জমজমাট মেলা। চারিদিকে রাশি রাশি দোকান। হাসিমুখে কেনাকাটা করছেন সাধারণ মানুষ। কিন্তু জিনিসের বদলে দিতে হচ্ছে না কোনও টাকা। খাবার জিনিস হোক কিংবা প্রসাধনী, সবই বিনেপয়সায় নিয়ে যাচ্ছেন সকলে। কোথায় রয়েছে এমন মেলা? আসুন শুনে নিই।
দিতে হবে না এক পয়সাও। তবুও যা ইচ্ছা তাই খাওয়া যাবে। একই ব্যাপার অন্যান্য জিনিসের ক্ষেত্রেও। প্রসাধনী কিংবা ঘর সাজানোর আসবাব সবই মিলছে বিনে পয়সায়। তাও আবার সিনেমায় বা গল্পে নয়। একেবারে বাস্তবের এক মেলায়। দলে দলে সেখানে ভিড় জমাচ্ছেন অনেকেই। কিন্তু কীভাবে? এই মূল্যবৃদ্ধির বাজারে বিনামূল্যে কিছু দেওয়া কি আদৌ সম্ভব?
আরও শুনুন: কেকের স্বাদে মাতোয়ারা! দোকানে হানা দিয়ে গোগ্রাসে ৬০টি কাপকেক সাবাড় ভাল্লুকের
তাহলে খুলেই বলা যাক।
কথা বলছি আসামের এক মেলা সম্পর্কে। স্থানীয় ভাষায় যার নাম ‘জনবিল মেলা’। শতাব্দি প্রাচীন এই মেলায় বরাবরই বিনে পয়সায় জিনিস মেলে। যার যা ইচ্ছা ঘরে আনতে পারে এক্কেবারে বিনামূল্যে। ভাবছেন তো কীভাবে? কারণ এি মেলা এখনও বিনিময় প্রথার চল রয়েছে। অর্থাৎ কোনও জিনিস কিনলে তার বদলে অর্থ দিতে হবে না একথা সত্যি, কিন্তু অন্য কোনও জিনিস দিয়ে তার দাম পুষিয়ে দিতে হবে। যে কোনও জিনিসই তার সমমূল্যের অন্য কোনও জিনিসের বিনিময়ে বাড়িতে আনা যাবে। মূলত আসামের মরিগাও জেলার দায়াং বেলগুরি গ্রামে এই মেলা বসে। সেই অঞ্চলের আদিবাসীরাই মেলায় অংশ নেন। সেইসঙ্গে আসেপাশের এলাকা থেকে এই মেলায় কেনাকাটা করতে আসেন মানুষজন। এমনকি মেঘালয় কিংবা মনিপুরের বাসিন্দারাও এই মেলায় ঘুরতে আসেন। মূলত শাকসবজি, ফলমূল এইসবই এই মেলায় পাওয়া যায়। আর যারা ঘুরতে আসেন তাঁরা নিজেদের এলাকার শাকসবজির বিনিময়ে এইসব বাড়ি নিয়ে যান। মেলার প্রধান উদ্দেশ্য সাংস্কৃতিক আদানপ্রদান ঘটানো। সেই উপলক্ষ্যে স্থানীয় লোকগান বা নাচের আসরও বসে এই মেলায়। টানা তিনদিন ধরে মেলা চলে। ভিড়ও হয় চোখে পড়ার মতোই।
আরও শুনুন: ক্রেতা আছে, বিক্রেতা নেই! চুরিও হয় না দোকানে সাজানো পণ্য
তবে এখনও প্রথা মেনে মেলার উদ্বোধন করতে আসেন ওই এলাকার রাজামশাই। সবটাই অবশ্য প্রতীকী। সেইসঙ্গে এলাকার এক বড় ঝিলে মাছ ধরতে নামেন সকলে। সেক্ষেত্রেও মানা হয় স্থানীয় রীতি। বাঁশের তৈরি এক বিশেষ কল দিয়ে মাছ ধরা হয়। যা দেখার জন্য সেখানে ভিড় জমান অনেকেই। সব মিলিয়ে বছরের পর বছর ধরে জনবিল মেলা ঘিরে রীতিমতো উন্মাদনা চোখে পড়ে সেই এলাকার মানুষজনের। সেইসঙ্গে আশেপাশের এলাকার মানুষও এই মেলার জন্য অপেক্ষা করে থাকেন।