যুদ্ধবিধ্বস্ত ইউক্রেন। রুশ সেনার চোখরাঙানির সামনে তবু হার মানেনি দেশটা। দাঁত কামড়ে লড়াই চালিয়ে গিয়েছে। যুদ্ধ এখনও থামেনি। তবে রাশিয়া যে ইউক্রেনের প্রবল পরাক্রমের কাছে কিছুটা হলেও শক্তি হারিয়েছে তা বলাই যায়। যুদ্ধের অগ্নিগর্ভ দিনগুলোয় ইউক্রেনের জাপরেজিয়া শহরটির দখল নেওয়ার চেষ্টা করে রাশিয়া। আংশিক ভাবে সফলও হয়। আর তার পরেই প্রবল হয়ে উঠেছিল পারমানবিক হামলার আশঙ্কা। ওই শহরেই যে রয়েছে দেশের বৃহত্তম পারমানবিক কেন্দ্রটি। তবে সেই সব দিনের বদলা যে এই ভাবে নেবে ইউক্রেনের একটি ছাগল, তা বোধহয় ভাবতেও পারেননি কেউ-ই। কী করেছে ছাগলটি। আসুন, শুনে নেওয়া যাক।
ভয়াবহ যুদ্ধে ছাড়খার হয়ে গিয়েছে দেশটা। তবু একচুল মাটিও ছাড়েনি ইউক্রেন। সাধ্যমতো চেষ্টা করে গিয়েছে রুশ সেনাকে রুখে দেওয়ার। ব্যর্থ হয়েছে বহু জায়গাতেই, তবু চেষ্টা ছাড়েনি। আর সেই চেষ্টার ফলেই আজও ইউক্রেনের রাজধানী কিয়েভে দাঁত বসাতে পারেনি পুতিনের দেশ। তবু দেশ জুড়ে শুধুই ধ্বংস আর যুদ্ধের স্মৃতি। বহু শহরেরই দখল নিয়ে রুশ সেনা। কোথাও বা লুকিয়ে শক্তিবৃদ্ধির চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে শত্রু দেশের সৈন্যরা। তেমনই একটি জায়গা জাপরেজিয়া। যুদ্ধের গোড়ার দিনগুলোতে এই শহরটি দখল করেই ইউক্রেন এবং গোটা বিশ্বের কাছে ভয় তৈরি করেছিল রাশিয়া। দেশের সবচেয়ে বড় পারমানবিক কেন্দ্রটির দখল নিয়েছিল পুতিনবাহিনী। যা উস্কে দিয়েছিল পারমাণবিক হামলার আশঙ্কা। সেই শহরেই এবার রুশ সেনাদের নাকানিচোবানি খাইয়ে দিল একটি ছাগল।
আরও শুনুন: আশ্চর্য ক্ষমতা এই জাদু-আংটির! বারবার হারালেও ফিরে আসে ঠিক মালকিনের কাছেই
হ্যাঁ, ঠিকই শুনেছেন। ব্যাপারটা অবাক করা হলেও সত্যিই ৪০ জন রুশ সেনাকে রীতিমতো ঘায়েল করে ছেড়েছে ইউক্রেনের সেই ছাগলটি। ছাগল হলে কী হবে, সে-ও তো ইউক্রেনেরই বাসিন্দা। ফলে মাতৃভূমির প্রতি ভালবাসা থাকাটা অস্বাভাবিক কিছু না। দেখতে নিপাট সাধাসিধে ছাগল। তবে সেই ছাগল যে এমন কাজ করতে পারে, তা বোধহয় দুঃস্বপ্নেও ভাবতে পারেনি পুতিন বাহিনী।
তা কী ঘটেছিল ঘটনাটা, খুলেই বলা যাক। জাপরেজিয়ার কিনস্কি রজডরি এলাকার একটি হাসপাতালের দখল নিয়ে সেখানে ঘাঁটি গেড়ে বসেছে রুশ সেনা। ইউক্রেন সেনার তরফে হামলার আশঙ্কা রুখতে গোটা হাসপাতালের চৌহদ্দি জুড়ে তারা পেতে রেখেছিল বুবি ট্র্যাপ। অর্থাৎ কিনা এমন ভাবে তার বিছিয়ে গ্রেনেড সাজিয়ে রেখেছিল তারা, যে কেউ সীমানা পেরোলেই সেসব ফাটতে শুরু করবে একসঙ্গে। যার জেরে ঘায়েল হবে শত্রুপক্ষ। আর নিজেদের পাতা সেই ফাঁদই এবার বুমেরাং হয়ে ফিরল রুশ সেনার কাছে।
আরও শুনুন: মৃত্যু হয়েছে মালকিনের, ২০টি পোষা বিড়াল খুবলে খেল মৃতদেহ
সে সাধাসিধে ছাগল। সে যুদ্ধও বোঝে না, শত্রু-মিত্রও চেনে না। আপনমনে ঘাস খেতে খেতে ঘুরে বেড়ায় এদিক থেকে ওদিকে। কাছের একটি খামার থেকে পালিয়ে ঘুরতে ঘুরতে সেই ছাগল সেদিন ঢুকে পড়ে হাসপাতালের চৌহদ্দিতে। কে জানে কার ধমক খেয়ে ভয় পেয়ে গেল সেই চারপেয়ে! আর অমনি লাফিয়ে ঝাঁপিয়ে একাকার কাণ্ড। আর তাতেই ঘটল বিপত্তি। তার পা পড়ে গেল বুবি ট্র্যাপের সেই তারে। অমনি বিকট শব্দে একের পর এক ফাটতে শুরু করল গ্রেনেড।
সে ছাগল অবশ্য ততক্ষণে পগারপার। কিন্তু যাওয়ার আগে সে ঘায়েল করে ওই হাসপাতালে ঘাঁটি গাড়া রুশ বাহিনীর অন্তত ৪০ জন সেনাকে। ইউক্রেন প্রশাসন সূত্রের খবর, ওই বিস্ফোরণে গুরুতর জখম হয়েছেন তাঁরা। কয়েক জনের অবস্থা আশঙ্কাজনকও।
এত শক্তিশালী দেশের সেনাদের এমন বিপর্যস্ত করে ছাড়বে সাদামাটা একটা ছাগল, তা বোধহয় ঘুনাক্ষরেও আঁচ করতে পারেনি পুতিনের বাহিনী। তবে এ ঘটনায় বেজায় খুশি ইউক্রেনবাসী। তাঁদের হয়ে যেভাবে রুশ সেনার ঘাঁটিতে অতর্কিতে হামলা চালিয়েছে অবোলা প্রাণীটি, তা কার্যত নজিরবিহীন বলেই মনে করছেন তাঁরা।