রং-তুলির কারুকার্য তো আছেই। তারই পাশাপাশি জনৈক শিল্পী তাঁর প্রয়াত বাবার চিতাভস্ম মিশিয়ে দিচ্ছেন ছবিতে। তাঁর সিদ্ধান্তে অবাক হয়েছেন শিল্পপ্রেমীরা। কিন্তু কেন এমন ভাবনা শিল্পীর? আসুন শুনে নিই।
ইচ্ছা ছিল বাবাকে নিজের হাতে আঁকা ছবি উপহার দেবেন। কিন্তু সে সুযোগ কেড়ে নেয় মারণরোগ ক্যানসার। অকালে বাবাকে হারিয়ে যে স্বপ্ন অধরা থেকে গিয়েছে, তা পূরণ করতেই বাবার চিতাভস্ম মিশিয়ে ছবি আঁকা শুরু করেছেন ইংল্যান্ডের শিল্পী ল্যানসন মুর। পাশাপাশি তাঁর মতো যাঁরা নিজেদের প্রিয়জনের স্মৃতি চিরস্থায়ী করে রাখতে চান, তাঁদের জন্যেও একইভাবে ছবি এঁকে দিতে চান তিনি।
আরও শুনুন: পাকিস্তানের প্রেম-কথা! সামাজিক চোখরাঙানি এড়িয়ে ৫২-র শিক্ষককেই বিয়ে ২০-র ছাত্রীর
৩৮ বছর বয়সি ল্যানসন দীর্ঘদিন সমাজকর্মী হিসেবে কাজ করলেও, বর্তমানে পুরোপুরি মন দিয়েছেন চিত্রকলায়। তাঁর শিল্পী হওয়ার নেপথ্যে অনেকখানি অবদান রয়েছে তাঁর বাবার। বরাবর মেয়েকে ছবি আঁকার জন্য উৎসাহ দিতেন তিনি। তাই বাবাকে নিজের আঁকা একটি ছবি উপহার দেওয়ার সাধ ছিল মুরের। তাঁর বাবা নাকি বিখ্যাত চিত্রশিল্পী সালভাদোর দালির ছবি ভীষণ পছন্দ করতেন। আবার বহুকাল স্পেনে থাকার দরুন সেখানকার ভূমিরূপের প্রতিও ছিল তাঁর অমোঘ আকর্ষণ। দুটি বিষয়কেই মাথায় রেখে মুর সিদ্ধান্ত নেন বাবার জন্য স্পেনের ‘পোর্ট লিগাতের’ ভূমিরূপ রং-তুলিতে তুলে ধরবেন। কিন্তু বিধি বাম! নিজের হাতে আঁকা ছবি বাবাকে উপহার দেওয়ার আগেই তিনি ইহলোক ত্যাগ করেন। মারণরোগ ক্যানসার অকালেই কেড়ে নেয় তাঁর প্রাণ। বাবাকে এভাবে হারানোর পরেই একটি সিদ্ধান্ত নেন মুর। তিনি ঠিক করেন বাবার প্রিয় ছবিটিই আঁকবেন কিন্তু তার ভিতর মিশিয়ে দেবেন বাবারই চিতাভস্ম।
এমন কাজ করার জন্য প্রয়োজন ছিল বিস্তর গবেষণার। প্রাথমিকভাবে সে সাহস বা সামর্থ্য কোনোটাই ছিলনা মুরের। তবে কথায় আছে ইচ্ছা থাকলেই উপায় হয়! তাই এক্ষেত্রে তাঁকে সাহায্য করতে এগিয়ে আসে ইংল্যান্ডের আর্টস কাউন্সিল। ছবিতে চিতাভস্ম ব্যবহারের জন্য যে গবেষণার প্রয়োজন তার খরচও বহন করে ওই সংস্থা। তারপর বাবার ইচ্ছা অনুযায়ী স্পেনের ভূমিরূপ আঁকার কাজে আবার মন দেন মুর। ইতিমধ্যেই গোলাপি, লাল, নীল এবং হলুদ রং দিয়ে সেই ছবি এঁকেও ফেলেছেন মুর। সেখানে ঠিক কোথায় নিজের বাবার অস্থিভস্ম রাখবেন, তাও ঠিক করে ফেলেছেন তিনি। তাঁর বাবা চাইতেন জীবনের কোনও একটা সময় নৌকায় বসবাস করবেন। তাই নিজের আঁকা ছবিটিতে একটি নৌকাও রেখেছেন মুর। সেখানেই বাবার স্মৃতিকে অক্ষয় করে রাখার সিদ্ধান্ত শিল্পীর।
আরও শুনুন: পৃথিবীর ‘সবচেয়ে দুঃখী’ গরিলা, ৩২ বছর ধরেই একচিলতে নোংরা খাঁচায় বন্দি বুয়া নোই
তবে এখানেই শেষ নয়। অন্য কেউ যদি তাঁদের প্রিয়জনের স্মৃতি এভাবে ধরে রাখতে চান সে ব্যবস্থাও করতে চান তিনি। ঠিক যেভাবে বাবার চিতাভস্ম ব্যবহার করে ছবি এঁকেছেন তিনি, সেভাবেই অন্য কারও প্রিয়জনের জন্য ছবি এঁকে দিতে চান মুর। অনেকেই নাকি এ ব্যাপারে তাঁর সঙ্গে যোগাযোগ করেছেন। তাঁদের প্রিয়জনের কথা শুনে স্বাভাবিকভাবেই আবেগ বিহ্বল হয়ে পড়েছেন শিল্পী। মানুষের জীবন নশ্বর। তবে যথার্থ শিল্প থেকে যায় বহুদিন। আর তাই শিল্পের মাধ্যমেই প্রিয়জনকে বাঁচিয়ে রাখার এই অভিনব ভাবনা শিল্পীর।