শুধু কেক নয়। বড়দিনের আয়োজনের মধ্যে আছে বাহারি স্বাদের বিস্কুটও। জানেন কী, সেই ক্রিসমাস কুকিজের প্রচলন নাকি কুইন এলিজাবেথের হাত ধরেই শুরু হয়েছিল? তাহলে আজ শুনে নিন সেই গল্পই।
শীত পড়তে না পড়তেই দোকানে দোকানে বসে অঢেল কেকের পসরা। হাতে গোনা ক-টা দিন বাদেই যে আসছে বড়দিন! একফালি কেক মুখে না দিলে বড়দিনের স্বাদে তো খামতি থেকে যাবে! কিন্তু শুধু কেক নয়, বড়দিনের মধ্যে মিশে আছে নানা রকমের বিস্কুটের স্বাদ আর গন্ধও।
লাল জামা, লাল ঝোলা। একমুখ সাদা দাড়ির একটি লোকের আনাগোনা মানেই দুয়ারে কড়া নাড়ছে বড়দিন। আর সেই বড়দিন উদযাপন মানেই তার সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জড়িয়ে থাকবে কেক কাটার রীতি। সাহেবদের ইংল্যান্ডে এই প্রথার শুরুয়াত হয়েছিল ১৬-র শতকে। উনিশ শতকে ভারতে এই রীতি ভারতে আসে ইংরেজদের হাত ধরে। ধীরে ধীরে ক্রিসমাস উৎসব হয়ে ওঠে সবার। ইউরোপের উপনিবেশ থাকা দেশগুলিতেও শুরু হয় কেক কাটার ধুম। কিন্তু শুধু কি কেক? বড়দিনের সঙ্গে কিন্তু প্রবলভাবে মিশে আছে বিস্কুটও।
আরও শুনুন: ক্রিসমাস ইভের রাতেই যেন জন্ম রামকৃষ্ণ সংঘের, মঠের অন্দরে সাদরে হয় ‘যিশু পুজো’
শৌখিন বিস্কুট অর্থাৎ যাকে আমরা সকলেই কুকিজ বলে চিনি, তা কিন্তু অষ্টম শতকের গোড়ার দিকেই প্রবেশ করেছিল ইউরোপে, আর তার আঁতুড়ঘর ছিল স্পেন। তখন কিন্তু দারুচিনি, আদা, গোলমরিচ দিয়ে তৈরি এই খাবারটি নিতান্ত সাদামাটাই ছিল। ১৩০০ সালের মাঝামাঝি সময়ে তাতে মিষ্টি, বাদাম, শুকনো ফল যুক্ত হয়। স্বাদ বাড়ে। বাড়ে চাহিদাও। তবে ক্রিসমাস কুকির সবচেয়ে আদি সংস্করণটি হল জিঞ্জারব্রেড। জানা যায়, এই খাবারটির হদিশ নাকি প্রথম মেলে কুইন এলিজাবেথের কাছে। রানির বলে দেওয়া রেসিপি অনুযায়ী নাকি তাঁর খোদ বাবুর্চিরা তৈরি করেছিল সেই বিশেষ খাবার। আর তারপর শুকনো ফল, চিনি, দারুচিনি, লবঙ্গ, জায়ফল এবং আদা দিয়ে তৈরি এই খানা ইউরোপের শহরগুলিতে বিকোতে শুরু করে। জার্মানির নুরেমবার্গ শহরের বেকারেরা তেরো শতকের প্রথম দিকে নরম, মশলাদার জিঞ্জারব্রেড বিস্কুট তৈরি করে, স্থানীয় ভাষায় যার নাম ছিল লেবকুচেন। তবে রেসিপিটি কিন্তু তৈরি হয়েছে বাদাম, কমলা এবং চিনি দিয়ে তৈরি মিঠে স্বাদের কেক থেকে, যা আরব থেকে এ দেশে এসেছিল ইহুদি বণিকদের হাত ধরে। নতুন রেসিপিতে কেকের নরম ভাব কিছুটা কমল, আর বদলে গেল স্বাদ। ১৬ শতকের মধ্যে ক্রিসমাসের এই বিস্কুটগুলো সারা ইউরোপ জুড়ে হয়ে ওঠে ভীষণ জনপ্রিয়। জার্মানিতে লেবকুচেন, সুইডেনে পেপারকাকোর এবং নরওয়েতে ক্রামকেক- হরেক নাম তার। স্বাদে গন্ধেও আছে নানা বৈচিত্র্য।
তবে শুধু ইতিহাস নয়, তার সঙ্গে পাল্লা দিয়ে রয়েছে কুকিজের অগুন্তি প্রকারভেদ। যেমন, ইতালির ওয়াফল কুকির নাম পিজেল। দারুচিনি গুঁড়োতে গড়িয়ে নেওয়া হয় স্নিকারডুডল। গোয়ার ক্রিসমাস পরম্পরায় জুড়ে আছে আবার ফুলের আকারের রোজ কুকিজ। আর এই সবটুকুর মধ্যে মিশে আছে বড়দিনের মিঠে স্বাদ। বড়দিনের ঝাউ গাছ, হলুদ আলোর ফোয়ারার আবহেই দীর্ঘদিন ধরে নিজের জায়গাটি পাকাপোক্ত করে নিয়েছে কুকিজ। তাই শীত এলে শুধু কেক কিংবা পিঠে পুলির জন্য হাপিত্যেশ নয়, খাদ্যপ্রেমীদের স্বাদকোরক ভরে ওঠে কুকিজের স্বাদেও।