়ি তৈরির সিদ্ধান্ত নেন গনৌরি। প্রথম জীবনে ট্রাক্টর চালক হলেও বেশ কিছুদিন রাজমিস্ত্রি হিসেবে কাজ শুরু করেছিলেন গনৌরি। তাই সিঁড়ি তৈরির কায়দা তাঁর অজানা ছিল না। কিন্তু এই কাজের জন্য অত্যাধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করার কোনও সামর্থ ছিল না তাঁর। তাই ছেনি হাতুড়ির মতো অতি সাধারণ কিছু যন্ত্রপাতি নিয়েই কাজ শুরু করেন তিনি। তাঁকে সাহায্য করতে এগিয়ে আসেন অনেকেই। তবু তিনি নিজেই নাকি অধিকাংশ কাজ করে নিতেন। রোজ সকাল হতেই লেগে পড়তেন পাহাড় কাটার কাজে, যা চলত বিকেল গড়িয়ে সন্ধ্যে পর্যন্ত। এভাবেই প্রায় ৮ বছর অক্লান্ত পরিশ্রম করে অসাধ্য সাধন করে ফেলেন গনৌরি। প্রায় ১৫০০ ফুটের পাহাড়ের গায়ে তৈরি করে ফেলেছেন ৪০০ টি সিঁড়ি।
আরও শুনুন: লটারিতে স্বামী জিতেছেন ১.৩ কোটি, টাকা নিয়ে প্রেমিকের সঙ্গে ঘর বাঁধতে চললেন স্ত্রী
বছর দশেক আগে এমনই অসাধ্য কাজ করে খবরের শিরোনাম হয়েছিলেন দশরথ মাঝি। একা হাতে সাধারণ কিছু যন্ত্র নিয়ে আস্ত একটা পাহাড় কেটে রাস্তা বানিয়েছিলেন তিনি। তাঁরই পথ অনুসরণ করেছিলেন লাউঙ্গি ভাইয়া নামে এক দিনমজুর। জলের জন্য তিনিও প্রায় ৩ কিলোমিটার দীর্ঘ এক পরিখা খনন করেছিলেন। সেই পথেই হাঁটলেন বিহারের গনৌরি।