ভারতবর্ষের সর্বোচ্চ অসামরিক সম্মান ভারতরত্ন। কলকাতার টাঁকশালেই সর্বোচ্চ সম্মানের দায়িত্বভার দিয়েছিলেন ভারত সরকার। প্রস্তাব ছিল নেতাজিকে দেওয়ারও। সর্বপল্লী রাধাকৃষ্ণায়ন, শচীন তেন্ডুলকরের মতোন বিখ্যাত মানুষদের হাতে এসেছিল এই সম্মান। কিন্তু দেশের রত্নের হাতে দেওয়া ভারতরত্নে নেই কোনও সোনার চিহ্ন। নেপথ্যে রয়েছে কোন কারণ? আসুন শুনে নেওয়া যাক।
দেশের যিনি রত্ন তিনিই ভারতরত্ন। ভারতবর্ষের সর্বোচ্চ অসামরিক সম্মান। তবে, তা কিন্তু সোনা-রুপো দিয়ে তৈরি হয় না। সাধারণত সর্বোচ্চ যে কোনও সম্মানের স্মারকের সঙ্গেই সোনার অনুষঙ্গ চলে আসে। এক্ষেত্রে অবশ্য ব্যতিক্রম।
:আরও শুনুন:
গোল্ড মেডেলে সোনা নেই! কোন ধাতুতে গড়া অলিম্পিক্সের পদক?
দেশের যে কৃতী সন্তানকে এই সম্মান দেওয়া হয়, পদকের পাশাপাশি তাঁর হাতে তুলে দেওয়া রাষ্ট্রপতির স্বাক্ষর করা একটি শংসাপত্র। ইতিহাস বলে, ১৯৫৪ সালে দেশের প্রথম রাষ্ট্রপতি ডঃ রাজেন্দ্র প্রসাদের হাত ধরেই ভারতরত্ন সম্মানপ্রদান শুরু। সর্বপল্লী রাধাকৃষ্ণায়ন, সি ভি রামন, চক্রবর্তী রাজাগোপালাচারী ছিলেন প্রথম প্রাপক। প্রথম ক্রীড়াব্যক্তিত্ব হিসাবে ভারতরত্ন সম্মান লাভ করেন শচীন তেন্ডুলকর। তিনি সর্বকনিষ্ঠ ভারতরত্ন প্রাপকও বটে। সাধারণত, তিন জনকেই এই সম্মানে ভূষিত করা হয়। তবে, ১৯৯৯ সালে একবারই চারজনকে দেওয়া হয়েছিল ভারতরত্ন। মরণোত্তর ভারতরত্ন প্রদানের রেওয়াজ গোড়ায় ছিল না। ১৯৬৬ থেকে তা শুরু করা হয়। ১৯৯২ সালে নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসুকে মরণোত্তর ভারতরত্ন দেওয়া হবে বলে ঠিক করা হয়েছিল। তবে সুভাষের মৃত্যু নিয়ে ছিল সংশয়। ১৯৯৭ সালে শীর্ষ আদালতের সিদ্ধান্ত অনুসরণ করে, তা মুলতুবি রাখা হয়। ভারতরত্নের ইতিহাসে এই একবারই ঘোষণার পরও এই সম্মানে ভূষিত করা হয়নি প্রাপককে। ভারতরত্ন খেতাব নিয়ে এরকম অনেক গল্পই জমা হয়ে আছে। তবে অবাক করার মতো বিষয় হল, এই স্মারকটি এখন আর সোনা দিয়ে তৈরি হয় না।
:আরও শুনুন: জাতীয় পুরস্কার পেয়েও কাটেনি দুর্দশা! পেটের দায়ে অটো চালাতে হয় কাশ্মীরি শিল্পীকে
একেবারে গোড়ার পদকটি অবশ্য সোনা দিয়েই তৈরি হয়েছিল। পরের বছর থেকে সেই ডিজাইনে ও ধাতুর ব্যবহারে বদল আসে। সোনার পরিবর্তে প্ল্যাটিনাম, ব্রোঞ্জ ও তামার ব্যবহার শুরু হয়। বর্তমান পদকটি দেখতে অনেকটা পিপল পাতার মতো। পাতার ধারগুলি ও মাঝ বরাবর থাকা উজ্জ্বল সূর্যটি চিহ্নটি তৈরি করা হয় প্ল্যাটিনাম ধাতু দিয়ে। সূর্য চিহ্নটির নিচে দেবনাগরীতে ‘ভারতরত্ন’ লেখা থাকে ও পদকটির পিছনে খোদাই করা থাকে ‘সত্যমেব জয়তে’। আর এই পদকটি আর অন্য কোথাও নয়, তৈরি হয় কলকাতাতেই। ১৭৫৭ সালে কলকাতার টাঁকশালকে এই সর্বোচ্চ সম্মানের দায়িত্বভার দেওয়া হয়েছিল। সেই ট্র্যাডিশন সমানে চলছে।