রীতিমতো নীতি নিয়ম মেনে শাস্ত্রমতে শ্রাদ্ধ করা হল একটি মোরগের। এমনকি পালন করা হল তেরো দিনের অশৌচও। আসলে বড়সড় বীরত্বের পরিচয় দিয়েই প্রাণ হারিয়েছে মোরগটি। তাই তাকে কার্যত শহিদের সম্মান দিলেন তার মালিক। না, গল্প নয়। সত্যিই ঘটেছে এমন ঘটনা। আসুন, শুনে নেওয়া যাক।
আশ্চর্য এক শ্রাদ্ধের আয়োজন করে চমকে দিল উত্তরপ্রদেশের একটি পরিবার। কোনও মানুষ নয়, গৃহপালিত একটি মোরগের জন্যই এই অন্ত্যেষ্টি ক্রিয়ার আয়োজন করেছে তারা। পোষা প্রাণীর সঙ্গে মানুষের আত্মিক সম্পর্কের কথা অবশ্য নতুন নয়। তবে যার সঙ্গে খাদ্য খাদকের সম্পর্ক, সেক্ষেত্রেও কি একই কথা খাটে? হ্যাঁ, সময়বিশেষে হয়তো বদলে যায় সব চেনা ছকই। যেমনটা দেখা গেল এই পরিবারের আচরণে।
আরও শুনুন: ৭ ঘণ্টায় ৭৫ বার গাইলেন জাতীয় সঙ্গীত, দেশকে ভালবেসেই বিশ্বরেকর্ড তরুণীর
মোরগটির মালিক সালকরাম সরোজ জানিয়েছেন, দীর্ঘদিন ধরেই তাঁদের বাড়িতে ছিল ওই মোরগটি। তাঁরাই পোষা প্রাণীটির নাম রাখেন লালি। একরকম পরিবারের সদস্যই হয়ে উঠেছিল সে। আর সেই কারণেই হয়তো, পরিবারের আরেকজনকে বাঁচাতে নিজের প্রাণ দিতেও সে দ্বিধা করেনি। উত্তরপ্রদেশের বাসিন্দা সরোজের বাড়িতে পোষ্য হিসেবে কেবল মোরগটিই ছিল না, ছিল বেশ কয়েকটি ভেড়াও। সম্প্রতি সেই ভেড়াগুলির মধ্যে একটিকে বাঁচাতে গিয়েই প্রাণ যায় মোরগটির। সালকরাম সরোজ জানিয়েছেন, সেদিন বাড়ির অন্যান্য সদস্যদের সঙ্গে সামনের বাগানে বসে ছিলেন তিনি। পিছনের খামারে হঠাৎ কিছু শব্দ শুনে তাঁরা সবাই ছুটে যান। সেখানে গিয়ে দেখা যায়, কোনোভাবে একটি রাস্তার কুকুর খামারে ঢুকে পড়েছে। হিংস্রভাবে একটি মেষশাবককে আক্রমণ করে বসেছিল কুকুরটি। বাকিরা কেউ কিছু করার আগেই ভেড়াটিকে বাঁচাতে মরিয়া মোরগটি ঝাঁপিয়ে পড়ে কুকুরটির ওপরে। অতর্কিত আক্রমণে হকচকিয়ে গিয়ে কুকুরটি ভেড়াটিকে ছেড়েও দিয়েছিল। কিন্তু গোল বাধল এরপরেই। কুকুরটির হাত থেকে ভেড়াটিকে রক্ষা করেই মোরগটির স্বস্তি হয়নি, রীতিমতো রেগেমেগে সে কুকুরটিকে তাড়া করে। কিন্তু বাইরে বেরতেই কুকুরটির দলে যোগ দেয় রাস্তার অন্যান্য কুকুরেরাও। এরপর আর শেষরক্ষা হয়নি তার। ক্রমাগত আক্রমণে ক্ষতবিক্ষত হয়ে মারা যায় মোরগটি।
আরও শুনুন: সমুদ্রের গভীরে লুকিয়ে ‘মারণ-জলাশয়’! কাছে গেলেই কেন মৃত্যু সামুদ্রিক প্রাণীর?
এহেন আচরণকে হয়তো বোকামিই মনে হবে কারও কারও। কিন্তু নিজেকে তুচ্ছ করে অন্যকে আগলে রাখার এই সাহস কি কম কথা? সে কথা মনে রেখেই মোরগটির জন্য এমন বিরল অন্ত্যেষ্টির বন্দোবস্ত করেন তার মালিক। নিয়ম মেনে বাড়ির কাছেই মোরগটির দেহ সমাধিস্থ করেন সরোজ। এরপর তেরো দিন পরে নিয়মমাফিক তার শ্রাদ্ধের আয়োজন করেন তিনি। সেই সাড়ম্বর আয়োজনে নিমন্ত্রিত ছিলেন ৫০০ জন গ্রামবাসীও। এমনকি মোরগটির সাহসের কথা শুনে যিনি রান্নার দায়িত্বে ছিলেন তিনি একটি টাকাও নেননি বলেই জানিয়েছেন সরোজ। প্রভু আর পোষ্যের সম্পর্ক ছাড়িয়ে উঠে এক মানবিক বন্ধনেরই যেন ছবি এঁকেছে এই সামগ্রিক ঘটনাটি।