পাড়ায় বিয়ের অনুষ্ঠান। গোটা পাড়া সেখানে নিমন্ত্রিত। কিন্তু শর্ত একটাই, সেখানে যেতে হলে দিতে হবে নির্দিষ্ট অঙ্কের চাঁদা। সহজ করে বললে, বিয়ের যা খরচ তা ভাগ করে নিতে হবে নিমন্ত্রিত অতিথিদেরই। কোথায় রয়েছে এমন রেওয়াজ? আসুন শুনে নিই।
কথায় আছে, কারও পৌষমাস, তো কারও সর্বনাশ। আমাদের দেশে বিয়ের অনুষ্ঠানের সঙ্গে এই কথার বেশ যোগ রয়েছে। না না, পৌষমাসে বিয়ের কথা বলছি না। বলছি খরচের কথা। বিয়ের অনুষ্ঠানে নিমন্ত্রণ পেতে তো বেজায় ভালো লাগে, কিন্তু সেই অনুষ্ঠান করতে যিনি খরচ করছেন, তাঁর কথা ভেবে দেখুন তো! মূল্যবৃদ্ধির বাজারে লোক খাওয়ানো তো আর চাড্ডিখানি কথা নয়। তবে দেশে রয়েছে এমন এক উপজাতি, যাদের বিয়ের অনুষ্ঠানে একজনই সব খরচ করে না। যা খরচ হয় তা ভাগ করে নেন আমন্ত্রিত অতিথিরাই।
আরও শুনুন: ‘তুতো বোনদের ছেড়ে অন্য কাউকে খুঁজুন’, পাক ডেটিং অ্যাপের বিজ্ঞাপনে তাজ্জব নেটদুনিয়া
শুনতে অবাক লাগলেও সত্যি। কথা বলছি মধ্যপ্রদেশের ভিল উপজাতি সম্পর্কে। এই সমাজে এক অদ্ভুত রেওয়াজ চালু রয়েছে বিয়ের অনুষ্ঠানকে কেন্দ্র করে। ভিল সম্প্রদায়ের কেউ বিয়ে করলে, সেই অনুষ্ঠানের খরচ মেটান তাদের সমাজের অন্যান্য সদস্যরা। অর্থাৎ, যার বাড়িতে বিয়ে তিনি যেমন খরচ করবেন, সেই বিয়েতে নিমন্ত্রিত অতিথিরাও একইভাবে খরচ করবেন। এমনটা সকলের ক্ষেত্রেই প্রযোজ্য। মনে করা হয়, এই রেওয়াজ চালু হওয়ার নেপথ্যে রয়েছে নিজেদের মধ্যেকার সম্পর্ক আরও দৃঢ় করার উদ্দেশ্য। স্থানীয় ভাষায় সামগ্রিক ভাবে এই প্রথাকে বলা হয়, ‘নোতরা’। যে কোনও অনুষ্ঠানেই এই খরচ ভাগ করে নেওয়ার নিয়ম রয়েছে। তবে মূলত বিয়ের ক্ষেত্রেই এমনটা বেশি দেখা যায়। ঝাবুয়া, মন্দসাওর, রাতলাম, আলিরাজপুর সহ বিভিন্ন জেলায় এই প্রথার চল রয়েছে। যদিও ভাগ হয় মানেই যে সব বিয়েতে একই রকমের খরচ হবে তার কোনও মানে নেই। যে যার নিজের সামাজিক পরিচিতি অনুযায়ী খরচ করেন। কোনও বিয়েতে খরচ হয় ৫০ হাজার, তো কোনও বিয়েতে কয়েক লক্ষ। তবে যে টাকাই খরচ হোক, তা ভাগ হবে গোটা সম্প্রদায়ের মধ্যে। যদিও তাদের বিয়ের নিয়মকানুন বেশ আলাদা। একাধিক নিয়ম মানতে হয় বর-কনে উভয় পক্ষকেই। এমনকি নিমন্ত্রণ জানানোরও রয়েছে বিভিন্ন কায়দা। বিয়ের অনুষ্ঠানে নিমন্ত্রণ জানাতে হয় হলুদ চাল দিয়ে। আবার অন্য কোনও অনুষ্ঠানে নিমন্ত্রণ জানাতে গেলে দিতে হয় লাল রঙের চাল। আসলে ওই চাল দেখেই অতিথি বুঝতে পারেন, কেমন অনুষ্ঠান আর তার জন্য চাঁদার পরিমাণ কেমন হতে পারে। তবে একথা মানতেই হবে, এমন নিয়ম গোটা পৃথিবীর মধ্যে বিরল। স্রেফ খরচের ভার একজনের কাঁধ থেকে কমানোই নয়, সমাজে পারিবারিক পরিবেশ গঠনের ক্ষেত্রেও এই নিয়মের বেশ গুরুত্ব রয়েছে বলেই মনে করেন সমাজ তাত্ত্বিকরা।